|
|
|
|
|
|
লগ্নি করার আগে জানুন নিজের চাহিদা |
|
কী ভাবে এগোবেন, কী সমস্যা হতে পারে
সঞ্চয়ের নানা বিষয় নিয়ে সুপর্ণ পাঠকের সঙ্গে
আলাপচারিতায় এস বি আই লাইফের শীর্ষ কর্তা অতনু সেন |
|
• সঞ্চয়ের বাজারে নানা ধরনের প্রকল্প রয়েছে সাধারণ মানুষের সামনে। কিন্তু সেই সব প্রকল্প নিয়ে খুব স্পষ্ট ধারণা নেই অনেকেরই। যেমন ইউনিট লিঙ্কড পলিসি।
ঠিকই বলেছেন। আজকের সঞ্চয়ের বাজারে ক্রেতাদের দিক থেকে দু’টি সমস্যা রয়েছে। এক হল অজ্ঞানতা। আর, দুই হল সঞ্চয় তহবিল গড়ে তোলার জন্য সঠিক উপদেষ্টা
খুঁজে পাওয়া।
আজকের বিমা এবং সঞ্চয়ের বড় সমস্যা হয়ে উঠেছে ‘মিস সেলিং’। আপনি হয়তো একটা বিশেষ চাহিদার জন্য বিমা করতে চাইছেন। কিন্তু এজেন্ট এমন প্রকল্প আপনাকে বিক্রি করলেন, যাতে আপনার সেই চাহিদা মিটবে না। এই সমস্যাটা আমরা জানি এবং এর সমাধানেরও চেষ্টা চলছে।
বিমা নিয়ন্ত্রক সংস্থাও এটা ঠেকানোর জন্য নানা বিধিনিষেধ তৈরি করছে। যদিও এতে আবার অন্য সমস্যা দেখা দিচ্ছে। বিমা সংস্থাগুলির স্বাধীনতা খর্ব হচ্ছে। তবে এই ধরনের সমস্যার মোকাবিলা করতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা সব ক্ষেত্রেই বিধিনিষেধ তৈরি করে। এক দিকে ‘মিস সেলিং’, অন্য দিকে তা ঠেকাতে আরও কঠোর আইন - এটা সব সময়েই শাঁখের করাতের মতো কাটে।
আমি সম্প্রতি সি আই আই-এর একটি আলোচনাচক্রে গিয়েছিলাম। সেখানে এক বক্তা সঞ্চয়ের চাহিদা নিয়ে স্লাইড দেখাচ্ছিলেন। তাতে দেখা যাচ্ছে, গোটা দেশে মানুষ এখন সন্তানের শিক্ষার জন্য সঞ্চয়কে অগ্রাধিকার দিতে চাইছেন। আমরা কি এই কথাটা মাথায় রেখে প্রকল্প তৈরি করছি? অথবা, এই চাহিদার কথা মাথায় রেখেই মানুষের সামনে সঞ্চয় প্রকল্পগুলি হাজির করছি? আমার
উত্তর হচ্ছে, না।
• সঞ্চয় করতে হলে আমাদের কী কী ‘জানা’ উচিত এবং কী কী একেবারেই করা উচিত নয়।
দেখুন, সঞ্চয়ের ক্ষেত্রে এই ভাবে কোনও সাধারণ নিয়ম তৈরি করা সম্ভব নয়। বিভিন্ন বয়সে বিভিন্ন রকম চাহিদা। আবার একই বয়সের দু’টি মানুষের মধ্যেও চাহিদার পার্থক্য থাকবে আর্থ-সামাজিক প্রভেদের কারণেই।
একজন তরুণের যতটা ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা থাকবে, আর একজন, যিনি ততটা তরুণ নন, তাঁর তা থাকবে না। ধরুন একজনের বয়স ৪৫, তাঁর চিন্তা থাকবে অবসরের সঞ্চয় নিয়ে। আর যিনি অপেক্ষাকৃত তরুণ, বেশি রিটার্নের খোঁজে স্বাভাবিক ভাবেই তিনি ‘ইউনিট লিঙ্কড’ প্রকল্পের দিকে ঝুঁকবেন ঝুঁকির চিন্তা কম করেই। আর বিমা সংস্থার একটা বড় কাজ থাকে এইখানে। একইসঙ্গে একজন উপদেষ্টার ভূমিকা তৈরি হয়। যিনি বিমা করতে চাইছেন, তাঁর ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা বুঝে তাঁকে সঠিক বিনিয়োগের রাস্তা দেখানোর একটা দায় নিতেই হয়।
