কালিয়াগঞ্জ-বুনিয়াদপুর রেলপথ তৈরির কাজে রেল কতৃপক্ষের বিরুদ্ধে জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ায় অনিয়মের অভিযোগ তুলে অনশন শুরু করলেন কালিয়াগঞ্জ নাগরিক অধিকার রক্ষা কমিটির সদস্যরা। রবিবার থেকে কালিয়াগঞ্জ ব্লকের ধনকল এলাকার রাজ্য সড়কের ওই অনশন শুরু হয়েছে। কমিটির দাবি, জমির উপযুক্ত দাম ও পরিবার পিছু একজনকে চাকরি দিতে হবে। প্রথম দিন ১৮৭ জন বসলেও ২০ জন আমরণ অনশন করবেন বলে কমিটি জানিয়েছে। বিজেপির উত্তর দিনাজপুর জেলা সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ সরকার ও জেলা কমিটির সদস্য শ্যামল সরকারের নেতৃত্বে ওই আন্দোলন শুরু হয়েছে। কমিটির সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন প্রদীপবাবু ও শ্যামলবাবু সম্পাদকের পদে রয়েছেন। যদিও কমিটির তরফে দাবি করা হয়েছে, আন্দোলনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সমর্থক চাষিরাই সামিল হয়েছেন। দলীয় সূত্রের খবর, বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহকে জানিয়েই ওই আন্দোলনে সামিল হয়েছেন দলের দুই নেতা। বিজেপির জেলা সভাপতি শুভ্র রায়চৌধুরী বলেন, “কমিটির আন্দোলনকে আমরা নৈতিক সমর্থন দিয়েছি। তবে সরাসরি দলের কোনও সম্পর্ক নেই।” উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেলের কাটিহার ডিভিশনের ডিআরএম অরুণ শর্মা বলেন, “জমি অধিগ্রহণ ও ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়টি দেখে রেলের নির্মাণ বিভাগ। চাষিরা অনশনে বসেছেন বলে শুনেছি। সমস্যার সমাধানে ওই বিভাগের আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে।” |
২০১০ সালে কালিয়াগঞ্জ থেকে দক্ষিণ দিনাজপুরের বুনিয়াদপুর পর্যন্ত প্রায় ৩৪ কিলোমিটার রেলপথ তৈরির ঘোষণা হয়। দুই জেলার তিনটি ব্লকের ৪৯টি মৌজার ৬০০ একর জমি চিহ্নিত করেছেন রেল কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে কালিয়াগঞ্জ ব্লকের দুটি গ্রাম পঞ্চায়েত ও পুর এলাকার ১৫০ একর ও দক্ষিণ দিনাজপুরের কুশুমন্ডি এবং বংশিহারি ব্লকের ৩০০ ও ১৫০ একর জমি রয়েছে। চিহ্নিত হওয়ার জমির মোট মালিক রয়েছেন ১১৩৪ জন। তাঁরা প্রত্যেকেই চাষি। গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে রেলপথ তৈরির জন্য সমীক্ষা ও জমি জরিপের কাজে নামেন রেল কর্তৃপক্ষ। ইতিমধ্যে খুঁটি পোতার কাজও শেষ হয়েছে। জমি অধিগ্রহণ করতে কালিয়াগঞ্জ, বুনিয়াদপুর ও মালদহ এলাকায় একাধিক শুনানি হয়। কালিয়াগঞ্জ ব্লকের ৩৮৯ জন চাষি সহ ৮২৬ শর্ত সাপেক্ষে জমি দেবেন বলে জানান। শর্ত হল, উপযুক্ত দাম ও পরিবার পিছু ১ জনের চাকরি। কমিটির সম্পাদক শ্যামলবাবু জানান, “দুই জেলার বিভিন্ন এলাকায় জমির মান অনুযায়ী বিঘা প্রতি দাম হওয়ার কথা ৮ লক্ষ থেকে ৫০ লক্ষ টাকারও বেশি। শুধু জমির উপযুক্ত দাম ও চাকরি দিলেই চলবে না। সেইসঙ্গে রেল কর্তৃপক্ষকে চাষিদের পূনর্বাসন ও খেতমজুরদের ক্ষতিপূরণও দিতে হবে।” অনশনে সামিল হয়ে বংশিহারি ব্লকের বুনিয়াদপুরের বাসিন্দা ভবানন্দ সরকার ও কুশুমন্ডি ব্লকের আমিনপুরের বাসিন্দা ইলিয়াস আলি জানান, ওই জমির ভরসায় সংসার চলে। সে জন্য শর্ত পূরণ না হলে জমি দেবেন না তাঁরা। যদিও কালিয়াগঞ্জ টাউন কংগ্রেস সভাপতি অরুণ দে সরকার বলেন, “রাজনৈতিক স্বার্থে উন্নয়ন থমকে দিতেই কমিটি আমরণ অনশন শুরু করেছে। তাঁদের দাবি দাওয়া রেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেই মিটিয়ে নেওয়া যেত।”
তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক অসীম ঘোষ জানান, তৃণমূলের হাতে রেলমন্ত্রক থাকার সময়ে বাসিন্দাদের দীর্ঘদিনের দাবি মেনেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কালিয়াগঞ্জ-বুনিয়াদপুর রেলপথ তৈরির কথা ঘোষণা করেন। ওই রেলপথ তৈরি হলে উত্তর দিনাজপুরের সঙ্গে দক্ষিণ দিনাজপুরের রোল যোগাযোগ গড়ে উঠবে। তাঁর অভিযোগ, “সরকারি নিয়ম মেনে ক্ষতিপূরণ মিলবে সেটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই ঘোষণা করেছেন। আসলে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে রাজনীতি করতেই বিজেপি নেতারা উন্নয়নবিরোধী আন্দোলন শুরু করেছেন।” জেলা বামফ্রন্টের সচিব অপূর্ব পালও মনে করেন, রেলমন্ত্রীকে জানালে যেখানে সমস্যা মিটতে পারত, সেখানে অনশন আন্দোলনের জেরে রেলপথ তৈরির কাজ থমকে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। |