কাটা আঙুল থেকে গল গল করে রক্ত পড়ছে। তারস্বরে কাঁদছে শিশুটি। দেড় মাসের ছেলের প্রায় ‘ছিন্ন’ আঙুলের সামনে পরিত্রাহী চেঁচাচ্ছেন মা।
তাতে অবশ্য বিশেষ হেলদোল ছিল না চতুর্থ শ্রেণির কর্মীটির। রক্তাক্ত ব্লেড মোছার ফাঁকে আতঙ্কিত মা’কে ধমক দিয়েছিলেন তিনি, “এত চেঁচামেচির কী হয়েছে, কিছুই তো হয়নি!”
শনিবার সকাল। ঘটনাস্থল, আলিপুরদুয়ার মহকুমা হাসপাতাল। দেড় মাসের ওই শিশুর হাতে লাগানো স্যালাইনের ‘চ্যানেল’-এর লিউকোপ্লাস্ট খুলতে চতুর্থ শ্রেণির ওই কর্মী নিয়ে এসেছিলেন নিতান্তই দাড়ি কাটার একটা ব্লেড। আর বাড়ির লোকের ওজর-আপত্তি কানে না তুলে তা দিয়েই কাটতে শুরু করেছিলেন লিউকোপ্লাস্ট। নিমেষে ছোট্ট শিশুটির বাঁ হাতের কড়ে আধনুল কেটে ঝুলতে থাকে। বাড়ির লোকের চিৎকার, চেঁচামেচিকে আমল না দিয়ে এ বার চুপচাপ সরে পড়েন ওই কর্মী। দিনভর তার খোঁজ মেলেনি। চিকিৎসকেরা জানান, আঙুলটা অনেকটা কেটে গিয়েছে। হাড়েও ক্ষত হয়েছে। চারটি সেলাই পড়েছে। দু-দিন না গেলে আঙুলটি স্বাভাবিক হবে কি না বোঝা যাবে না। |
কিন্তু স্যালাইনের নল খুলতে ব্লেড কেন? কেনই বা সে কাজের দায়িত্ব এক জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মীকেই বা দেওয়া হল কেন?
জলপাইগুড়ির মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক স্বপন সরকারেরও একই প্রশ্ন, “নার্সরা থাকতে দেড় মাসের শিশুর স্যালাইন চতুর্থ শ্রেণির কর্মী খুলবেন কেন? নার্সরা ওষুধ, ইঞ্জেকশন দেবেন, স্যালাইন লাগাবেন ও খুলবেন। এটাই তাঁদের কাজ। তা ছাড়া স্যালাইনের চ্যানেলে লিউকোপ্লাস্ট টানলেই খুলে যায়। ব্লেড ব্যবহার করতে হবে কেন?”
সে উত্তর মেলেনি কর্তব্যরত চিকিৎসক বা হালপাতালের সুপার বিজয় বিষ্ণুর কাছে। শিশুটির বাড়ির লোক অভিযোগ জানানোর পরে সুজয়বাবুর নিস্পৃহ প্রতিক্রিয়া, “এটি নিছকই দুর্ঘটনা। তবে ওই কর্মী মেডিক্যাল ব্লেড ব্যবহার করলেই ভাল করতেন। তদন্ত হচ্ছে। দেখা যাক।” তবে, এ দিন বিকেলে সুপারের কাছে এ ব্যাপারে সবিস্তার রিপোর্ট চেয়েছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর। এরপরেই নড়েচড়ে বসে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ৭ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গড়ে ৩১ জানুয়ারির মধ্যে তাদের রিপোর্ট দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। স্বপনবাবু বলেন, “রিপোর্ট হাতে পেলেই ব্যবস্থা নেব।” আলিপুরদুয়ার অভিভাবক মঞ্চের সম্পাদক ল্যারি বসুও বলেন, “ভয়ঙ্কর ঘটনা। স্বাস্থ্য দফতরের সব স্তরে বিষয়টি জানাব।”
ভাটিবাড়ি এলাকার অটোচালক মনোজিৎ দাসের ছেলের থেকে থেকেই শ্বাসকষ্ট। গত রবিবার তাই হাসপাতালে ভর্তি করেছিলেন। তার পরিণতি যে এমন হবে কে জানত? |