|
|
|
|
রাহুলের পাল্টা কে, হাতড়েই চলেছে বিজেপি |
জয়ন্ত ঘোষাল • নয়াদিল্লি |
রাহুল গাঁধী যখন আনুষ্ঠানিক ভাবে সহ-সভাপতি হয়ে জয়পুরে আবেগমথিত বক্তৃতা দিচ্ছেন, তখন বিজেপি শিবিরে নেতৃত্ব দখলের লড়াই এক নতুন মোড় নিয়েছে।
নিতিন গডকড়ীই যে আবার সভাপতি হবেন, রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের প্রধান মোহন ভাগবত সেটা আগেই স্পষ্ট করে দিয়েছেন শীর্ষনেতাদের কাছে। ২৩ জানুয়ারি সম্ভবত নাম ঘোষণা হবে নতুন সভাপতির। আজ নির্বাচনের বিজ্ঞপ্তি জারি হয়ে গিয়েছে। এই পদে যাতে আর কেউ প্রার্থী না হন, সর্বসম্মতিক্রমেই যাতে সভাপতি নির্বাচন হয়, সে বিষয়ে সঙ্ঘ তৎপর। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, রাহুল যখন কংগ্রেসের প্রধান মুখ হতে চলেছেন, তখন বিজেপিতে সেই জায়গাটা কাকে দেওয়া হবে? এ নিয়ে দলের মধ্যেই প্রবল বিতর্ক শুরু হয়ে গিয়েছে।
দলের প্রধান মুখ হিসেবে লালকৃষ্ণ আডবাণীর বেশি পছন্দের প্রার্থী বিরোধী দলনেত্রী সুষমা স্বরাজ। এ বিষয়ে ভাগবতের সঙ্গে আডবাণীর কথাও হয়েছে। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আডবাণী চেয়েছিলেন, যাতে এ বার গডকড়ীকে সরিয়ে সুষমাকেই বিজেপি সভাপতি করা হয়। গডকড়ীর বদলে অরুণ জেটলির নামেও আডবাণীর সমর্থন ছিল না। কিন্তু সভাপতি হিসেবে সুষমার নাম নিয়ে জেটলি-সহ বেশ কিছু নেতা প্রবল আপত্তি জানান। রাজনাথ সিংহকেও সর্বসম্মত প্রার্থী করা সম্ভব হয়নি। ফলে গডকড়ীই ফের সভাপতি হচ্ছেন। এই অবস্থায় অতি উৎসাহী গডকড়ী আগামিকালই উত্তরপ্রদেশে একটি জনসভার আয়োজন করছেন। বিজেপি শীর্ষনেতারা সেই সভা নিয়ে যত না উত্তেজিত, তার থেকে অনেক বেশি উত্তেজিত, রাহুলের মোকাবিলায় কাকে প্রার্থী করা হবে তা নিয়ে।
|
|
বক্তৃতার পরে জড়িয়ে ধরলেন মাকে। ছবি: পিটিআই |
আডবাণী-শিবির নরেন্দ্র মোদীর বদলে সুষমাকেই দলের কাণ্ডারী করার পক্ষে। তাঁদের যুক্তি হল, কংগ্রেস অধিবেশনে সনিয়া থেকে রাহুল গাঁধী, যে ভাবে পরিবর্তিত ভারতে নতুন কংগ্রেস গড়ার ডাক দিয়েছেন, তার চরিত্র মূলত ‘প্যান-ইন্ডিয়ান’। রাহুল বারবার বলেছেন, হিন্দুস্তানের ডিএনএ কংগ্রেসেই নিহিত। সনিয়াও বারবার সকলকে নিয়ে চলার কংগ্রেস-নীতিতে জোর দিচ্ছেন। আর এই নীতিটা মূলত সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী, পরধর্ম সহিষ্ণুতার আদর্শকে সামনে রেখে তৈরি। আডবাণী-সহ বিজেপির বহু নেতার বক্তব্য, নরেন্দ্র মোদীই কাণ্ডারী হচ্ছেন ধরে নিয়ে কংগ্রেস তাদের ঘুঁটি সাজাচ্ছে। যে মুহূর্তে মোদীর নাম ঘোষণা হবে, সঙ্গে সঙ্গে কংগ্রেস গোধরা বা সাম্প্রদায়িকতার প্রশ্নকে তুলে ধরে মেরুকরণের রাজনীতি শুরু করবে। মোদীকে মুসলিম-বিদ্বেষী বলে প্রচার চালিয়ে ভারতের বহুদলীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থায় বিজেপিকে আবার বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা করবে। এই নেতাদের আশঙ্কা হল, সে ক্ষেত্রে মূল্যবৃদ্ধি এবং কংগ্রেসের নব্যউদার অর্থনীতির বিরোধিতার তাসটা লঘু হয়ে বিজেপি বিরোধিতার বিষয়টিই বড় হয়ে উঠতে পারে।
