হাতে গোনা শিবির, গতি নেই ধান কেনায়
ক্ষ ছিল চাষিদের ধানের অভাবী বিক্রি বন্ধ করা। তাই ধান বিক্রি করতে আসা চাষিদের কোনও ভাবেই ফিরিয়ে দেওয়া যাবে না বলে চালকল ও সমবায় সমিতিগুলিকে নির্দেশ দিয়েছিলেন খাদ্য মন্ত্রী। বাস্তবে কিন্তু ধানের অভাবী বিক্রি বন্ধ হয়নি। রাজ্যের অন্য জেলাগুলির মতো একই ছবি বাঁকুড়া জেলাতেও।
বড়জোড়া ব্লকের পখন্নার বাসিন্দা হাসেম আলি শেখ বলেন, “সহায়ক মূল্য সরকার ধান কিনছে বলে শুনিনি। ৬১০ টাকা বস্তায় (৬০ কিলোগ্রাম ধান) স্থানীয় এক ধান ব্যবসায়ীকে ধান বিক্রি করেছি।” ওই গ্রামেরই সাধন মণ্ডলের অভিযোগ, “গত বার বাড়ি থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে চালকলে গাঁটের টাকা খরচ করে ধান নিয়ে গিয়েছিলাম। সব ধান ওরা না কেনায় বেশ বিপাকে পড়েছিলাম। এ বার আর তাই চালকলে যাচ্ছি না। কাছাকাছি কোনও ফড়ের কাছেই ধান বিক্রি করব।”
শুধু সাধারণ মানুষই নয়, চাষের ধান বিক্রি করা নিয়ে সমস্যায় পড়েছেন শাসকদলের নেতা-কর্মীরাও। ওন্দার কুমারডাঙার বাসিন্দা তথা তৃণমূলের প্রাক্তন পঞ্চায়েত প্রধান ভবানী মোদকের কথায়, “আমাদের এলাকায় সমবায় সমিতি ধান কিনতে নামেনি। একটি মাত্র চালকলে ধান কেনা হচ্ছে। তিন বার সেখানে গাড়িতে ধান বোঝাই করে বিক্রি করতে গিয়েছিলাম। প্রথম দু’বার আমাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। শেষ বার বহু তদ্বির করার পরে ওরা অল্প কিছু ধান কেনে। বাকি ধান ফড়ের কাছেই ৯৮০ টাকা কুইন্টাল দরে বিক্রি করি। একই অভিযোগ করেন ওন্দার গোগড়া গ্রামের চাষি সুনীল কারক। তাঁর অভিযোগ, “গাড়িতে বোঝাই করে ২৫০ কুইন্টাল ধান নিয়ে গিয়েছিলাম চালকলে। অত ধান কিনতে পারবে না বলে ওরা ফিরিয়ে দেয়। ভাবছি ফড়ের কাছেই যা দর মেলে বিক্রি করে দেব।”
চালকল মালিকদের সংগঠন অভিযোগ মানতে চায়নি। এমন অভিযোগ পাননি বলে দাবি করেছেন বাঁকুড়া জেলা খাদ্য দফতরের আধিকারিকেরাও জানান, এরকম অভিযোগ তাঁদের কাছে আসেনি। জেলা খাদ্য নিয়ামক শিবনারায়ণ পানি বলেন, “কোনও চাষিকেই ফিরিয়ে দেওয়া যাবে না। চালকল চাষিদের ফিরিয়ে দিচ্ছে বলে কেউ অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” চলতি খারিফ মরসুমে চালকল এবং এনসিসিএফ, নাফেড, ইসিএসসি ও বেনফেডের মাধ্যমে ধান কেনার কথা। খাদ্য দফতরের দাবি, জেলায় এখনও পর্যন্ত এনসিসিএফ ১৪টি শিবির করে ৬০০০ টন, নাফেড ১৬টি শিবির করে ১১১৫ টন, ইসিএসসি ২৫টি শিবির করে ৬০০ টন, বেনফেড ৩০টি শিবির করে ১৩৮১ টন ও চালকলগুলি ৬০ হাজার টন ধান কিনেছে।
জেলায় ধান কেনার গতি শ্লথ কেন? এক সমবায়ের কর্তা বলেন, “সরকার টাকা না দিলে ধান কিনব কী করে?” খাদ্য দফতরের এক আধিকারিক বলেন, “টাকা জোগাড়ের চেষ্টা করা হচ্ছে।” অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) মৌমিতা বসু বলেন, “যে সমস্ত সমবায় সমিতিগুলি এখনও ধান কিনতে নামেনি, তাদের সঙ্গে আমরা আলোচনা চালাচ্ছি। আগামী সপ্তাহের মধ্যেই পুরোদমে সমবায় সমিতিগুলি ধান কেনা শুরু করবে।” তত দিন তা হলে অভাবী বিক্রি চলবেই? জবাব মেলেনি।
ধান দেব মেপে
সারেঙ্গা ব্লক, জেলা বাঁকুড়া
রামবিষ্ণু পণ্ডা

গ্রাম কুসুমটিকরি, থানা সারেঙ্গা
১৩০ কুইন্টাল ধান হয়েছে। ৪০০ মিটার দূরে চালকল। চালকলে ১৭ কুইন্টাল ৬০ কেজি ধান বিক্রি করতে পেরেছি। বাকি ধান ওঁরা কিনতে চাইছেন না। ফড়ের কাছে হয়ত বাকি ধান বিক্রি করতে হবে।
 
সন্তোষ গরাই

গ্রাম কুসুমটিকরি, থানা সারেঙ্গা
২২ কুইন্টাল ধান হয়েছে। ৩০০ মিটার দূরে চালকল। সেখানে ৫ কুইন্টাল ৩৬ কেজি ধান বিক্রি করেছি। বাকি ধান পড়ে রয়েছে। ওই ধান নিয়ে কী করব জানি না। সরকারের নজর দরকার।
 
দিলীপ পণ্ডা

কুসুমটিকরী সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতি
সদস্য সংখ্যা ৪১৮। টাকার সমস্যা রয়েছে। গত বছর ধান কিনে কিছু টাকা লোকসান হয়। তার উপর টাকা পেতেও বেশ দেরি হয়েছিল। এ বার তাই এখনও কেনা শুরু করতে পারিনি।
 
বিনয় খিলাড়ি

বড় জামাবেদিয়া, থানা সারেঙ্গা
২৫ হাজার কুইন্টাল ধান মজুত করার ক্ষমতা। ডিসেম্বর মাসের তৃতীয় সপ্তাহে ধান কেনা শুরু করেছি। ১৩৫৯ মেট্রিক টনের বেশি ধান কিনেছি। গতবার প্রায় ৪৮৮ মেট্রিক টন লেভি দিয়েছি।
 
বাবলুচন্দ্র ভক্ত

খাতড়া মহকুমা
প্রতিটি ব্লকে ১০-১৫ হাজার মেট্রিক টন ধান কেনার পরিকল্পনা। মহকুমার ১৩ টি চালকলে প্রায় ৯১৮৪ মেট্রিক টন ও চারটি শিবিরে প্রায় ১৭৫২ মেট্রিক টন
ধান কেনা হয়েছে। সমবায়গুলি শীঘ্রই নামবে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.