স্বাস্থ্য দফতরের চালু করা ফেয়ার প্রাইস শপের বিরোধিতায় আগামী সোমবার রাজ্য জুড়ে প্রায় ৩০ হাজার ওষুধের দোকান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দোকান মালিকদের বৃহত্তম সংগঠন বেঙ্গল কেমিস্টস অ্যান্ড ড্রাগিস্টস অ্যাসোসিয়েশন (বিসিডিএ)। সে দিন রানি রাসমণি রোডে বিক্ষোভ সমাবেশও করবে ওই সংগঠন।
রোগীদের সস্তায় ওষুধ পাওয়া বনাম ওষুধ ব্যবসায়ীদের লাভের অঙ্কে আঘাত রোখার এই লড়াইয়ে সে দিন রাজ্যে প্রায় ১৫ কোটি টাকার ব্যবসা মার খাবে বলে মনে করা হচ্ছে। কিন্তু অন্য বিপদও কম নয়। সে দিন চিকিৎসকরা যে সব ওষুধ লিখবেন, সেগুলি মিলবে কোথায়? সোমবার রাজ্য জুড়ে প্রাণদায়ী ওষুধও যে থাকবে তালা বন্ধ দোকানে! সরকারি হাসপাতাল চত্বরে প্রাইস শপগুলি খোলা থাকবে ঠিকই, কিন্তু গোটা রাজ্যে তার সংখ্যা মাত্রই ৬। রাজ্যের বহু এলাকা থেকে হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অনেক দূরে। এবং সেগুলিতে সব ওষুধ মেলে না। এই সমস্যা সমাধানের কোনও উপায় জানে না স্বাস্থ্য দফতরও।
বিসিডিএ অবশ্য জানাচ্ছে, কিছু দোকান খোলা থাকবে। ২২৪২৮৯৪৪ এবং ২২১০৪৫৩৭, এই দু’টি নম্বরে ফোন করলে বলে দেওয়া হবে কোথায় দোকান খোলা আছে। তবু মানুষকে বিপদে ফেলে ওষুধের দোকানের মতো একটি অত্যাবশ্যক পরিষেবা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত কেন?
জবাবে বিসিডিএ-র সম্পাদক তুষার চক্রবর্তীর পাল্টা প্রশ্ন, “বলা হচ্ছে হাসপাতালে ফেয়ার প্রাইস শপ খোলা হচ্ছে। আমরা কি তবে আনফেয়ার প্রাইস শপ চালাই?” তুষারবাবুর দাবি, “সব সরকারি হাসপাতালের দোকানে একই দামে ওষুধ বিক্রি করা হচ্ছে না। আমরা চাই বাস্তবমুখী একটা ব্যবস্থা চালু করা হোক।” কিন্তু সেই বাস্তবমুখী ব্যবস্থাটি কী, তা অবশ্য খোলসা করে বলেননি তুষারবাবু। দামের তফাত নিয়ে স্বাস্থ্য দফতরের ব্যাখ্যাটি এই রকম, “যে হাসপাতালে রোগী বেশি, ওষুধের বিক্রি বেশি, সেখানে দামে বেশি ছাড় মিলবে এটাই স্বাভাবিক। এসএসকেএম এবং বারাসত হাসপাতালে ওষুধের দামে ছাড়ের হার নিশ্চয়ই সমান
হবে না।”
বিসিডিএ-র অনেক নেতাই জানিয়েছেন, ফেয়ার প্রাইস শপ যে সফল হবে, সেটা সংগঠনের কর্তারা আঁচ করতে পারেননি। খুব একটা আশাবাদী ছিলেন না স্বাস্থ্যকর্তাদেরও অনেকে। মনে করা হয়েছিল, জনৌষধি প্রকল্পের মতো এটিও মুখ থুবড়ে পড়বে। কিন্তু তা হয়নি। উল্টে হাসপাতালগুলির পাশে বেসরকারি দোকানের লাভ কমে যাওয়ায় বিসিডিএ আতঙ্কিত। মুখে অবশ্য তারা দাবি করছে, ফেয়ার প্রাইস শপের পাশাপাশি ক্যানসারের ওষুধ নিয়ে ফাটকাবাজি বন্ধ করা, প্রত্যেক দোকানে ফার্মাসিস্ট রাখার নিয়ম তুলে দেওয়ার জন্যই তাদের এই ধর্মঘট। কিন্তু স্বাস্থ্য দফতর এবং বিসিডিএ সূত্রের খবর, চাপের মুখে পড়েই তারা চায়, পিপিপি (পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ) মডেলে চালু হওয়া দোকানগুলি কোনও ভাবে উঠে যাক।
লাভ কম বলে এত দিন প্রায় কোনও বেসরকারি ওষুধের দোকানই জেনেরিক ওষুধ (যাতে ব্র্যান্ড নাম থাকে না, শুধু ওষুধের রাসায়নিক নামটি লেখা থাকে) রাখত না। জেনেরিক ওষুধের সরকারি দোকানও ছিল না। প্রেসক্রিপশনে জেনেরিক ওষুধের নাম লেখার বিষয়ে উৎসাহিত করা যেত না চিকিৎসকদেরও। অল্প কিছু দোকান দামে ছাড় দিত। মাস আটেক আগে তাদেরও চাপ দিয়ে ছাড় দেওয়া বন্ধ করিয়েছিল বিসিডিএ।
এখন ফেয়ার প্রাইস শপগুলিতে ১৪২টি জেনেরিক ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে। এমনিতেই এগুলির দাম কম, তার সঙ্গে ৪০-৭০% ছাড়ের কারণে, ওষুধ মিলছে অনেক কম দামে। এই ৬টি দোকান ছাড় দিচ্ছে ব্র্যান্ড নামের ওষুধেও। শুধু হাসপাতালের রোগী নন, উপকৃত হচ্ছেন বাইরের রোগীরাও। স্বাস্থ্য দফতর থেকেও নির্দেশ জারি করা হয়েছে, প্রত্যেক সরকারি চিকিৎসককে জেনেরিক ওষুধ লিখতে হবে প্রেসক্রিপশনে। প্রতিযোগিতার মুখে পড়ে বেঙ্গল কেমিস্টস অ্যান্ড ড্রাগিস্টস অ্যাসোসিয়েশনও ঘোষণা করেছে, এ বার থেকে তাদের সংগঠনভুক্ত দোকানও ১৪২ ধরনের জেনেরিক ওষুধ ৩০-৭০% ছাড়ে বিক্রি করবে। বিসিডিএ-র ওই কর্মসূচির বিরোধিতা করেছে ফর্মাসিউটিক্যালস ট্রেডার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন অফ বেঙ্গল। সংগঠনের সহসম্পাদক অলোক দে বলেন, “হাতে গোনা কয়েকটি দোকান খুলে রেখে সমস্যার সমাধান করা সম্ভব বলে আমরা মনে করি না। বিশেষ করে আপৎকালীন অবস্থার রোগীদের চিকিৎসার জন্য ওষুধ পাওয়ার ক্ষেত্রে বড় মাপের সমস্যা দেখা দিতে পারে বলে আমাদের আশঙ্কা।” |