বিরোধী শিবিরে সন্ত্রাসের প্রশিক্ষণ, বোমা শিন্দের
লোকসভা ভোটের আগে কেন্দ্রে শাসক জোট যখন ক্রমশই ভঙ্গুর হচ্ছে, তখন দেশকে ফের বিজেপি-র জুজু দেখাতে নেমে পড়ল কংগ্রেস। সাম্প্রদায়িকতার প্রশ্নে বিজেপি-কে একঘরে করার চেষ্টা বরাবরই করে আসছে কংগ্রেস। এ বার আর শুধু তাতে সীমাবদ্ধ রইল না আক্রমণ। জয়পুরের মঞ্চ থেকে বিজেপি ও আরএসএসের বিরুদ্ধে সরাসরি সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের অভিযোগ তুললেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্দে। প্রধান বিরোধী দল যাতে জাতীয়তাবাদের হাওয়া পালে টানতে না পারে তার জন্য পাকিস্তান প্রশ্নেও সুর চড়ালেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ ও কংগ্রেসের অন্য শীর্ষ নেতারা।
জাতীয় রাজনীতিতে রীতিমতো হইচই ফেলে দিয়েছে শিন্দের মন্তব্য। কংগ্রেসের অধিবেশনে তিনি আজ বলেন, “স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে ইদানীং বিজেপি এবং আরএসএস সম্পর্কে বিভিন্ন তদন্ত রিপোর্ট আসছে। তা থেকে স্পষ্ট যে, ওদের বিভিন্ন শিবিরে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। সমঝোতা বিস্ফোরণ, মালেগাঁও বিস্ফোরণ, মক্কা মসজিদের ঘটনার পিছনে ওদেরই হাত ছিল।” বিজেপি ও সঙ্ঘের এই সন্ত্রাসবাদ রুখতে কংগ্রেস কর্মীদের সর্বশক্তিতে ঝাঁপানোরও ডাক দিয়েছেন শিন্দে।
মালেগাঁও বা সমঝোতার ঘটনায় হিন্দু সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ নতুন নয়। কিন্তু তা নিয়ে এত দিন দিগ্বিজয় সিংহ কিংবা পি চিদম্বরমের মতো নেতারা পরোক্ষে আরএসএস-কে দায়ী করলেও কখনও এত সরাসরি বিজেপি বা সঙ্ঘের বিরুদ্ধে আঙুল তোলেননি। আজ সেই বোমাটাই ফাটালেন শিন্দে। কার্যত কাঁপিয়ে দিলেন জাতীয় রাজনীতি।
এর তীব্র প্রতিক্রিয়া অনিবার্যই ছিল। পাল্টা আক্রমণে নামতে দেরি করেননি বিজেপি ও সঙ্ঘের নেতারা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মন্তব্যের তীব্র নিন্দা করে তাঁরা বলেন, এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন মিথ্যা প্রচারের জন্য সনিয়া গাঁধীকে ক্ষমা চাইতে হবে দেশের কাছে। শিন্দে অবশ্য তাতে সুর পাল্টাননি। বলেছেন, “যে কথা বলেছি তা আগেই বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে। তা ছাড়া, আমি গেরুয়া সন্ত্রাস নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছি মাত্র।” দলের আর এক নেতা মণিশঙ্কর আইয়ারের বক্তব্য, “শিন্দেকে এ জন্য বাহবা দেওয়া উচিত। কারণ, তিনি সত্যি কথাটা সাহস করে বলেছেন।”
রাজনীতির কারবারিদের মতে, কংগ্রেস শীর্ষ নেতারা যে বিজেপি-র বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের কালি লেপতেও দ্বিধা করছেন না তা থেকেই শাসক দলের কৌশল স্পষ্ট হয়ে উঠছে। তা হল, লোকসভা ভোটের আগে বিজেপি-কে ফের জাতীয় রাজনীতিতে একঘরে করে দেওয়া। কেন্দ্রে ইউপিএ জোট থেকে ইতিমধ্যেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তথা তৃণমূল বেরিয়ে গিয়েছে। ঝাড়খণ্ডে বাবুলাল মরান্ডি ও অন্ধ্রপ্রদেশের আঞ্চলিক দল এমআইএম-ও জোট ছেড়েছে। ফলে সরকার লোকসভায় এখন খাতায়-কলমে সংখ্যালঘু। আর সেই কারণে চোদ্দো মাস পর লোকসভা ভোটে যাওয়ার আগে ধর্মনিরপেক্ষতার জিগির তুলে ফের জোট মজবুত করতে মরিয়া কংগ্রেস। সেই সঙ্গে তারা এটাও সুনিশ্চিত করতে চাইছে যে, বিজেপি যেন এনডিএ-র শক্তি বাড়াতে না পারে। সেই লক্ষ্যেই চিন্তন শিবিরের পর জয়পুর ঘোষণায় দল বলেছে, “দেশে মেরুকরণ ও বিভাজন রুখতে ধর্মনিরপেক্ষ, প্রগতিশীল শক্তিকে একজোট করার লড়াই চালিয়ে যাওয়া হবে।”
বিজেপি-র বিরুদ্ধে কংগ্রেসের আর এক দাওয়াই কড়া জাতীয়তাবাদী অবস্থান। নিয়ন্ত্রণ রেখায় সাম্প্রতিক ঘটনার পর বিজেপি যে ভাবে তা নিয়ে সরব হয়ে জাতীয়তাবাদের হাওয়া তুলেছে, বস্তুত তারই মোকাবিলায় আজ জয়পুরে দলীয় মঞ্চ থেকেও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সুর চড়ান মনমোহন। তিনি বলেন নিয়ন্ত্রণ রেখায় সাম্প্রতিক অমানবিক ঘটনার পর থেকে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক পদে-পদে সমীক্ষা করে দেখছে নয়াদিল্লি। (ইসলামাবাদকে) একটি বিষয় ইতিমধ্যেই স্পষ্ট ভাবে বুঝিয়ে দিয়েছি যে, যা ঘটেছে তা দু’দেশের সম্পর্কে খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে।” মনমোহনের কথায়, “আমরা পাকিস্তানের সঙ্গে বন্ধুত্ব চাই ঠিকই। কিন্ত শুধু আমরা চাইলে বা চেষ্টা করলেই হবে না। ওদের তরফেও একই চেষ্টা থাকতে হবে।” জয়পুর ঘোষণাপত্রেও নাম না করে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে পাকিস্তানকে। দলীয় সূত্রে বলা হচ্ছে, গোড়ায় জয়পুর ঘোষণাপত্রে পাক প্রশ্নে কঠোর বার্তার প্রসঙ্গ ছিল না। বরং প্রতিবেশীর সঙ্গে বন্ধুত্বের কথাই বলা হয়েছিল। কিন্তু ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করার আগে রাহুল গাঁধী গত কাল আনন্দ শর্মা-সহদলের নেতাদের স্পষ্ট জানিয়ে দেন, ইসলামাবাদ প্রশ্নে নরম মনোভাব দেখালে চলবে না। কারণ, দেশের দাবি নয়াদিল্লি কঠোর অবস্থান নিক।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.