আগের দিনের সংঘর্ষের জেরে কালনা ১ ব্লকের তিনটি রাজনৈতিক সংগঠনের সভা বাতিল করল প্রশাসন। রবিবার সুলতানপুর বাজারে সিপিএমের সভা হওয়ার কথা ছিল। সভায় ভিড় বাড়ানোর উদ্দেশ্যে সিপিএমের তরফে গ্রামে-গঞ্জে প্রচার চালানো হয়। মঙ্গলবার তৃণমূলের একটি পাল্টা সভা হওয়ার কথা ছিল সুলতানপুরেই। সেই সভাটিও বাতিল করা হয়েছে। অন্য দিকে, রবিবারই কালনার আটঘোড়িয়া-সিমলন পঞ্চায়েতের সহজপুর এলাকায় সিপিআইএমএল (লিবারেশন)-এর একটি সভাও বাতিল করে প্রশাসন।
শনিবার সকালে সুলতানপুর বাজারের কাছাকাছি গোপালপুর মোড়ে তৃণমূলের একটি অফিস আগুনে পুড়ে যায়। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই কার্যালয় ও স্থানীয় একটি বাড়ির পাশ থেকে চারটি বোমা উদ্ধার করে। তৃণমূলের কালনা ১ ব্লকের সভাপতি উমাশঙ্কর সিংহ রায় কালনা থানায় লিখিত অভিযোগে জানান, সুলতানপুরে দলীয় সভা উপলক্ষে ওই কার্যালয়ে দলের প্রচুর ব্যানার, ফেস্টুন এবং লিফলেট রাখা ছিল। সিপিএম আশ্রিত দুষ্কৃতীরাই এই ঘটনায় জড়িত। এর জেরে গোপালপুর থেকে প্রায় দশ কিলোমিটার দূরে বুলবুলিতলা বাজারে উত্তেজনা ছড়ায়। কালনা ১ ব্লকের সংখ্যালঘু সেলের সভাপতি সুকুর আলি শেখকে বুলবুলিতলা বাজারে যাওয়ার পথে একদল সিপিএম কর্মী-সমর্থক মারধর করে তার মাথা ফাটিয়ে দেয় বলে অভিযোগ। তাঁকে মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সিপিএম পাল্টা অভিযোগ করে, বুলবুলিতলা বাজারের কাছেই কালনা ১ (দক্ষিণ) লোকাল কমিটির সম্পাদক প্রণব শিকদারের বাড়ি। তৃণমূলের লোকজন সেখানে ঢুকে অত্যাচার চালিয়েছে। প্রণববাবুর ছেলে এবং ভাইপোকেও মারধর করা হয় বলেও দাবি করে সিপিএম। দুই পক্ষের রেষারেষির জেরে বোমাবাজিও হয় বুলবুলিতলায়। র্যাফ নামিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। ঘটনায় জড়িত অভিযোগে শনিবার রাত পর্যন্ত ১০ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। |
সিপিএম সূত্রে জানা গিয়েছে, সুলতানপুরে রবিবারের সভায় বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিল দলের জেলা কমিটির সম্পাদক অমল হালদার, বর্ধমান (পূর্ব) কেন্দ্রের সাংসদ অনুপকুমার সাহা-সহ বেশ কিছু নেতার। পেট্রোল ও ডিজেল-সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বৃদ্ধি, চাষিদের ফসলের দাম না পাওয়া-সভ বিভিন্ন বিষয়ে সেই সভায় আলোচনা হওয়ার কথা ছিল। প্রস্তুতিও প্রায় শেষ পর্যায়ে চলে এসেছিল। কিন্তু শনিবারের ওই সংঘর্ষের পর শেষ মুহূর্তে পুলিশের তরফে সভা বাতিলের সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয় দলকে। সংগঠনের কালনা জোনাল কমিটির সম্পাদক করুণা ভট্টাচার্যের অভিযোগ, “গণতন্ত্রের কণ্ঠরোধ করা হল। একটি ভাঙাঘরের খড়ের চালে নিজেরা আগুন ধরিয়ে আমাদের নামে মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে। তৃণমূল নিজেদের বিশৃঙ্খলার দায় দলের উপর চাপিয়ে পুলিশকে দিয়ে পরিকল্পনা মাফিক সভা বাতিল করিয়েছে।”
শনিবারের সংঘর্ষের জেরে তৃণমূলের মঙ্গলবারের সভাও বাতিল করা হয়েছে। তৃণমূল সূত্রে খবর, এই সভায় মূল বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিল তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা রাজ্যের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প, বস্ত্র এবং ভূমি দফতরের প্রতিমন্ত্রী স্বপন দেবনাথের। সভা করতে না দেওয়ায় সিপিএমের অভিযোগ অস্বীকার করে এ দিন বর্ধমান জেলা তৃণমূল কিষান খেতমজদুর-এর সভাপতি রাজকুমার পাণ্ডের বক্তব্য বলেন, “সিপিএমের প্রণববাবুর মদতেই আমাদের সুকুর আলি শেখকে মারধর করা হয়েছে। প্রশাসন আমাদের সভাও বাতিল করেছে।” যদিও মহকুমা পুলিশের এক আধিকারিকের বক্তব্য, ফের উত্তেজনা হতে পারে, এই আশঙ্কাতে সুলতানপুরের দু’টি সভাই বাতিল করা হয়েছে।
সিপিএমের সভার সঙ্গে সঙ্গে রবিবার সহজপুরে সিপিআইএমএল লিবারেশনের সভাটিও বাতিল করে প্রশাসন। দলের পলিটব্যুরোর সদস্য কার্তিক পালের আসার কথা ছিল সভায়। পুলিশ জানায়, সহজপুর এলাকাটি বুলবুলিতলার কাছেই। তাই বাতিল হয়েছে সিপিআইএমএলের সভাও। |