সম্পাদকীয় ১...
ভায়া নাগপুর
বিপৎকালে তবে বুদ্ধিলাভও হয়! অন্তত ভারতীয় জনতা পার্টির ক্ষেত্রে তাহাই হইল। কয়েক দিনের মধ্যে একাধারে দুইটি নূতন ঘটনার সামনে পড়িল তাহারা: এক, জাতীয় কংগ্রেসে রাহুল গাঁধীর অভিষেক; দুই, মুম্বইয়ে বিজেপি-সভাপতি নিতিন গডকড়ীর ঘনিষ্ঠ শিবিরে ঝটিকা আয়কর অভিযান। সুতরাং, লালকৃষ্ণ আডবাণীর নেতৃত্বে দ্রুত সিদ্ধান্ত: গডকড়ীকে কোনও ভাবেই দলের শীর্ষপদে রাখা যাইবে না। গত শনিবারই রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের মোহন ভাগবত আডবাণীর সহিত দেখা করিয়া গডকড়ীকে আর এক বার সুযোগ দিবার জন্য চাপ দিলেও কাজ হইল না। দেশ জুড়িয়া যখন দুর্নীতিই প্রধান বিতর্ক-বিষয়, বিরুদ্ধ শিবিরে পরিচ্ছন্ন রেকর্ড লইয়া নবীন নেতৃত্ব হাজির, সেই প্রেক্ষিতে গডকড়ীকে সরানো ভিন্ন গতি ছিল না। দলের এক বড় অংশের এই মত পূর্বাবধিই ছিল, সাম্প্রতিক ধাক্কায় সিদ্ধান্তগ্রহণের কাজটি সহজ হইল। সিদ্ধান্ত সহজ ছিল না, বিজেপি-র এই মুহূর্তে কোনও সর্বজনসম্মত নেতা নাই, অটলবিহারী বাজপেয়ী ও লালকৃষ্ণ আডবাণী যে স্থান শূন্য করিতেছেন, তাহা পূর্ণ করিবার যোগ্য নেতা নাই। গডকড়ীর বদলে রাজনাথ সিংহের নেতৃপদে উঠিয়া আসিবার সিদ্ধান্ত দলের অভ্যন্তরের এই করুণ পরিস্থিতিই আবার চোখে আঙুল দিয়া দেখাইয়া দেয়।
উত্তরপ্রদেশের ঠাকুর নেতা রাজনাথ সিংহ যে অন্য দুই প্রধান প্রার্থীকে টপকাইলেন, তাহা কেবল বিজেপির নিকট সেই রাজ্যের তথা হিন্দি বলয়ের গুরুত্বের কারণেই নহে, দলের মধ্যে বিভিন্ন শিবিরের মতবৈষম্যের জন্যও বটে। অরুণ জেটলি ও সুষমা স্বরাজ, দুই জনেরই ব্যক্তিগত প্রভাব-বলয় বৃহৎ, তাঁহাদের কাহাকেও উঠাইয়া আনিলেই দলের বিরুদ্ধ গোষ্ঠীতে বিক্ষোভের আশঙ্কা প্রবল। তদুপরি, জেটলির ‘মাটি-সংযোগ’ কম, সুষমা স্বরাজের প্রতি সঙ্ঘ পরিবার সদয় নহে। আর নরেন্দ্র মোদী? তিনি জানেন, সঙ্ঘ-পরিবার কদাপি তাঁহার প্রতিকূল, আডবাণীও তাঁহা হইতে বিস্তর দূরবর্তী। নিজ রাজ্যে মোদীর প্রতাপ যতই অপ্রতিহত হউক, এন ডি এ’র শরিকদের নিকট তো বটেই, দলের একাংশের মতেও, কেন্দ্রীয় মুখ হিসাবে তাঁহার ইতিহাসই তাঁহার চরম শত্রু। এই প্রেক্ষিতে রাজনাথ সিংহ পরিবার-করুণা ও হিন্দু/হিন্দি বলয়-সংযোগ, দুই দিকেই সম্পন্ন, উপরন্তু প্রধানমন্ত্রিত্বের দৌড় মাথায় রাখিয়া সুষমা স্বরাজরাও তাঁহাকে পথ ছাড়িতে রাজি। আডবাণীর রাজনৈতিক বিবেচনার দক্ষতা এই বয়সেও অটুট।
কিন্তু এই সিদ্ধান্তের ফলে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের বিরুদ্ধে বিজেপি’র ‘জয়’ হইল ভাবিলে সরলীকরণ হইবে। গডকড়ী বিষয়ে পরিবারের চাপ সফল ভাবে উপেক্ষা করা গেলেও মনে রাখিতে হইবে, রাজনাথ সিংহের সহিত পরিবারের সম্পর্ক যথেষ্ট মধুর। তিনি সঙ্ঘের অনুগত ও বিশ্বস্ত। গভীরতর সত্য ইহাই যে, এই জয়-পরাজয়ের বিষয়টিও স্পষ্টতই অপ্রাসঙ্গিক হইয়া পড়িতেছে। বিজেপি-র নিকট সঙ্ঘ-পরিবারের সমর্থনের গুরুত্ব ক্রমশই কমিতেছে। ছত্তীসগঢ়ের মতো যে সব অঞ্চলে বিজেপি রাজনৈতিক ভাবে সফল, পরিবারের উপর নির্ভর না করিয়াই সেই সাফল্য অর্জিত। নরেন্দ্র মোদী তো গুজরাতের নির্বাচনে প্রত্যয়ের সঙ্গে প্রমাণ করিয়াছেন, পরিবার অনুকূল না হইলেও, এমনকী প্রতিকূল হইলেও, সাফল্য সম্ভব। বাস্তবিক, প্রধানমন্ত্রিত্বের দুই প্রধান দাবিদার সুষমা স্বরাজ ও নরেন্দ্র মোদী, কাহারও ক্ষমতা-অর্জনই সঙ্ঘ-পরিবারের পক্ষে সুখবহ হইবে না। বিজেপি-র পরবর্তী নেতৃত্ব উঠিয়া আসিবার সঙ্গে সঙ্ঘ-পরিবারের উপর নির্ভরতা কমিবার মধ্যে প্রায় সরাসরি সম্পর্কের এই বৃহত্তর ছবিটি মাথায় রাখিলে বিজেপি-আরএসএস সম্পর্কের বিবর্তনে দলীয় সভাপতি পদের এই পালাবদলের গুরুত্ব নেহাতই গৌণ বলা চলে। গুরুত্ব যেটুকু রহিয়াছে, তাহা ২০১৪’য় পরীক্ষিত হইতে চলিয়াছে। নরেন্দ্র মোদী যদি সত্যই সেই পরীক্ষায় বিজেপির ‘সফল নায়ক’ হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করিতে পারেন, তবে নাগপুর অন্তত খুশি হইবে না। কিন্তু তাহা না হইলেও দীর্ঘমেয়াদি প্রশ্নটি অনিবার্য এবং দুর্মর আর কত দিন ভারতীয় রাজনীতির ‘দ্বিতীয়’ জাতীয় দলটি সঙ্ঘ পরিবারের আঁচলে বাঁধা থাকিবে?


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.