বিজেপির এই নেতাদের আরও একটি বিষয় ভাবাচ্ছে। তা হল মোদীর সাফল্য নিয়ে সংশয়। তাঁদের মতে, গুজরাতে নরেন্দ্র মোদী সফল। গত দশ বছর ধরে সে রাজ্যে আর্থিক বৃদ্ধির হার ১০ শতাংশেরও বেশি। যা জাতীয় হারের থেকে বেশি। তার উপর গুজরাতে ফের জিতে এসে দলের বড় অংশের নেতা-কর্মীর মধ্যে একটা নৈতিক কর্তৃত্বও অর্জন করেছেন। ফলে তাঁকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী করা নিয়ে দলের একটা বড় অংশের চাপ রয়েছে। কিন্তু যে প্রশ্নটা রয়েই যাচ্ছে, তা হল, গুজরাতে উন্নয়নের সফল কারিগর হলেও সর্বভারতীয় মঞ্চে মোদী কি
রাজধর্মের প্রতীক হয়ে উঠতে পারবেন? এই প্রশ্নটা ঘুরপাক খাচ্ছে সঙ্ঘ পরিবারের অন্দরেও।
এখানেই শেষ নয়। অরুণ জেটলি-সুষমা স্বরাজ এমনকী রাজনাথ সিংহ প্রত্যেকেই নিজেদের প্রধানমন্ত্রী পদের যোগ্য দাবিদার বলে মনে করেন। আডবাণীর মতো প্রবীণ নেতাও নিজেকে এই ইঁদুর দৌড়ের বাইরে রাখতে চান না। তিনি এখনও স্পষ্ট বলতে রাজি নন যে, এ বার আর তিনি প্রধানমন্ত্রী পদের দাবিদার হতে চান না। সব মিলিয়ে ক্ষমতার অন্তর্দ্বন্দ্ব বিজেপিতে ক্রমবর্ধমান।
আর এখানেই কংগ্রেস অনেকটা এগিয়ে। তাদের মস্ত বড় সুবিধা এই যে, সেখানে গাঁধী পরিবারের কোনও প্রতিনিধিকে সামনে আনা হলে দলের সব স্তরের নেতারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে যান। রাহুল নিজে বলতে পারেন যে, আমাদের দলে ৪০ থেকে ৫০ জন এমন নেতা তৈরি করা উচিত, যাঁদের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার যোগ্যতা থাকবে। কিন্তু বাস্তবে গাঁধী পরিবারের বাইরে কেউ প্রধানমন্ত্রী পদপ্রাথী হবেন, এমন আশা কেউই করছেন না। উল্টে রাহুল রাজি হলে মনমোহন সিংহও গদি ছাড়তে প্রস্তুত হয়ে যাবেন।
প্রধানমন্ত্রী পদে প্রার্থী হওয়া নিয়ে বিজেপির অন্দরের এই টানাপোড়েনের ফলে রীতিমতো সমস্যায় সঙ্ঘ পরিবার। বিজেপির মধ্যে অনেকেই এক কথায় মোদীকে মেনে নিতে নারাজ। আবার সুষমাকে নিয়েও আপত্তি আছে অনেকের। তবে বিজেপির ক্ষমতার উৎস আরএসএসের মধ্যেই নিহিত। ফলে সকলেরই নজর এখন নাগপুরে, সঙ্ঘ পরিবারের সদর দফতরের দিকে। আর নাগপুরের বক্তব্য হল, এখনই তাড়াহুড়োর দরকারটা কী! লোকসভা নির্বাচন তো হবে ২০১৪ সালে। ভোটের আগে কাউকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী না-ও করা হতে পারে (যদিও আডবাণী সেটাই চান)। তবে লোকসভা নির্বাচনের ছ’মাস আগে প্রচারের মুখ হিসেবে কারও নাম ঘোষণা করা হতেই পারে। কী হবে, কেউ জানেন না।
বিজেপির এক শীর্ষনেতার হতাশ মন্তব্য, “রাহুল গাঁধী যখন রাজ্যওয়াড়ি প্রচার শুরু করে দেবেন, তখনও কি আমরা নেতা বাছাই নিয়ে মারামারি করে যাব?’’
|
|
|
|
|
|