নিশানা ‘সবুজ বিপ্লব’
নতুন পদ্ধতিতে
বাড়ছে ফলন
পূর্ব ভারতে ‘সবুজ বিপ্লব’ আনতে পরীক্ষামূলক ভাবে কালনা মহকুমার চারটি ব্লকে সাতটি পঞ্চায়েত এলাকার চাষিদের দিয়ে প্রায় আড়াইশো হেক্টর করে আমন চাষ করিয়েছিল কৃষি দফতর। ‘সঠিক পদ্ধতি’ ও ‘উন্নত প্রযুক্তি’র ব্যবহার করে করা হয়েছিল এই চাষ। তাতে দশ থেকে পনেরো শতাংশ ফলন বেড়েছে বলে দাবি করেছে কৃষি দফতর।
মহকুমা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, মোট ৩৯টি মৌজায় এই চাষ করা হয়। সব থেকে বেশি চাষ করা হয় কালনা ১ ব্লকের সুলতানপুর পঞ্চায়েত এলাকায়। এখানে ১৩টি মৌজায় চাষের জন্য আড়াইশো হেক্টর করে জমিতে চাষের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। কাশিমপুর, ভাটরা, উপলতি, হাটবেলে, ন’পাড়া এবং হৃদয়পুরের আড়াইশো হেক্টরে ৫১৩ জন চাষিকে দিয়ে চাষ করানো হয়। অন্য দিকে, সুলতানপুর, গোপালপুর, ইসবপুর, মালিমপুর, হোরসোনা, উৎরা এবং রসুলপুর মৌজায় চাষ করেন ৬৪২ জন চাষি। এছাড়াও এই ব্লকেরই বাঘনাপাড়া পঞ্চায়েতে, কালনা ২ ব্লকে আলুখাল, পূর্বস্থলী ১ ব্লকের নাদনঘাট, বগপুর এবং মন্তেশ্বর ব্লকের ভাগরা মূলগ্রাম, শুশুনিয়া পঞ্চায়েত এলাকায় আড়াইশো হেক্টর করে জমিতেও চাষের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। প্রতি আড়াইশো হেক্টর জমির জন্য ১২.৫ মেট্রিক টন করে বীজ বিলি করে কৃষি দফতর। ‘উন্নত প্রজাতি বীজ’ হিসেবে এমটিইউ ১০১০, আইটি ৪৭৮৬, লালস্বর্ণ, স্বর্ণসাব-১ দেওয়া হয়। এছাড়াও বিনামূল্যে বীজ শোধন করা হয় দফতরের পক্ষ থেকে। দেওয়া হয় কীটনাশকও। বীজতলা তৈরি করা থেকে শুরু করে মূল জমিতে চারাগাছ পোঁতা, সার, সেচের জলের ব্যবহার-সহ বিভিন্ন বিষয়ে ধাপে ধাপে চাষিদের পরামর্শ দেন কৃষি বিশেষজ্ঞেরা।
সম্প্রতি এই ভাবে চাষ করা ধান ঝাড়াই করে দেখা গিয়েছে, এই পদ্ধতিতে ধানের ফলন তুলনামূলকভাবে বেড়েছে। কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গড়পড়তা পদ্ধতিতে যেখানে চাষ করা হয়েছে, সেখানে হেক্টর প্রতি গড় ফলন হয়েছে ৪.৭৫ মেট্রিক টন। কিন্তু নতুন পদ্ধতিতে চাষ প্রকল্পে সুলতানপুর পঞ্চায়েতে হেক্টর প্রতি গড় ফলন হয়েছে ৪.৯৮ মেট্রিক টন। বাঘনাপাড়া পঞ্চায়েতে আবার হেক্টর প্রতি ফলন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫.৩২ মেট্রিক টনে। কালনা ২ ব্লকের আলুখালে প্রকল্পের আওতায় থাকা চাষিদের হেক্টর প্রতি ফলন দাঁড়িয়েছে ৪.০২ মেট্রিক টন, যেখানে সাধারণ চাষিরা প্রতি হেক্টরে ফলন পেয়েছেন ৩.