বেহাল রাস্তা আর খোলা শৌচাগারে বাসস্ট্যান্ড মানেই কার্যত বিভীষিকা হয়ে দাঁড়িয়েছে দুর্গাপুরের বহু মানুষের কাছে। প্রতিদিনের যাতায়াতে দাঁড়ানোর প্রতীক্ষালয়ও নেই। একটা শেড থাকলেও তার তলায় যাত্রীরা পা রাখার জায়গা পান না, বরং রমরমিয়ে সেখানে চলে দোকানপাট। দুর্গাপুর স্টেশনের ঠিক বাইরের এই বাসস্ট্যান্ডে এমন ছবি রোজকার। যাত্রীদের অভিযোগ, বহু দিন ধরেই বাসস্ট্যান্ডের এমন কঙ্কালসার দশা। বারবার আবেদন করা হলেও পরিস্থিতি বদলাতে পুরসভা কোনও পদক্ষেপ করেনি বলে অভিযোগ। ফলে শিল্পশরে আসতে নতুন সাজে সেজে ওঠা মডেল স্টেশন দুর্গাপুরে ট্রেন থেকে নামার পরেই বিড়ম্বনায় পড়তে হয় যাত্রীদের।
স্টেশনের দিকে বাসস্ট্যান্ডের যে অংশ সেখানে মূলত মিনিবাস দাঁড়ায়। সরকারি ও বেসরকারি দূরপাল্লার বিভিন্ন রুটের বাসগুলি দাঁড়ায় বাসস্ট্যান্ডের অন্যদিকে। সবমিলিয়ে চারশো’র বেশি বাস যাতায়াত করে এই বাসস্ট্যান্ডে। এছাড়া শ’খানেক ট্যাক্সি ও কিছু অটোও এই বাসস্ট্যান্ডটি ব্যবহার করে। বর্ধমান ছাড়াও বাঁকুড়া, বীরভূম, পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর এমনকি প্রতিবেশী রাজ্য ঝাড়খণ্ডের কিছু বাসও এই বাসস্ট্যান্ড থেকে ছাড়ে। দূরপাল্লার বাসগুলি যেখানে দাঁড়ায় সেখানে যাত্রীদের ব্যবহারের জন্য কয়েকটি প্ল্যাটফর্ম গড়া হয়েছিল। |
কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়ায় সেগুলির কংক্রিটের ঢালাই উঠে লোহার রড বেরিয়ে গিয়েছে বলে যাত্রীদের অভিযোগ। ফলে রডে লেগে মাঝে মাঝেই আঘাতও পান যাত্রীরা। এছাড়া কোনও প্রতীক্ষালয় না থাকায় বর্ষা বা গরমে বাসের অপেক্ষা করা রীতিমতো কষ্টকর। তবে মিনিবাস ও বড় বাস যেখানে দাঁড়ায় তার মাঝে কিছুটা শেড আছে। কিন্তু সেই শেডের তলা দখল করে রমরমিয়ে চলছে দোকানপাট। এছাড়া পানীয় জলের সমস্যাও রয়েছে। যাত্রীদের অভিযোগ, যেখানে জল নেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে তার আশপাশ অত্যন্ত নোংরা। তাঁরা আরও জানান, নিকাশি এবং শৌচাগারের বালাই নেই বাসস্ট্যন্ডে। এতে যাত্রীদের বিশেষ করে মহিলা যাত্রীদের সমস্যায় পড়তে হয়। নিতান্ত প্রয়োজনে পুরুষদের কেউ কেউ প্রায় খোলা জায়গায় প্রয়োজনীয় শৌচকর্ম সারেন। ফল দুর্গন্ধে যাতায়াত করা আরও মুশকিলের হয়ে যায়। যাত্রীদের আরও অভিযোগ, বাঁকুড়া রোড থেকে যে রাস্তাটি বাসস্ট্যান্ডে ঢুকেছে সেই রাস্তাটিও সারা বছরই খানাখন্দে ভরে থাকে। শহর ও বাইরে থেকে আসা বাসগুলি সেই খন্দ পেরিয়ে কোনওরকমে বাসস্ট্যান্ডে ঢোকে। বর্ষায় খন্দগুলিতে জল জমে পরিস্থিতি আরও বিপজ্জনক হয়ে যায়।
ইস্পাত কলোনির এ-জোনের বাসিন্দা বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর স্তরের ছাত্রী শ্রেয়া মালিক, ঋষিকা বসু’রা প্রতিদিন ট্রেনে বর্ধমান যাতায়াত করেন। তাঁদের কথায়, “বাড়ি থেকে মোটামুটি ঠিকঠাকই আসি। কিন্তু বাসস্ট্যান্ডে ঢোকার মুখে বেহাল রাস্তা আর খোলা শৌচাগারের গন্ধে গা গুলিয়ে যায়।” বাঁকুড়ার সোনামুখির বাসিন্দা শ্রীরূপ গড়াই জানান, বাসস্ট্যান্ড থেকে বেরিয়ে বাস যেখানে বাঁকুড়া রোডে পড়ে সেখানেও খোলা শৌচাগার রয়েছে। তিনি বলেন, “বাস ছাড়ার পরে নাকে রুমাল চেপে কোনও রকমে ওই অংশটুকু পেরিয়ে যাই।” বোলপুরের জিলিপিতলার বাসিন্দা শিবশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিজ্ঞতাও একই। তিনি বলেন, “আর পাঁচটা শহরের তুলনায় ঝকঝকে দুর্গাপুর শহর। স্টেশনটির ভোলও বদলে গিয়েছে। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে দেখছি এই বাসস্ট্যান্ডটির হাল আর বদলাল না। শিল্পশহরের সঙ্গে বড়ই বেমানান।”
দুর্গাপুর স্টেশনের রেলের পাবলিক অ্যাড্রেস সিস্টেমে মুহুর্মুহু ঘোষণা শোনা যায়, মাসে গড়ে প্রায় ৪ লক্ষ ২১ হাজার যাত্রী দুর্গাপুর স্টেশন দিয়ে যাতায়াত করেন। স্টেশনের অন্যদিক দিয়ে ঢোকার একটি পথ আছে। কিন্তু শহরের অতি সামান্য অংশই সেদিকে অবস্থিত। কাজেই রেলের ঘোষণার সামান্য কিছু বাদে অধিকাংশ যাত্রীকেই কোনও না কোনও ভাবে বাসস্ট্যান্ডটি ব্যবহার করতে হয়। তাই অবিলম্বে বাসস্ট্যান্ডটির হাল ফেরানোর দাবি জানিয়েছেন যাত্রীরা। বাসস্ট্যান্ডের বেহাল দশা নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে একমত শহরের মেয়র তথা স্থানীয় বিধায়ক অপূর্ব মুখোপাধ্যায়ও। রেল কর্তৃপক্ষ এবং আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন সংস্থা’র সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। |