নারী ধর্ষণ ও মহিলাদের শ্লীলতাহানির ঘটনায় কখনও কখনও একতরফা ভাবে মহিলাদের কুরুচিকর পোশাককে দায়ী করা হয়। সীমান্ত গুহঠাকুরতা (‘পুরুষ যে পোশাক চায়’, ৮-১) সেই পোশাক বিতর্কে একতরফা ভাবে পুরুষদের দায়ী করেছেন। সমস্যার শিকড়ে যাওয়া দরকার, ক্রমবর্ধমান এই সামাজিক সমস্যার পিছনের কারণগুলি বিশ্লেষণ করা দরকার। খুব সংক্ষেপে কারণগুলি বলতে চেষ্টা করছি।
১) বাংলা, হিন্দি সিনেমা ও টেলিভিশনের দাপাদাপি সমাজের শিক্ষা, নীতি ইত্যাদির বুকে ছুরি বসিয়েছে। টিনএজার থেকে মধ্যবয়সীরা যা কিছু পোশাক পরে ও প্রতিদিন যা অ্যাক্টিভিটি দেখায় (নারী, পুরুষ নির্বিশেষে) তা সবই সেলুলয়েডে যা দেখে তার অন্ধ অনুকরণ। কুরুচিকর ও নানা কারণে আপত্তিকর সিনেমা (যে কোনও ভাষায় নির্মিত) ও টিভি সিরিয়াল বন্ধ করতে দেশ ও রাজ্যের সরকারকে অবিলম্বে উদ্যোগী হতে হবে।
২) সরকারি কোষাগারে আয় বাড়াতে সরকার ঢালাও মদের লাইসেন্স দেয়। সরকারি কোষাগারে আয় বাড়াবার বহু রকম উপায় রয়েছে। ঢালাও মদের লাইসেন্স প্রদান সমাজকে ক্রমশ অধঃপতনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
৩) স্বল্পশিক্ষিতদের চাকরি পাওয়ার অনেক রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে।
৪) বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নতির ফলে পৃথিবী আজ আমাদের হাতের মুঠোয়। নেট দুনিয়ার কুফল বুঝিয়ে বলার দরকার নেই।
৫) প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষায় নীতিশিক্ষার পাঠ বাধ্যতামূলক করা দরকার। শিক্ষা শুধু সর্বজনীন হলে চলবে না, শিক্ষার্থীর গুণগত মান বৃদ্ধিও জরুরি।
বাড়ির বাইরে বের হতে হবে মহিলাদের। কর্মস্থলে, যাতায়াতে যে পোশাকে তাঁরা স্বাচ্ছন্দ্য অনুভব করেন সেটাই তাঁরা পরিধান করবেন, পুরুষের চাপিয়ে দেওয়া কোনও পোশাক নয়।
সুদীপ চট্টোপাধ্যায়। সালকিয়া, হাওড়া-৬
|
তবে কি বলতে হবে, এই পত্রিকার চোখ নেই, কান নেই, স্মৃতি নেই, বোধ নেই? (‘শিল্প চাই বুঝি?’, ২৬-১১) এটা কেমন করে বিস্মৃত হওয়া যায় যে, আমাদের মুখ্যমন্ত্রী এক জন গ্রন্থকার (কথাশিল্প) এবং একই সঙ্গে মার্কেটেবল ছবি আঁকিয়ে (চিত্রশিল্প)? ক্ষমা চেয়ে বলি, রঙ্গব্যঙ্গ চিত্র কিন্তু আদৌ শিল্প নয়, হলেও সেটা কু-শিল্প। কোটি কোটি সরকারি টাকা (সরকারের নাকি ভাঁড়ে মা