শহরের বুকে বসল কৃষি মেলা। সেই মেলায় প্রত্যাশিত ভাবে শহরবাসী ভিড় জমালেও সে ভাবে দেখা গেল না কৃষকদের। সম্প্রতি বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া জেলায় কৃষি মেলাগুলিতে এমনটাই দেখা গেল।
রঘুনাথপুর শহরের এ-টিম ময়দানে মহকুমা কৃষি মেলার উদ্বোধনে গিয়ে একই উপলব্ধি রাজ্যের স্বনির্ভরগোষ্ঠী ও স্বনিযুক্তি দফতরের মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতোরও। তাঁর কথায়, “রাজ্য সরকার কৃষকদের স্বার্থে এই মেলা করছে। ফলে মেলায় আরও বেশি সংখ্যক কৃষকের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।” তিনি জানান, উদ্বোধনের দিন শুক্রবার মেলায় কৃষকদের সংখ্যা কম ছিল। আরও বেশি সংখ্যক কৃষকের আসা প্রয়োজন। বিষয়টি দেখার জন্য কৃষি দফতর ও প্রশাসনের আধিকারিকদের বলেছি।”
কৃষি মেলার উদ্দেশ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বাঁকুড়ায় রাজ্য সরকারের কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদার বলেন, “কৃষি ক্ষেত্রের উন্নয়নের মাধ্যমে কৃষকদের উন্নয়ন করাই আমাদের লক্ষ। উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে কী ভাবে কৃষির উন্নয়ন ঘটানো যায় তা কৃষকদের বোঝাতেই এই মেলা।” বাঁকুড়ায় ছিল ৪৭টি স্টল। অধিকাংশ স্টলেই নানা সব্জি, ফল, ফুল ছিল। কৃষির উন্নয়নের নানা পরামর্শ দেওয়ার ব্যবস্থাও ছিল। কিন্তু সেই সব স্টলে উঁকিঝুঁকি মারছিলেন শহরের বাসিন্দারা। বিষ্ণুপুর মহকুমা ক্রীড়া সংস্থার মাঠে ও খাতড়া স্টেডিয়ামেও কৃষি মেলার অবস্থাও একই। |
কৃষির সঙ্গে সরকারের অন্য দফতরগুলির নানা সামগ্রী ছিল। বাঁকুড়ার উপ কৃষি অধিকর্তা অনন্তনারায়ণ হাজরা বলেন, “মূলত কৃষি মেলা হলেও স্থানীয় লোক-সংস্কৃতি ও হস্তশিল্পের বিকাশও অন্যতম উদ্দেশ্য। তাই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও রয়েছে।” প্রশাসন সূত্রের খবর, মেলা পিছু চার লক্ষ টাকা করে বরাদ্দ করেছে রাজ্য সরকার। অথচ সেই মেলায় কৃষকদের দেখা না মেলার প্রশ্ন ওঠায় অনন্তনারায়ণবাবুর দাবি, “মেলার প্রচারে কোনও খামতি রাখিনি। ব্লকে-ব্লকে গাড়ি পাঠিয়ে লিফলেট বিলি করা হয়েছে। তবে প্রথম দিনের তুলনায় দ্বিতীয় দিনে কৃষকদের উপস্থিতি বেড়েছে।” রঘুনাথপুরের মহকুমাশাসক প্রণব বিশ্বাস বলেন, “পরবর্তী সময়ে ব্লকেও এই মেলা হবে। সেখানে আরও বেশি সংখ্যক কৃষক মেলায় আসতে পারবেন।” তবে রবিবার পুরুলিয়া শহরের জুবিলি ময়দানে শুরু হওয়া কৃষি মেলায় কৃষকদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।
রঘুনাথপুরের মেলা চত্বরে রাজ্যের সহ কৃষি অধিকর্তা পরিতোষ ভট্টাচার্য বললেন, “পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ার মতো খরাপ্রবণ জেলায় চাষ কম হলেও প্রাকৃতিক কারণে এখানে বীজ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। এ জন্য চাষিদের উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। তাঁরা বীজ উৎপাদন করুক, আমরা কিনে নেব।” কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদার জানালেন, গোবিন্দভোগ, তুলাইপাঞ্জি-র মতো সুগন্ধী চালের বাজারে ভাল দাম রয়েছে। চাষিদের এ দিকে নজর দেওয়া দরকার। তারা তো বললেন। কিন্তু শুনলেন কারা? মেলা শেষে তাই প্রশ্নটা রয়েই গেল। |