হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতির পরে এ বার চা বণিক সভা। খানাখন্দে ভরা ডুয়ার্সের বেহাল রাস্তা নিয়ে শুধু ক্ষোভ প্রকাশ করলেন না তাঁরা। জানিয়ে দিলেন বেহাল যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য সঙ্কটের মুখে দাঁড়িয়েছে ডুয়ার্সের চা শিল্প। দ্রুত রাস্তা মেরামতের ব্যবস্থা করা না হলে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করবে বলেও তাঁরা আশঙ্কা প্রকাশ করেন। শনিবার ডুয়ার্স ব্রাঞ্চ অব ইন্ডিয়ান টি অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিআইটিএ) ১৩৫ তম সাধারণ সভায় জেলা প্রশাসনের কর্তাদের সামনে সংস্থার চেয়ারম্যান সুদর্শণকুমার বাবল ওই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, “বেহাল রাস্তার জন্য শ্রমিকদের রেশন বাগানে পৌঁছতে উৎপাদিত চা নিলাম কেন্দ্রে নিয়ে যেতে প্রচুর সময় চলে যাচ্ছে। যাতায়াতের খরচ অস্বাভাবিক বেড়েছে। সামগ্রিকভাবে গোটা চা শিল্প সমস্যায় পড়েছে।”
সভায় উপস্থিত জলপাইগুড়ির বিভাগীয় কমিশনার অমরেন্দ্রনাথ সিংহ অবশ্য বলেন, “কয়েকটি রাস্তার মেরামতের কাজ চলছে। জলপাইগুড়ি থেকে ফালাকাটা হয়ে চতুর্ভুজ সড়ক নির্মাণ হলে যোগাযোগ ব্যবস্থার সমস্যা থাকবে না।” যদিও প্রশাসনের কর্তারা ওই বক্তব্যে চা বাণিকসভার কর্তারা আশ্বস্ত হতে পারেননি। তাঁদের অনেকেই অভিযোগ করেন, বছরের পর বছর ওই সমস্য চলছে। রাস্তা মেরামতের জন্য বারবার আবেদন জানানো হচ্ছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। চা বাণিক সভার কর্তাদের মতো রাস্তার বেহাল দশা নিয়ে ক্ষুব্ধ আলিপুরদুয়ারের সাংসদ মনোহর তিরকি। তিনি বলেন, “মানুষ চলাফেরা করতে পারছে না। ডুয়ার্সের অর্থনীতির স্তম্ভ চা শিল্প। বেহাল রাস্তার খারাপ প্রভাব ওই শিল্পের উপরে পড়েছে।” এর আগে জলদাপাড়ায় বেড়াতে এসে ভাঙাচোরা সড়ক যন্ত্রণা। ক্ষুব্ধ হন খোদ হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি জেএন পটেল। তিনি কলকাতায় ফিরে জনস্বার্থে মামলাও করেন। গত ১১ জানুয়ারি ওই মামলার রায়ে প্রধান বিচারপতি জানান, পশ্চিমবঙ্গের রাস্তার পরিস্থিতি বিহারের থেকেও খারাপ। চা বণিকসভার কর্তারা জানান, ডুয়ার্সের ১৫৩টি চা বাগান কর্তৃপক্ষকে শ্রমিকদের জন্য রেশনের সামগ্রী আনতে, উৎপাদিত চা নিলাম কেন্দ্রে পৌঁছতে শিলিগুড়িতে নিয়মিত যাতায়াত করতে হয়। এখানে দুটি রাস্তা রয়েছে। একটি সেবক হয়ে। অন্যটি ধূপগুড়ি, ময়নাগুড়ি হয়ে। দু’বছর থেকে ৩১-সি জাতীয় সড়ক বেহাল অবস্থায় পড়ে আছে। খানাখন্দে ভরা মাদারিহাট-হাসিমারার রাস্তা চলাচল অযোগ্য হয়ে পড়েছে। ধূপগুড়ি থেকে জলপাইগুড়ি এবং বীরপাড়া থেকে সেবক হয়ে শিলিগুড়ি যাতায়াতের রাস্তার অবস্থা তুলনামূলক ভাল হলেও তিস্তা নদীর উপরে সেবক করোনেশন সেতু দুর্বল হয়ে পড়েছে। ওই সেতু দিয়ে ১৬ মেট্রিক টন ওজনের বেশি গাড়ি চলাচলের উপরে প্রশাসন নিষেধাজ্ঞা জারি করায় নাগরাকাটা ও মালবাজার এলাকায় প্রায় ৩৫টি চা বাগান কর্তৃপক্ষ বিপাকে পড়েছেন। ডিবিআইটিএ-র সচিব প্রবীর ভট্টাচার্য বলেন, “করোনেশন সেতুর উপর দিয়ে কমপক্ষে ২২ মেট্রিক টন ওজনের পণ্য পরিবহণের দাবি প্রশাসনের কাছে জানানো হয়েছে। এটা হলেও খরচ কিছুটা কমবে।” ডুয়ার্সের নাগরাকাটা এলাকার কুর্তি চা বাগানের ম্যানেজার রাজেশকুমার রুমটা জানান, করেনশন সেতু ছাড়া শিলিগুড়িতে যাতায়াতের জন্য রয়েছে ধূপগুড়ি-ময়নাগুড়ি ঘোরা পথ। ওই রাস্তায় শিলিগুড়িতে চা নিয়ে যেতে অথবা সেখান থেকে শ্রমিকদের রেশনের সামগ্রী বাগানে আনতে ৪০ শতাংশ বেশি খরচ হয়। কুমারগ্রাম চা বাগানের ম্যানেজার আবিদ রহমান বলেন, “ফালাকাটা হয়ে শিলিগুড়ি যেতে চার বছর আগে সাড়ে ৩ ঘণ্টা সময় লাগত। এখন বেহাল রাস্তার জন্য দ্বিগুণ সময় লাগছে। ফলে পরিবহণ খরচ বাড়ছে। সময়ও নষ্ট হচ্ছে।”
এ দিকে মাদারিহাট-হাসিমারা ভাঙাচোরা রাস্তার ধুলোর ঝড়ে কয়েকটি চা বাগান অন্য সমস্যায় পড়েছে। চা গাছের পাতা ধুলোর আস্তরণে ঢেকে যাওয়ায় সালোক সংশ্লেষণ প্রক্রিয়া নষ্ট হচ্ছে বলে বাগান কর্তৃপক্ষের অভিযোগ। কালচিনির সুভাষিণী চা বাগানের ম্যানেজার অনিন্দ্য রায় ডানান, রাস্তার ধারের ১০০ একর চা গাছের পাতায় ধুলোর আস্তরণে ঢেকে গিয়েছে।গাছগুলিতে নতুন পাতা মেলেনি। |
বেহাল পথের পাঁচকাহন |
• জমি অধিগ্রহণে আপত্তি ওঠায় ইস্ট ওয়েস্ট করিডর নির্মাণের কাজ ধূপগুড়ি-ফালাকাটা রুটে বন্ধ।
• ধূপগুড়ি থেকে শিলিগুড়ি ৭৫ কিমি রাস্তার সিংহভাগ বেহাল।
• মাদারিহাট থেকে হাসিমারা যাতায়াতের ৩১(সি) জাতীয় সড়কের ১৪ কিমির ভগ্নদশা।
• সেবকের করোনেশন সেতু দুর্বল হওয়ায় ১৬ টনের বেশি ট্রাক নিষিদ্ধ।
• করিডর হবে বলে এখন রাস্তা ভাল ভাবে সারাতে অনীহা জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের। |
|