গ্রামের বাসিন্দাদের চলাচলের রাস্তার মাঝে দেওয়াল তুলে আটকে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল এলাকার একটি চা বাগান কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। তা নিয়ে হাই কোর্টে জনস্বার্থে একটি মামলাও করেন বাসিন্দাদের একাংশ। শিলিগুড়ির মাটিগাড়ার পাথরঘাটা গ্রাম পঞ্চায়েতের ঘটনা। এলাকার ঝিঙাবস্তি, ৮ নম্বর বস্তির বাসিন্দাদের এ কারণে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বলে অভিযোগ। আদালত থেকে জেলাপ্রশাসনকে রাস্তার বাধা সরিয়ে চলাচলের ব্যবস্থা করার নির্দেশ দিলেও তা এখনও কার্যকর না-হওয়ায় আদালত অবমাননার অভিযোগ উঠেছে খোদ প্রশসানের বিরুদ্ধে। কেন এখনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি তা জানাতে জেলাশাসক, জেলা এবং ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিককে শোকজ করেছে উচ্চ আদালত।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এলাকার নিশ্চিন্তপুর বাগান কর্তৃপক্ষ দাবি করেছেন গ্রামবাসীরা যে অংশটি রাস্তা বলছেন সেটি চা বাগানের জমির মধ্যে রয়েছে। শোকজের চিঠি প্রশাসনের কাছে পৌঁছয়নি বলে জেলাপ্রশাসনের কর্তারা দাবি করেছেন। দার্জিলিঙের জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন বলেন, ‘‘আদালত কয়েক মাস আগে একটি নির্দেশ দিয়েছিল। সেই মতো ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছিল। পরবর্তী নির্দেশ এখনও হাতে আসেনি। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।” জেলা ভূমি এবং ভূমি সংস্কার আধিকারিক গোপাল লামা জানিয়েছেন, আদালতের সিদ্ধান্ত মেনেই ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। খতিয়ে দেখা গিয়েছে বাসিন্দারা যাতায়াত করলেও ওই অংশ চা বাগানের মধ্যে পড়ে। সে কারণে বিষয়টি বিবেচনা করতে বাগান কর্তৃপক্ষ হাইকোর্টে আবেদন করেন। তাই তখন কিছু করা সম্ভব হয়নি।
বাসিন্দাদের পক্ষের আইনজীবী সুনীল সরকার জানিয়েছেন, প্রশাসনের তরফে ঠিক কথা বলা হচ্ছে না। তিনি বলেন, “ওই আবেদনের পরে আদালত রায়টি সামান্য পরিবর্তন করে জানিয়েছিল বাসিন্দাদের ব্যবহারের রাস্তাটি খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে। পাশাপাশি বাগানের সম্পত্তি যাতে কোনও ক্ষয়ক্ষতি না হয় তা দেখতে।” অথচ প্রশাসনের তরফে কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ায় এ মাসের শুরুতে আদালত অবমাননার মামলা করা হয়। গত ১৪ জানুয়ারি আদালতের তরফে জেলাশাসক এবং জেলা এবং ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিককে কী কারণে তাঁরা এখনও ব্যবস্থা নেননি সেই কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে। বাগান কর্তৃপক্ষের হয়ে তাঁদের আইনজীবী পিন্টু ঘোষ বলেন, “সে রাস্তা আটকানোয় অসুবিধার কথা বলা হচ্ছে তা একটি ফাঁকা জমিতে গিয়ে শেষ হয়েছে। চা বাগানের জমির মধ্যে দিয়ে রাস্তা করে কয়েকজন ব্যক্তি নিজেদের স্বার্থে ওই সব জায়গায় যাতায়াতের বন্দোবস্ত করতে চাইছেন। আগে ওই রাস্তা ছিল না।” তা ছাড়া পিন্টুবাবুর দাবি, ৮ নম্বর বস্তিতে অন্য রাস্তা দিয়েই যাতায়াত করা যায়।
এলাকার বাসিন্দাদের তরফে মামলাকারী খগেশ্বর রায়, রবীন্দ্রনাথ রায়রা জানান, দীর্ঘদিন ধরেই বাসিন্দারা রাস্তাটি ব্যবহার করছেন। রাস্তার যেখানে দেওয়াল দেওয়া হয়েছে তার একদিকে ৮ নম্বর বস্তি। সেখানে বাচ্চাদের স্কুল রয়েছে। অন্য দিকে ঝিঙাবস্তি। এই দিকে নিমাইজোতে পোস্ট অফিস, রেশান দোকান, বাজারহাট, হাসপাতাল সবই। দেওয়ালের জন্য সেখানকার কচিকাঁচাদের শুধুমাত্র স্কুলে যেতে সমস্যা হচ্ছে। আট নম্বর বস্তির সমস্যাটাই বেশি। তাদের অনেকটা ঘুরে নির্মাইজোতে আসতে হচ্ছে। ভাইভাই একতা রাস্তা বাঁচাও কমিটি গড়ে তাঁরা এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন। |