সীমান্তের এ পারে পণ্য খালাস নিয়ে ওপারের কাস্টমস ক্লিয়ারিং ফরওয়ার্ডিং এজেন্টদের আপত্তির জেরে উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাটের ঘোজাডাঙা সীমান্তে গত পাঁচ দিন ধরে বহির্বাণিজ্য পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে।
ঘোজাডাঙা কাস্টমস সুপারিন্টেন্ডেন্ট সাধন কুমার পাল বলেন, “এই সীমান্ত দিয়ে দিনে প্রায় ২০০-২৫০ ট্রাক পণ্য আমদানি-রফতানি করে। বাণিজ্য বন্ধ হওয়ায় এই ক’দিনেই আমদানি শুল্কের ক্ষেত্রে প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা এবং রফতানির ক্ষেত্রে প্রায় ৪৫ লক্ষ ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ২৪ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা) ক্ষতি হয়েছে। এমন চলতে থাকলে দেশের অর্থনীতিতে বড় ধাক্কা লাগবে। পুরো বিষয়টিই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।” |
দেশের মধ্যে পেট্রাপোল ছাড়াও অন্যতম স্থলবন্দর হিসাবে পরিচিত বসিরহাটের ঘোজাডাঙা সীমান্ত। পেট্রাপোলের ওপারে রয়েছে বাংলাদেশের বেনাপোল আর ঘোজাডাঙার ওপারে সাতক্ষীরা জেলার ভোমরা। দুই স্থলবন্দর দিয়ে নিত্য প্রচুর পণ্য আমদানি-রফতানি হয়। কিন্তু গত কয়েক দিন ধরে ঘোজাডাঙা সীমান্তে বন্ধ রয়েছে বহির্বাণিজ্য। দীর্ঘদিন ধরেই ঘোজাডাঙা দিয়ে বিশাল বিশাল ট্রাকে পণ্য আমদানি রফতানি হয়। এ ক্ষেত্রে একটি ব্যবস্থা হিসাবে যে সব ব্যবসায়ী ১০ চাকা বা তার বেশি চাকার ট্রাকে মালপত্র নিয়ে আসেন সে সব ট্রাক সীমান্তের এ পারে খালাস করা হয়। পরে তা ছোট লরি বা ট্রাকে করে পণ্য ও পারে নিয়ে যাওয়া হয়। আর যে সব ব্যবসায়ী ১০ চাকার বদলে ছোট ট্রাকে পণ্য নিয়ে আসেন সে সব ট্রাক সরাসরি ওপারে গিয়ে মাল খালাস করে এবং ফের পণ্যবোঝাই করে এ পারে চলে আসে। বরাবর এই প্রথাই চলে আসছে।
কিন্তু এ বার এই ব্যবস্থা নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন ভোমরা কাস্টমস ক্লিয়ারিং ফরওয়ার্ডিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন। অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নেছারউদ্দিন আহমেদ গত ২ জানুয়ারি লিখিতভাবে এ পারের সি অ্যান্ড এফ (ই)-সহ সাতক্ষীরা এবং কলকাতা চেম্বার অফ কর্মাস-সহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দফতরে জানিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, “দেশের অন্যান্য স্থল বন্দরের মতো ভোমরায় ভারত থেকে বড় (দশ চাকার) ট্রাক পণ্য নিয়ে ঢুকছে না। ওপারে ঘোজাডাঙায় ট্রাকগুলি আসার পরে সেখানেই পণ্য খালাস করে ফের ছোট লরিতে করে এ পারে ভোমরায় পাঠানো হচ্ছে। এতে পচনশীল পণ্যের গুণগত মান ঠিক না থাকার কারণে বড় রকমের ক্ষতি হচ্ছে। একটি পণ্য একাধিক গাড়িতে ওঠানামা করানোর ফলে তার ওজনে তারতম্য ঘটছে। নষ্ট হচ্ছে পণ্যের প্যাকেজিং। ফলে বাজারে বিক্রির ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই ব্যবসায়ীরা উৎসাহ হারাচ্ছেন। তাঁদের আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। তিনি দাবি জানান, অন্যান্য স্থল বন্দরের মতো সমস্ত পণ্যবাহী ট্রাক সরাসরি পাঠাতে হবে ভোমরায়। না হলে তাঁরা এপারে পণ্য খালাস বন্ধ করে দেবেন। যার পরিণতিতে বন্ধ হবে বহির্বাণিজ্য।
এই ঘটনার পরে বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য ঘোজাডাঙা কাস্টমস ক্লিয়ারিং ফরওয়ার্ডিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের তরফে অনুরোধ করা হলে পণ্য আমদানি-রফতানি চালু ছিল। কিন্তু গত শনিবার থেকে বাংলাদেশের তরফে মাল ওঠানো-নামানো পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে এ পার থেকে পণ্যবাহী কোনও ট্রাকই ওপারে যাচ্ছে না। এই অবস্থায় সীমান্তে পণ্যবাহী ট্রাক আসাও বন্ধ। |
ঘোজাডাঙা কাস্টমস ক্লিয়ারিং ফরওয়ার্ডিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক পরিমল রায় বলেন, “ভোমরার অ্যাসোসিয়েশন চিঠি দিয়ে তাদের অসুবিধা জানানোর পরে আমরা তাদের অনুরোধ করে বাণিজ্যের সময়সীমা কিছুদিন বাড়াই। সমস্যার কথা জেলাশাসক-সহ সংশ্লিষ্ট সব দফতরকে জানানো হয়েছে।”
জেলাশাসক সঞ্জয় বনশল বলেন, “বাংলাদেশের দিক থেকে একটা সমস্যা হয়েছে। এ ব্যাপারে শুল্ক দফতরের সঙ্গে আলোচনাও হয়েছে। আশা করছি শীঘ্রই সমস্যা মিটে যাবে।”
এ দিকে বাণিজ্য বন্ধ থাকায় মাল ওঠানো নামানোর কাজে থাকা শ্রমিকেরা কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। শ্রমিকদের তরফে স্বদেশ মণ্ডল, মৃণাল সর্দার বলেন, “মাল খালাস বন্ধ হওয়ায় প্রায় চার হাজার শ্রমিক কাজ হারানোর আশঙ্কা করছেন।” শুধু মাল খালাসের শ্রমিকেরাই নন, সীমান্ত বাণিজ্যকে কেন্দ্র করে এলাকায় হোটেল, খাবারের দোকান ইত্যাদি ব্যবসায় জড়িত লোকজনও আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
|