সকালে প্রোটোকলের রীতি মেনে ঠিক হয়েছিল, দেশের প্রাক্তন ক্রিকেট অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে রাষ্ট্রপতির পাশে মঞ্চে বসানো যাবে না। জানতে পেরে রাষ্ট্রপতি নিজেই মঞ্চে ডেকে নিলেন ‘দাদা’কে।
দুপুরে আর একটি অনুষ্ঠানে দেখা গেল, মঞ্চে আসীন রাষ্ট্রপতি থুড়ি স্নেহশীল দাদার কাছটিতে উঠে এসে ফিসফিসিয়ে কথা বলছেন তাঁর সহোদরা। দেশের প্রথম নাগরিকের চোখেমুখে স্নেহের পরশ! প্রোটোকলের প্রশ্ন তখন অবান্তর! |
শনিবার সকাল থেকে দুপুরে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এই দু’টি দৃশ্য! দু’টির পুরোভাগেই প্রণব মুখোপাধ্যয়। প্রথমটির স্থান ব্যারাকপুর রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দ মিশন। রাষ্ট্রপতি আসার ১৫ মিনিট আগেই আশ্রমে চলে আসেন বিশেষ অতিথি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। আমন্ত্রণপত্রে রাষ্ট্রপতি ও রাজ্যপালের সঙ্গে সৌরভেরও নাম ছিল। ঠিক ছিল, দেশের ও রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান, আশ্রমের দু’জন সন্ন্যাসীর সঙ্গে সৌরভও মঞ্চে বসবেন। কিন্তু শুক্রবার রাতেই রাষ্ট্রপতির প্রোটোকল আধিকারিকেরা বাদ সাধেন। তাতে বিব্রত হন আশ্রমের অধ্যক্ষ স্বামী নিত্যানন্দ। কিন্তু প্রোটোকল-কর্তাদের পরামর্শ মতো সস্ত্রীক সৌরভকে দর্শকাসনেই বসানোর ব্যবস্থা হল।
যাকে ঘিরে এই প্রোটোকলের বিধিনিষেধ, সেই রাষ্ট্রপতিই কিন্তু ব্যকরণ ওলটপালট করে দিলেন। সৌরভকে নিয়ে প্রোটোকল-বিতর্কের বিষয়টি এ দিন প্রণববাবুর কানে তোলেন ব্যারাকপুরের প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ তড়িতবরণ তোপদার। তড়িৎবাবুর মুখে সব শুনেই রাষ্ট্রপতি বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করলেন। তাঁর আহ্বানেই সৌরভকে শেষ পর্যন্ত মঞ্চে উঠতে হল। আর তড়িঘড়ি ছুটে আয়োজকেরা মঞ্চে আর একটি বাড়তি চেয়ারের ব্যবস্থা করলেন। গোটা দেশে বাঙালির দুই আইকন রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় ক্রিকেটবীরকে কাছাকাছি দেখে ব্যারাকপুরের জনতার উচ্ছ্বাস
তখন দেখে কে! |
পরের দৃশ্য শিবপুরে বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড সায়েন্স ইউনিভার্সিটির (বেসু) সমাবর্তনে। রাষ্ট্রপতি মঞ্চে বসার সঙ্গে-সঙ্গেই সব বাধা ঠেলে তাঁর কাছে এক মহিলা। ঝুঁকে পড়ে কানে-কানে কী যেন বলে গেলেন। রাষ্ট্রপতির চোখমুখে তখন নরম আভা। দু’চোখে স্মিত হাসির ছাপ। ওই মহিলা স্বাগতা দাস মুখোপাধ্যায়। থাকেন হাওড়াতেই। প্রণববাবুর সহোদরা। ডাকনাম সতী। উত্তরপাড়ার জয়কৃষ্ণ লাইব্রেরির গ্রন্থাগারিক।
প্রোটোকলের গাম্ভীর্য দূরে ঠেলে দাদা-বোনের এই অন্তরঙ্গতাটুকুই ওই অনুষ্ঠানের এক বাড়তি গভীর মুহূর্ত। |