সিলামপুরের এক একাদশ শ্রেণির ছাত্রীর ট্রেনের ধাক্কায় মৃত্যুর পরেই পানাগড় পশ্চিম কেবিন সংলগ্ন রেলগেটে নতুন করে উড়ালপুল নির্মাণের দাবি তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ, দিনের অধিকাংশ সময়ে রেল গেট বন্ধ থাকায় তাঁরা ঠিক সময়ে গন্তব্যে পৌঁছতে পারেন না। ফলে অনেক সময়ই প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে বন্ধ রেলগেট উপেক্ষা করে রেললাইন পেরোতে হয়।
কাঁকসা ও গলসি ১ ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকার কয়েক হাজার মানুষ বিভিন্ন প্রয়োজনে এই রেলগেট ব্যবহার করেন। পানাগড়ের ২ নম্বর জাতীয় সড়ক থেকে সিলামপুরগামী রাস্তাটি গিয়েছে রেলগেট হয়ে। রেলগেটের দক্ষিণে রণডিহা, সিলামপুর, ভরতপুর প্রভৃতি গ্রামও রয়েছে। সেখানে রয়েছে হাইস্কুল, ব্যাঙ্ক, সেচ দফতরের কার্যালয়, বাজার। রেলগেটের উত্তরে পানাগড়। সেখানেও ব্লক অফিস, থানা, দমকল দফতর, স্কুল, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, হাসপাতাল রয়েছে। এলাকার সবচেয়ে বড় বাজারও পানাগড়ে। ফলে পেশাগত ও দৈনন্দিন দুই প্রয়োজনেই দু’দিকের মানুষকে রেলগেট পারাপার করে যাতায়াত করতে হয়। বর্ধমান-আসানসোল শাখায় বহু সুপারফাস্ট, এক্সপ্রেস, মেল, প্যাসেঞ্জার ও লোকাল ট্রেন যাতায়াত করে। সারাদিন ধরে মালগাড়িও চলে। ফলে দিনের অধিকাংশ সময় রেলগেট বন্ধ থাকে। যানজটে আটকে নাভিশ্বাস ওঠে বাসিন্দাদের। বাসিন্দাদের অভিযোগ, রেলগেটের দক্ষিণে কোনও অগ্নিকাণ্ড ঘটলে দমকলের গাড়িও আটকে যায় রেলগেটে। |
বাসিন্দাদের অভিযোগ, যখন একসঙ্গে একাধিক ট্রেন বা মালগাড়ি যাতায়াত করে তখন রেলগেট বন্ধ থাকে কখনও কখনও আধঘন্টা পর্যন্ত। ফলে অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় থাকে না। বিশেষ করে সকালে স্কুল, কলেজ, অফিসের নিত্যযাত্রী ও পড়ুয়াদের ভিড়ের সময়ে রেলগেট বন্ধ থাকায় সবাই এসে আটকে যান রেল লাইনের দু’দিকে। পথচারী, সাইকেল, রিক্সা, মোটরবাইক, গাড়ি, লরি আটকে থাকে সব। ব্যস্ত সময়ে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পরেও রেলগেট না খোলায় কেউ কেউ বিশেষত স্কুল পড়ুয়া, শিক্ষক ও অফিসযাত্রীরা ঝুঁকি নিয়ে রেললাইন পার হয়ে যান। বিপদ ডেকে আনেন অনেকে। যেমন সিলামপুরের বাসিন্দা কাঁকসা হাইস্কুলের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী সুমনা সিংহ (১৭) ১২ জানুয়ারি সকালে আরও চার সহপাঠীর সঙ্গে পানাগড়ে প্রাইভেট টিউশন পড়তে যাচ্ছিল। বেশ কিছুক্ষণ ধরে রেলগেট পড়ে থাকায় লাইন পেরোতে পারছিল না তারা। কিন্তু টিউশনের তাড়া থাকায় শেষ পর্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে রেললাইন পেরোনোর সিদ্ধান্ত নেয় তারা। বাকিরা পেরিয়ে গেলেও কুয়াশার মধ্যে ছুটে আসা হাওড়াগামী অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস দেখতে পায়নি সুমনা। ট্রেনের ধাক্কাতেই জীবন শেষ হয় তাঁর।
এলাকার বাসিন্দা প্রাক্তন বিধায়ক সুরেশ আঁকুড়ে জানান, আমলাজোড়া পঞ্চায়েত এবং গলসি ১ ব্লকের বেশ কিছু অংশের মানুষ এই রেলগেটের জন্য নাকাল হন। তিনি বলেন, “উড়ালপুল নির্মাণ হলে গুরুত্বপূর্ণ এই রাস্তাটি আক্ষরিক অর্থে সচল হবে। উড়ালপুল থাকলে হয়তো একাদশ শ্রেণির ছাত্রীটিকে এভাবে প্রাণ হারাতে হত না।” স্থানীয় বাসিন্দা মনোসিজ মাজি, মুকেশ সিংহ, বিনতা সাউ’রা বলেন, “রেলগেট পেরোনো মানেই বিভীষিকা। দিনের ব্যস্ত সময়ে যানজট লেগেই থাকে। অন্য সময়ও রেলগেট পড়ে থাকায় অপেক্ষা করতে হয় দীর্ঘক্ষণ। হাতে অতিরিক্ত সময় নিয়ে বেরিয়েও গন্তব্যে সঠিক সময়ে যেতে পারি না।” তাঁদের দাবি, দিন দিন ট্রেন ও মালগাড়ির সংখ্যা বাড়ছে। ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল হচ্ছে। একমাত্র উড়ালপুল নির্মাণ করা হলেই এই সমস্যার একমাত্র স্থায়ী সমাধান সম্ভব। বাসিন্দাদের দাবির কথা উর্দ্ধতন দফতরকে জানানোর আশ্বাস দিয়েছে পূর্ব রেলের আসানসোল ডিভিসনের ডিআরএম কার্যালয়। |