ভবানী) ব্যয়ে চলচ্চিত্র উৎসব (বিনোদন শিল্প) তো শোরগোল ফেলে দিয়েছে। একে ‘সার্কাস বললে চলবে? এ ছাড়া ক্রিকেট দলের বিজয়োৎসব (ক্রীড়াশিল্প) উপলক্ষে হররা সমাবেশ, সবই তো এই রাজ্যে। শহরে রীতিমত শিল্পের বান ডেকেছে। এ প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর সাম্প্রতিক কালে দেওয়া ‘শিল্প’র বিস্তৃত বা ডাইভার্সিফয়েড সংজ্ঞা স্মর্তব্য। তার পরেও কী করে বলি তিনি ‘শিল্পবান্ধবী’ নন! আরও লক্ষণীয়, স্টেশন চত্বরে, মাঠে-ময়দানে, রাজ্যের অলিতে-গলিতে, পাকস্থলীতে মাটির ভাঁড়ে ছয়লাপ। এই ভাঁড়ামিও যে, এক শিল্প, মৃৎশিল্প। সুতরাং দুর্জনেরাই একমাত্র বলবে, যে নেত্রী শিল্পবিমুখ বা শিল্পচিন্তাবিমুখ।
সন্তোষ চক্রবর্তী। কলকাতা-৩৪
|
সঙ্গীতাচার্য ‘রঙ্গনাথ’ যদুনাথের হস্তলিখিত গানের খাতা প্রসঙ্গে এই লেখকের (১৯-১২) চিঠিতে দুটি মুদ্রণ প্রমাদ ঘটেছে। এক, পঁচেটগড় চৌধুরী পরিবার প্রসঙ্গে ‘কেশবরাজে’র পরিবর্তে ‘কেশবরাম’ হবে। দুই, পিনাকীনন্দন চৌধুরীর প্রবন্ধটি ১৯৫৮-য় প্রকাশিত হয়। পরে যদুনাথের ওই গানের খাতার উপর ১৯৮২-তে অজয় বিশ্বাসের ‘যদুভট্টের গানের খাতা এবং পঁচেটগড়ের চৌধুরীবাড়ি’ শীর্ষক মূল্যবান আলোচনা প্রকাশিত হয়।
জয়দীপ মুখোপাধ্যায়। অরবিন্দনগর, বাঁকুড়া
|
শীত পড়েছে। প্রতিদিন বাঙালির পিকনিক উৎসবও শুরু হয়েছে নদীর তীরে, পার্কে, বনাঞ্চলের বিভিন্ন পিকনিক স্পটে। বাঙালির কাছে এখন শীত ও পিকনিক সমার্থক। দুঃখের বিষয়, পিকনিক আনন্দমুখর বাঙালির কাছে স্ফূর্তির হলেও দূষণ বিচারে তা বড়ই বেদনাদায়ক। এখন একদল পিকনিকমুখী মানুষের কাছে দিনটি দানবসম লাউড স্পিকারের কর্ণবিদারী আওয়াজের সঙ্গে ‘উদ্দাম নৃত্য’ করার দিন। বোতল-পিয়াসী এ সব উচ্ছৃঙ্খল দ্বিপদের অত্যাচারে পারিবারিক পিকনিক দলগুলির অবস্থা হয় বড়ই অসহায়। দেখেশুনে মনে হয়, পুলিশ প্রশাসন বলে কিছু অবশিষ্ট আছে কি না! এ তো গেল একটা দিক। অন্য দিকে পলিব্যাগ, প্লাস্টিক বোতল, ফোমের থালার মতো চরম দূষণকারী জিনিসগুলিও চার দিকে ছড়িয়ে পড়ে। নদীর নির্মল জল অথবা বনাঞ্চলের সবুজ পরিবেশ এই শীতের পিকনিক-দাপট তথা অত্যাচারে চরম দূষিত হয়। মানুষের সামাজিকতা ও মানবিকতার বোধ আজ বরফের মতো শূন্য মাত্রায় নেমেছে। এ সব রোধে স্থানীয় প্রশাসন কঠোর হোক।
সুদর্শন নন্দী। রাঙামাটি, মেদিনীপুর |