আয় (মাসে)
৫০,০০০ |
টাকা রাখেন (বছরে) |
খরচ (বছরে) |
• পিএফ:
১,০০,০০০
•
পিপিএফ:
১,০০,০০০
•
জীবন বিমা
৮৫,০০০ (পেনশন প্রকল্প) |
• সংসার চালাতে ১,৯২,০০০
•
মেডিক্লেম
৫,৫০০
•
মেয়েদের পড়াশোনা ৭৫,০০০
(এর মধ্যে ৩০,০০০ অফিস দেয়) |
সম্পদ |
• পিএফ
১২,০০,০০০
• পিপিএফ ৮,০০,০০০
• এনএসসি
৫০,০০০
•
জমি আছে কো-অপারেটিভে |
|
অঞ্জনের বয়স ৪৮। এখানে দাঁড়িয়ে নতুন করে কোনও আর্থিক পরিকল্পনা করতে হলে কিন্তু খুব সতর্ক হয়ে এগোতে হবে। কারণ এ ক্ষেত্রে সামান্য কোনও ভুল অনিশ্চিত করে দিতে পারে ভবিষ্যৎ জীবনের সুরক্ষা। সে জন্য প্রত্যেককে আমার পরামর্শ, চাকরি জীবনে পা রেখেই (পারলে তার আগে থেকে) অল্প অল্প করে সঞ্চয় শুরু করে দিন। বিশেষত, যদি কোনও লক্ষ্য স্থির করে লগ্নি করে যেতে পারেন, তা হলে দেখবেন সময় এলে সুন্দর ভাবে আপনার পরিকল্পনা বাস্তব রূপ পাচ্ছে। তখন কোনও সমস্যার মুখেও পড়তে হবে না আপনাকে।
অঞ্জন কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মী। ফলে ৬০ বছর বয়সে অবসর নেবেন। অর্থাৎ তাঁর হাতে আর ১২ বছর সময় আছে লক্ষ্য পূরণের জন্য। আসুন দেখে নিই এই অবস্থায় কী ধরনের পরিকল্পনা করতে পারেন তিনি। সাংসারিক দায়-দায়িত্ব পালন করে তাঁর পক্ষে আদৌ লক্ষ্য পূরণ করা সম্ভব হবে কি না, সেটাও বিচার করতে হবে।
মেয়েদের পড়াশোনা
বড় মেয়ে নবম শ্রেণিতে পড়ে। কলেজের আগে হাতে রয়েছে ৩ বছর। কোনও প্রযুক্তিগত শিক্ষায় ভর্তি হলে ৩ বছর পর খরচ পড়বে প্রায় ৬ লক্ষ টাকা (৬% মূল্যবৃদ্ধি ধরে)। ছোট মেয়ে স্নাতক স্তরে পড়বে প্রায় ১০ বছর পর। তার ক্ষেত্রে এই খরচ দাঁড়াবে প্রায় ৯ লক্ষ টাকায়।
অঞ্জনের বেশির ভাগ লগ্নিই দীর্ঘমেয়াদি। তাই সেই লগ্নির টাকায় হাত না-দিয়ে বড় মেয়ের জন্য তিন বছরে কতটা অর্থ জোগাড় করা যায়, তা-ই দেখব। অঞ্জনের হাতে মাসে গড়ে প্রায় ৫,৮০০ টাকা নগদ থাকে। সেই টাকা যদি এসআইপি-তে রাখা যায়, তা হলে কী দাঁড়ায় দেখি।
লগ্নি: ৫,৮০০
মেয়াদ: ৩ বছর
সম্ভাব্য গড় রিটার্ন: ১২%
মেয়াদ শেষে পাবেন: ২.৪৮ লক্ষ
বাকি টাকা পিপিএফ থেকে তুলে এই খাতে লাগানো যায়।
এ বার আসি ছোট মেয়ের প্রসঙ্গে। এখন দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। ১০ বছর পর সে কলেজে ভর্তি হবে। এর মধ্যে প্রথম তিন বছর বড় মেয়ের জন্য টাকা রাখার কথা বলেছি। অঞ্জন বাকি ৭ বছর সময় পাবেন ছোট মেয়ের পড়ার জন্য লগ্নি করতে। একই অর্থ ওই ৭ বছর এসআইপি-তে রেখে দিলে কী হবে?