৯৮২ মেট্রিক টন। পূর্বস্থলী ১ ব্লকের বেগপুর এবং নাদনঘাট পঞ্চায়েত এলাকায় প্রকল্পের অন্তর্ভূক্ত চাষিদের গড় ফলন হেক্টর প্রতি ৩.৪০ এবং ৩.০২ হেক্টর। অন্য দিকে, প্রকল্পের বাইরে অন্যান্য চাষিদের গড় ফলন যথাক্রমে ৩.২০ মেট্রিক এবং ২.৬৪ মেট্রিক টন। মহকুমা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, মন্তেশ্বরের দু’টি পঞ্চায়েত এলাকা থেকে অবশ্য এই প্রকল্পের পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট এখনও পাওয়া যায়নি। তবে এখানকার চাষিরাও এই পদ্ধতিতে চাষ করার সুফল পেয়েছে বলেই তারা জানতে পেরেছেন।
ফলন বাড়ায় খুশি চাষিরাও। বেগপুর পঞ্চায়েত এলাকার চাষি নৌসেদ মালিক বলেন, “ফলন বাড়াতে আমরা বহু সময়ে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি রাসায়নিক সার ব্যবহার করেছি। চাষ চলাকালীন বিশেষজ্ঞেরা জানিয়েছিলেন, প্রয়োজনের তুলনায় বেশি রাসায়নিক সার প্রয়োগ করলে জমির ক্ষতি হয়। তেমনি নিজেদেরও চাষের খরচ বাড়ে। প্রয়োজনীয় পরিমাণে সার ব্যবহার করে ভাল ফলন মেলে, তা প্রমাণিত। মন্তেশ্বরের ধান চাষি ভূদেব ঘোষের কথায়, “গাছের লক্ষণ দেখে অনেক সময়েই আমরা যে প্রতিষেধক ব্যবহার করি, তা যে সবসময়ে ঠিক হয় না, চাষ চলাকালীন কৃষি আধিকারিকেরা তা জানিয়ে দিয়েছেন। চাষ করতে সমস্যা হলে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়ার কথা বলেছেন ওই আধিকারিকেরা। এই ভাবে যখন ভাল ফসল মিলছে, ভবিষ্যতে এই পথেই হাঁটব আমরা।”
কৃষি দফতরের দাবি, প্রকল্পের কাজ চলাকালীন কালনা ১, মন্তেশ্বর, পূর্বস্থলী ১ - ধানের জমিতে সংক্রমণ হয়। রোগ প্রতিরোধ করতে জমিতে ‘হেক্সাকোনাজুল প্রতিষেধক’ ছড়ানো হয়। জেলার সহ-কৃষি অধিকর্তা পার্থ ঘোষ বলেন, “উন্নত জাতের বীজ সরবরাহ, তার সঠিক গুণমান যাচাই করা, চাষ চলাকালীন সঠিক পরিচর্যা এবং সঠিক বীজশোধন প্রক্রিয়াতেই এই সাফল্য। আমাদের আশা, এই পদ্ধতিতেই ফলন বাড়াতে পারবেন চাষিরা।” পার্থবাবুর দাবি, এই পদ্ধতিতে চাষ করে ভাল বীজ উৎপাদন হয়েছে। আগামী দুই মরসুমে তা চাষিদের কাজে লাগবে।” তিনি জানান, ভাল বীজের অভাবে গোড়াতেই ফলনের সম্ভবনা অনেকটা কমে যায়। উল্লেখ্য, ২০১১-১২ আর্থিক বছরেও কৃষি দফতর এই পদ্ধতিতে কালনা ১ এবং মন্তেশ্বর ব্লকে এক হাজার হেক্টর করে জমিতে স্থানীয় চাষিদের নিয়ে ধান চাষ করিয়ে সাফল্য পায়। চলতি বোরো মরসুমেও এই পদ্ধতিতে মহকুমার পাঁচটি জায়গায় ধান চাষের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.