গান বেঁধে গ্রাম্যপথে গাছ-বাউল
শিশু ভাই বোনদের জানাই সময় মতো পাঠশালাতে যাওয়া চাই—গাঁয়ের পথে পা রাখতে কানে ভেসে আসে গানের কলি। দোতারা নিয়ে ছোটখাটো চেহারার বাউল নেচে গাইছেন। কখনও গান ধরছেন—ওরে গাছের মতো দরদি বন্ধু আর দুনিয়াতে নাই। বাউলের গান শুনতে শিশুদের পাশাপাশি বৃদ্ধরাও ভিড় করেন। বায়না মেটাতে চটজলদি নতুন গানও বাঁধেন ময়নাগুড়ির কালীরহাট গ্রামের সিদ্ধগোপাল দাস বাউল। কে বলবে প্রথাগত শিক্ষার সুযোগ হয়নি তাঁর! গান শেষ হলে শিশুদের কাছে জানতে চান ‘কি বুঝলি। কেন গাছ লাগানো দরকার!’ শিক্ষকের মতো জানান, গাছ অক্সিজেন দেয়। সেটা গ্রহণ করে আমরা বেঁচে থাকি। গাছ না থাকলে আমরা শেষ হয়ে যাব। বাউলের কথা শুনে হাতে তালি দিয়ে নেচে ওঠে কচিকাঁচারা। মাথা দুলিয়ে জানায়, ‘বুঝেছি দাদু। আরও একটি গান শোনাও।’ বাউল ফের সুর ভাজেন। গ্রামের পথে ঘুরে প্রকৃতির গান শুনিয়ে এ ভাবে মনোরঞ্জনের সুযোগে সচেতনতা বাড়ানোর কাজ করে চলেছেন সিদ্ধগোপালবাবু। কোথায় জানলেন গাছের উপকারিতার কথা! স্কুলে পড়েছেন! হাসেন বাউল। বলেন, “প্রকৃতি আমার স্কুল। সেখানেই শিখেছি গাছ কমে যাওয়ায় বৃষ্টি কমছে। সভ্যতা কেমন করে ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
গাইছেন বাউল। ছবি: দীপঙ্কর ঘটক।
প্রকৃতি ছেড়ে সমাজ সভ্যতা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে কেমন যেন উদাস হয়ে যান বাউল। অঙ্ক মেলাতে পারেন না। বেড়ে চলা ধর্ষণ, খুন, বধূ নির্যাতনের ঘটনায় আতঙ্কিত তিনি। বলেন, “আমরা কতটা সভ্য হয়েছি বুঝছি না। কেমন যেন গোলমাল লাগে। হতাশ হয়ে যাই।” লম্বা চুল। থুতনিতে সামান্য দাঁড়ি। দুলতে থাকে গলায় জড়ানো পুঁথির মালা। হাওয়ায় ওড়ে গেরুয়া লম্বা ঝুলের পাঞ্জাবি। শিশুদের গান শোনাতে বেশি পছন্দ করেন সিদ্ধগোপাল। কিন্তু তাতে যে পেট ভরে না। তাই সময় করে বাড়িতে ঘুরে গান শুনিয়ে ভিক্ষে করেন। দিন চলার মতো কিছু জুটলে আর কথা নেই। সব ভুলে মাতেন শিশুদের মন ভোলাতে। ময়নাগুড়ির লোক সঙ্গীত শিল্পী কামেশ্বর রায় বলেন, “সমাজে সচেতনতা বাড়াতে প্রশাসনের তরফে যে কাজ করা দরকার সেটাই বছরের পর বছর ওই প্রবীণ বাউল করে চলেছেন।” ঝুলিতে সার্টিফিকেট নেহাত কম নেই। সরকারি বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও গান শুনিয়েছেন। কিন্তু আর্থিক সাহায্য আজও অধরা। আবেদন পত্র লিখে আশ্বাস ছাড়া কিছু মেলেনি। বাউলের পরিবারে রয়েছেন স্ত্রী পার্বতী দেবী এবং দুই ছেলে গোকুল ও গণেশ। বিপিএল তালিকা ভূক্ত পরিবার। রয়েছে একশো দিনের জব কার্ড। গোকুল গ্রামে ঘুরে শিলনোড়া কুটানোর কাজ করেন। ছোট ছেলে টিভি মেরামতের কাজ করে সামান্য কিছু রোজগার করেন। বাউল বলেন, “সংসার চলে না। খুব কষ্টে আছি। পঞ্চায়েত ও প্রশাসনের কর্তাদের কাছে লোকশিল্পী হিসেবে মাসে কিছু টাকা সাহায্যের আবেদন করেছি। ওঁরা মাটি কাটার কাজ দেয়। গান ছেড়ে কেমন করে তা করি বলুন তো! স্ত্রী যায়। মাটি কাটে। আমি গান শোনাই।” বিডিও কল্যাণ বড়ুয়া বাউলের কথা শুনে অবাক। তিনি বলেন, “সত্যি, গান ছেড়ে কী করে মাটি কাটবেন। আমার কাছে আসতে বলুন। দেখি কী করতে পারি।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.