তাঁর চাহিদা বুঝে কী কী প্রকল্পে তিনি টাকা ঢালতে পারেন এবং কেন, সেটা বুঝিয়ে বলে তাঁকে নিজের মতো পছন্দ করতে দিতে হবে। তবে পছন্দের আগে, কেন কোন প্রকল্প তিনি বাছবেন, সেটা ‘জানা’র জায়গায় নিয়ে যাওয়ার দায় কিন্তু ওই উপদেষ্টারই।
আপনি যে ওই ‘জানা’র কথাটা বললেন। ওটা জরুরি। ওটা না-থাকলে সঞ্চয় প্রকল্পে টাকা ঢেলে ঠকে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়।
• উপদেষ্টা নিয়ে সমস্যার পরিপ্রেক্ষিতে এ বার যে-প্রশ্নটা আসে সেটা হল, কী ভাবে জানব এই উপদেষ্টা আমাকে সঠিক দিশা দেবেন? ধরুন একজন ক্রেতা একটি ব্যাঙ্কের কাছে কোনও বিমা পলিসি কিনতে গেলেন। ব্যাঙ্কগুলিও তো এখন বিভিন্ন বিমা সংস্থার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হচ্ছে পলিসি বিক্রি করার জন্য। এ বার ব্যাঙ্ক তো সেই বিমাই বিক্রি করতে চাইবে, যাতে তার লাভ সব থেকে বেশি।
দেখুন এখানে বিশ্বাসের ব্যাপারটাও কাজ করে। একটা ব্যাঙ্কের নিজস্ব ব্র্যান্ড আছে। প্রাতিষ্ঠানিক ভাবেই সে চাইবে তার ব্র্যান্ড যাতে কোনও ভাবেই ক্ষুণ্ণ না-হয়, সে ভাবে এগোতে। ফলে এখানে স্বচ্ছতার অভাব থাকলে, তা ব্যতিক্রম হিসেবেই ধরতে হবে।
দ্বিতীয় দিকটা হচ্ছে, কাকে পছন্দ করবেন। এখানে অবশ্যই আপনাকে জোর দিতে হবে উপদেষ্টার অভিজ্ঞতার উপরে। তার সঙ্গে দেখতে হবে তাঁর শিক্ষাগত এবং প্রশিক্ষণগত যোগ্যতা। এর পরে আসছে বিশ্বাস। আপনার উপদেষ্টা যে-সংস্থার সঙ্গে জড়িত, সেটিকে আপনি পছন্দ করছেন অন্য আর একজনকে ছেড়ে। এ বার আপনাকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে, যার ভিত্তিতে আপনি এই বিশ্বাসের জায়গায় পৌঁছেছেন, তার ভিতটা কতটা সুদৃঢ়। বিশ্বাসের জায়গাটা এই প্রক্রিয়ায় প্রাথমিক পদক্ষেপ। আর্থিক বাজারের এটাই দস্তুর। ‘মিস সেলিং’-এর সমস্যা এই কারণেই তৈরি হয়। এবং এই সমস্যা কিন্তু বিশ্ব জুড়েই রয়েছে।
• ইউনিট লিঙ্কড প্রকল্পগুলি (ইউলিপ) নিয়ে একটা সমস্যা বারে বারেই হয়েছে। সংস্থাগুলির মার্জিন সঞ্চয়কারীর লাভ কমিয়ে দিচ্ছে। অন্য দিকে আবার রয়েছে লগ্নিকারীর লাভের দিকটাও।
কম বয়সে যিনি
এই ধরনের পলিসি কিনবেন, তিনি লাভ করবেন দীর্ঘকালীন ভিত্তিতে বিনিয়োগ করে।
দু’টি দিকই ঠিক। আসলে শেয়ারে লাভ দীর্ঘকালীন বিনিয়োগ থেকেই আসে। এটা কিন্তু বুঝতে হবে। সঞ্চয়কারী কী করে বুঝবেন? এখানে আবার কিন্তু শিল্পের দায়ের ব্যাপারটা উঠে আসে। আমাদের সঞ্চয়কারীকে বোঝাতে হবে।