লগ্নি: ৫,৮০০
মেয়াদ: ৭ বছর
সম্ভাব্য গড় রিটার্ন: ১২%
মেয়াদ শেষে পাবেন: ৭.৫৭ লক্ষ
এখনও প্রায় দেড় লক্ষ টাকা কম পড়ছে। আমার পরামর্শ, এর পর বেতন বাড়লে এসআইপি-র পরিমাণও বাড়ানো যেতে পারে।
ফ্ল্যাট তৈরি
কো-অপারেটিভে নিজের জমি রয়েছে অঞ্জনের। সেখানে তিনি ফ্ল্যাট বা বাড়ি তৈরি করতে গেলে আনুমানিক খরচ পড়বে ২০ লক্ষ টাকা। এর মধ্যে ৪ লক্ষ তাঁকে ডাউনপেমেন্ট করতে হবে। বাকি রইল ১৬ লক্ষ। অঞ্জন ব্যাঙ্ক থেকে গৃহঋণ নিতে চাইলে, নিয়ম অনুযায়ী তাঁর চাকরি জীবনের মধ্যেই (১২ বছর) সেই ঋণ শোধ করতে হবে। সে ক্ষেত্রে এখনকার হিসাবে তাঁর মাসিক কিস্তি দাঁড়াবে ১৮ হাজার টাকারও বেশি।
কিন্তু এই মুহূর্তে তাঁর হাতে ডাউনপেমেন্ট করার মতো টাকা নেই। পাশাপাশি, সংসার চালিয়ে এত টাকা মাসিক কিস্তি দেওয়াও তাঁর পক্ষে সম্ভব নয় কোনও ভাবেই। তাই আমার পরামর্শ, আপাতত বাড়ি বা ফ্ল্যাট তৈরির কথা না-ভাবাই ভাল।
অবসরের রোজগার
আমার ধারণা বর্তমান হিসাব অনুযায়ী, অবসর জীবনে অঞ্জনের মোটামুটি মাসে ২৫,০০০ টাকা লাগবে। ৬% মূল্যবৃদ্ধি ধরলে সেই অঙ্কই ১২ বছর পরে হবে ৫০,০০০ টাকা। এই অর্থ (৮% সুদের ঝুঁকিহীন প্রকল্পে রেখে) প্রতি মাসে পেতে তাঁর মোট লগ্নি হতে হবে প্রায় ৭৫ লক্ষ টাকা। তবে একটা সুবিধা যে, তাঁর বেশিরভাগ লগ্নি অবসর জীবনের দিকে লক্ষ্য রেখেই করা।
পিএফ: এই খাতে এখনই ১২ লক্ষ টাকা জমেছে। ১২ বছরে আরও ১২ লক্ষ টাকা জমাতে পারেন। যাতে শেষ পর্যন্ত মোট রিটার্ন পেতে পারেন
৫০ লক্ষ টাকা।
পিপিএফ: এখানে জমেছে ৮ লক্ষ। কিন্তু তাঁকে যদি বড় মেয়ের জন্য ৩.৫ লক্ষ তুলতে হয়, তা হলে হাতে থাকবে ৪.৫ লক্ষ টাকা। মেয়াদ শেষে আপনি সেই টাকা বেশি সময়ের জন্য (ধরে নিচ্ছি ৫ বছর বা তার বেশি মেয়াদ) স্থায়ী আমানতে রেখে দিতে পারেন। সেই আমানতের মেয়াদ শেষ হলে বরং চাইলে বাড়ি তৈরির কাজে হাত দিতে পারেন। যে- টাকাটা কম পড়বে, গৃহঋণ নিয়ে সেই অর্থ জোগাড় করা যেতে পারে।
বিমা: অঞ্জনের দু’টি জীবন বিমাই পেনশন প্রকল্প। মেয়াদ শেষে যা টাকা পাবেন, তার এক তৃতীয়াংশ কোনও মেয়াদি আমানত প্রকল্পে জমা রাখুন। যাতে প্রতি ত্রৈমাসিকে সুদ তোলার ব্যবস্থা থাকবে। তার বাইরে যা থাকবে, তা দিয়ে মাসে প্রায় ৮,০০০ টাকা আয় হতে পারে।
এনএসসি: এখানে লগ্নির টাকা মেয়াদ শেষে কোনও বন্ডে রাখতে পারেন। যেখানে ঝুঁকি তুলনায় কম, আবার দরকারে টাকা তোলাও যাবে।
স্বাস্থ্য বিমা
অঞ্জনের স্বাস্থ্য বিমায় লগ্নি যথেষ্ট ভাল। তবে আগামী দিনে চিকিৎসার খরচ আরও বাড়বে। তাই ভবিষ্যতে সুযোগ পেলে এই খাতে আরও বেশি টাকা রাখা উচিত। যাতে বয়স বাড়লে নিশ্চিন্ত থাকা যায়। |