শুধু ‘বেঙ্গল লিডস-২’ নয়। হলদিয়ার যে হেলিপ্যাড ময়দানে এই শিল্প সম্মেলনের আয়োজন হয়েছে, সেখানেই এক রকম মুখ থুবড়ে পড়েছে হলদিয়া-কলকাতা হেলিকপ্টারের উড়ান। এক বছর আগে যার উদ্বোধন হয়েছিল ঘটা করে, কিন্তু সরকারি অনুমতি না মেলায় বছর ঘুরলেও উড়ান চালু হয়নি।
কলকাতার সঙ্গে শিল্পশহরের দ্রুত যোগাযোগের জন্য ২০১১ সালের ১৫ ডিসেম্বর পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে কলকাতা-হলদিয়া হেলিকপ্টার পরিষেবার উদ্বোধন করেছিলেন তৃণমূল সাংসদ তথা হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদের (এইচডিএ) চেয়ারম্যান শুভেন্দু অধিকারী। উপলক্ষ ছিল, স্বাধীনতা সংগ্রামী সতীশ সামন্তের জন্মদিবস। শুভেন্দু বলেছিলেন, “রাজ্য সরকারের ব্যবস্থাপনায় এইচডিএ ও কলকাতা পোর্ট ট্রাস্টের সহযোগিতায় এই পরিষেবা মিলবে।”
আর ঠিক যে ভাবে দিঘা সৈকতে ‘প্যারাগ্লাইডিং’ উদ্বোধন প্রসঙ্গে পর্যটন মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু চৌধুরী দাবি করেছিলেন, সেটি ‘ট্রায়াল’ মাত্র, একই রাস্তা নিয়েছেন শুভেন্দুও। হেলিকপ্টারের কথা তুললেই তমলুকের সাংসদ এখন বলছেন, “ওটা ট্রায়াল ছিল। পরিবহণ দফতরে প্রয়োজনীয় প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল।” অথচ ঘোষণা ছিল, ২০১১-এর ডিসেম্বরেই হেলিকপ্টার চালু হবে। এইচডিএ-র ওয়েবসাইটেও জ্বলজ্বল করছে এই পরিষেবার যাবতীয় খুঁটিনাটি। |
এমন কপ্টারেরই ওড়ার কথা ছিল। —ফাইল চিত্র। |
হলদিয়ায় শিল্পসংস্থার লোকজনের যাতায়াত লেগেই রয়েছে। নিয়মিত যাতায়াত করেন শিল্পোদ্যোগীরাও। কলকাতা বিমানবন্দর থেকে সড়ক বা রেলপথই দূরত্ব ১২২ কিলোমিটার দূরে পূর্ব মেদিনীপুরের এই শিল্পশহরে পৌঁছনোর ভরসা। সময় লাগে প্রায় তিন ঘণ্টা। অতি দ্রুত হলদিয়ায় পৌঁছনোর ব্যবস্থা করতেই আকাশপথে যাতায়াত চালুর ভাবনা শুরু করেছিল রাজ্যের নতুন সরকার। বলা হয়েছিল, মাত্র ২৪ মিনিটে হলদিয়া থেকে কলকাতায় পৌঁছনো যাবে।
ঠিক হয়েছিল, প্রতি সপ্তাহে সোম, বুধ ও শনিবার এক বার হলদিয়া থেকে কলকাতা এবং ফিরতি পথে কলকাতা থেকে হলদিয়া পর্যন্ত যাতায়াত করবে একটি হেলিকপ্টার। আসন সংখ্যা পাঁচ। মাথা পিছু ভাড়া পাঁচ হাজার টাকা। ছুটির দিনে ২,৩০০ থেকে ৩,৩০০ টাকা খরচে শিল্পশহরের আকাশ ঘুরতে পারবেন হলদিয়ার আমুদে মানুষজন। কিন্তু যথাযথ অনুমতি ছাড়াই তড়িঘড়ি উদ্বোধন করায় পরে আর এক দিনও ওড়েনি ওই হেলিকপ্টার।
দেশে কোথাও হেলিকপ্টার চালাতে গেলে উড়ান পরিষেবার ছাড়পত্র লাগে। যে উড়ান সংস্থা দায়িত্ব পেয়েছিল, তাদের ওই ছাড়পত্র রয়েছে। কিন্তু রাজ্য পরিবহণ দফতরের অনুমতি তারা পায়নি। ওই সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর সঞ্জয় আড়িয়ার অভিযোগ, “রাজ্য সরকারের উদ্যোগেই আমরা হেলিকপ্টার পরিষেবা চালু করতে চেয়েছিলাম। রাজ্যের পরিবহণ দফতরে অনুমতি চেয়ে আবেদনও করেছিলাম। কিন্তু উদ্বোধনে সায় থাকলেও এখনও সরকারি অনুমতি মেলেনি। তাই ওই পরিষেবা আর চালু করা যায়নি।”
পরিবহণ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই সংস্থাকে দু’টি ইঞ্জিন ব্যবহার করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তা সম্ভব নয় বলে তারা জানিয়ে দেয়। সংস্থার বক্তব্য, স্বল্প খরচে পরিষেবা দিতে গেলে দু’টি ইঞ্জিন ব্যবহার করা সম্ভব নয় বলে আগেই পরিবহণ দফতরকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র বলেন, “অনুমতির বিষয়টি আমরা ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ সিভিল অ্যাভিয়েশনের (ডিজিসিএ) কাছে পাঠিয়েছি। তারা দেখছে। আশা করছি, কিছু দিনের মধ্যেই ওই পরিষেবা চালু হয়ে যাবে।”
|