পাশাপাশি, পলিসি সারেন্ডার করলে অনেক টাকা কাটা যায়। বিশেষ করে এই ধরনের পলিসিতে। যখন এই পলিসি বিক্রি করা হচ্ছে, তখন হয়ত এজেন্ট লাভের উপর জোর দিচ্ছেন। কিন্তু ঝুঁকি আর খরচের দিকটা ঠিক মতো ক্রেতাকে বোঝাচ্ছেন না। এর ফলে গোটা শিল্পেরই বদনাম হচ্ছে।
আবার কিন্তু আমরা ফিরে যাচ্ছি সেই নিজের চাহিদা বোঝার জায়গায়। সঞ্চয়ের ক্ষেত্রে কতটা ঝুঁকি নিতে পারি, সেটা বোঝার জায়গায়।
• ইউলিপের ক্ষেত্রে বিনিয়োগের জায়গা বাছার একটা সুযোগ দেওয়া হয়। শেয়ারে কতটা, বন্ডে কতটা।
বাজার খারাপ হলে, যিনি ব্যাপারটা জানেন, তিনি একটা সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। কিন্তু আমাদের সঞ্চয়ের বাজার এখনও ততটা ম্যাচিওরড হয়নি। বিশেষ করে ক্রেতারা এখনও সেই জায়গায় পৌঁছননি, যেখানে দাঁড়িয়ে সময় মতো এই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। এই রকম প্রকল্প কেন আসছে না, বিনিয়োগের বাজার খারাপ
হলে যেটাকে বিমা সংস্থার
সক্রিয় হস্তক্ষেপে সরিয়ে দেওয়া যাবে তুলনামূলক নিরাপদ
লগ্নির জায়গায়? ক্রেতার স্বার্থ
রক্ষা হবে তাতে।
এটা ঠিকই। আমাদের এমন কোনও প্রকল্প নেই। তবে তেমন যদি হয়, তা হলেও তো সঞ্চয়কারীকে জানতে হবে যে, এই সুযোগ তাঁর কাছে আছে। তাঁকে বোঝাতে হবে। এই জায়গাটা এখনও সমস্যার।
এই সাজেশনটা খুবই ভাল। আমাদের শিল্পে এটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু সেই রকম ভাবে নয়।
• আপনি লগ্নির ব্যাপারে আমাদের কী পরামর্শ দেবেন?
প্রথমেই দেখতে হবে চাহিদার চরিত্র। লগ্নিটা কি ঝুঁকি এড়িয়ে করতে হবে? দেখতে হবে লগ্নিকারীর সামাজিক অবস্থান ও সামাজিক চাহিদা। যেমন, তিনি সংসার শুরু করতে চলেছেন কি না। আসলে আগামী দিনগুলোতে বিনিয়োগকারীর কী কী চাহিদা তৈরি হতে পারে, তার একটা নির্দিষ্ট তালিকা থাকা চাই।
কার কাছ থেকে এই চাহিদা মেটানোর পরামর্শ নেব? আয় বেশি হবে এই পরামর্শের ভিত্তিতে বিনিয়োগ করা উচিত নয়। যাতে রিটার্ন বেশি, তাতে ঝুঁকিও বেশি হতে পারে। ফলে সংস্থাটি কতটা ক্রেতা-বান্ধব, এই তথ্য জানা জরুরি।
সঞ্চয় ভাঙা জরুরি হয়ে পড়ে এমন সব প্রয়োজনে, যা আগে থেকে কিছুতেই আঁচ করা যায় না। তাই দরকার হলেই ভাঙানো যায়, এমন সঞ্চয় থাকাও জরুরি।
বাজার ঘুরে দেখতে হবে, একই ধরনের সঞ্চয় প্রকল্পে অন্য কেউ কম খরচে বেশি লাভ দিচ্ছে কি না। শেষে বলা দরকার, যিনি যাই পরামর্শ দিন, তিনি যতই বিশ্বাসযোগ্য হোন, সেটা বাজারে একবার যাচাই করে দেখা জরুরি। এতে ঠকার সম্ভাবনা কমবে। |
|
|
|
|
|