সম্পাদকীয় ২...
মা ভৈঃ
মতা বন্দ্যোপাধ্যায়, মুথুভেল করুণানিধি এবং মায়াবতীর মতো নায়কনায়িকারা সমস্বরে যে আর্থিক সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন, বুঝিতে হইবে, ভারতীয় অর্থনীতির পক্ষে সেই সিদ্ধান্ত অতি মঙ্গলজনক। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকার সিদ্ধান্ত করিল, ডিজেলের দাম ধাপে ধাপে বাড়াইয়া সম্পূর্ণ ভর্তুকি রদ করা হইবে। সঙ্গে সঙ্গে ওই তিন নেতাই (এবং তাঁহাদের মতোই সংস্কার-বিরোধী আরও বিবিধ রাজনীতিক) নিদান দিলেন, এই সিদ্ধান্ত জনবিরোধী। তাঁহাদের এই দ্ব্যর্থহীন বিরোধিতাই ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির যৌক্তিকতার প্রমাণ। লক্ষণীয়, তিন জনই সাধারণ মানুষ-এর দোহাই পাড়িয়াছেন। ভর্তুকির বোঝা বহিয়া রাজকোষ কাহিল হইলে যেন সাধারণ মানুষের লাভ। মাসে মাসে পঞ্চাশ পয়সা দাম না বাড়াইয়া বহু দিন কৃত্রিম ভাবে তেলের দাম চাপিয়া রাখিবার পর এক ধাক্কায় দশ টাকা বাড়াইলেই যেন সাধারণ মানুষের স্বার্থরক্ষা হয়!
ডিজেলে ভর্তুকি বাবদ সরকার বৎসরে প্রায় এক লক্ষ কোটি টাকা ব্যয় করে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়দের কথা শুনিলে মনে হওয়া স্বাভাবিক, সেই ভর্তুকি বুঝি মা-মাটি-মানুষের উপকারে লাগে। বাস্তব সম্পূর্ণ বিপরীত। টাকা যায় ধনীদের পকেটে, যাঁহারা ডিজেল গাড়ি কিনিবার ক্ষমতা রাখেন, জেনারেটর সেট না থাকিলে যাঁহাদের চলে না। ডিজেল ভর্তুকির কয় শতাংশ গণপরিবহণে যায়, জনদরদি নেতারা জানেন কি? জনস্বার্থেই এই ভর্তুকি তুলিয়া দেওয়া বিধেয়। একবারে না তুলিয়া ধাপে ধাপে তোলার বিচক্ষণ পরিকল্পনাটিও তারিফযোগ্য। পেট্রোলিয়াম সংস্থাগুলির হাতে ডিজেলের মূল্য নির্ধারণের ক্ষমতা তুলিয়া দেওয়াও অতি জরুরি সিদ্ধান্ত। তবে পেট্রোলের মতো এই ক্ষেত্রেও একটি আপাত-অদৃশ্য রাশ সরকারের হাতে থাকিয়াই গেল। বাজারের ক্ষমতার উপর বিশ্বাস রাখিতে না পারার পুরাতন ব্যাধি হইতে রাজনীতিকদের বোধ করি নিস্তার নাই।
আর একটি পুরাতন ব্যাধির নাম মধ্যবিত্ত তোষণ। ডিজেলের দাম বাড়াইবার সিদ্ধান্ত করিয়া নেতাদের হয়তো কিঞ্চিৎ ভয় হইয়াছিল, এই বুঝি ভোট পলাইয়া গেল! ফলে, তাঁহারা মধ্যবিত্তকে ঘুষ দেওয়া মনস্থ করিলেন। এলপিজি সিলিন্ডারে ভর্তুকি দেড় গুণ হইয়া গেল। বৎসরে ছয়টি নহে, নয়টি সিলিন্ডার ভর্তুকিতে পাওয়া যাইবে। এই উল্টোরথ সংস্কারের যুক্তির সহিত সঙ্গতিহীন, মনমোহন সিংহ যে পথে চলিতে মনস্থ করিয়াছেন, তাহার পরিপন্থী। এই আত্মখণ্ডনের একটিই অর্থ: নেতাদের সাহসে টান পড়িয়াছে। এই সাহস লইয়া রাজনীতি হয়, সংস্কার হয় না। বস্তুত, ভারতে এখন একটি বিপ্লব চলিতেছে। আধার-এর মাধ্যমে নগদ আর্থিক সুবিধা হস্তান্তরের ব্যবস্থায় যাহাকে যে খাতে যে পরিমাণ ভর্তুকি দেওয়া প্রয়োজন, তাহাকে সেই খাতে ঠিক ততটাই দেওয়া সম্ভব হইবে। সরকার যদি বোধ করে, কোনও বিশেষ জনগোষ্ঠীকে সস্তায়, এমনকী বিনামূল্যে এলপিজি দেওয়া প্রয়োজন, তাহাই করা সম্ভব। স্বচ্ছতা বজায় থাকিবে, আম আদমির নামে মধ্যবিত্ত তোষণ চলিবে না। তাহাই হইবে ভাল অর্থনীতি এবং তাহাই হইবে ভাল অর্থনীতি এবং ভাল রাজনীতি।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.