মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিপিএম কর্মীদের উপরে আক্রমণে উৎসাহ দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করল সিপিএম। তাদের আরও অভিযোগ, পঞ্চায়েত ভোটকে মাথায় রেখেই মুখ্যমন্ত্রী এ কাজ করছেন। কলকাতায় সিপিএমের তিন দিনের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকের শেষে শনিবার যে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে, তাতেই মমতাকে দায়ী করা হয়েছে। ওই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় অবশ্য বলেন, “তৃণমূল রাজ্যে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছে।”
দলের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাট বলেন, “সামনে পঞ্চায়েত ভোট। তা মাথায় রেখে এই সরকার আমাদের কর্মীদের উপরে আক্রমণ সংগঠিত করতে উৎসাহ দিচ্ছে।” কারাট সরাসরি মমতার নাম করেননি। কিন্তু বিবৃতিতে বাম কর্মীদের উপরে আক্রমণের জন্য মুখ্যমন্ত্রী ও সরকার উভয়কেই দায়ী করা হয়েছে। কারাটের দাবি, পঞ্চায়েত নির্বাচন অবাধ ও শান্তিপূর্ণ করতে এই ধরনের হিংসাত্মক আক্রমণ বন্ধ করতে হবে।
ভাঙড়ে সিপিএম বিধায়ক রেজ্জাক মোল্লার উপরে হামলার অভিযোগে তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলামকে বৃহস্পতিবার গ্রেফতার করা হয়। তৃণমূল শিবিরের ব্যাখ্যা, মমতা রাজধর্ম পালন করেছেন। সিপিএমের রাজ্য নেতারাও ওই কাজকে ‘ইতিবাচক’ বলেছিলেন। কিন্তু দু’দিনের মধ্যেই দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বাম কর্মীদের উপরে আক্রমণে প্ররোচনা দেওয়ার জন্য মমতাকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করালেন। বৈঠকে কারাট, সীতারাম ইয়েচুরি ছাড়াও সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র উপস্থিত ছিলেন।
তৃণমূলের তরফে মুকুলবাবু অবশ্য বলেন, “বাম আমলে ৫৫ হাজার মানুষ খুন হয়। ২০০৮-এ পঞ্চায়েত ভোটে ১৯ হাজার আসনে বিরোধীরা প্রার্থী দিতে পারেনি। বুদ্ধ-কারাটরা গণতন্ত্রের কণ্ঠরোধ করেছিলেন। তাঁদের মুখে অভিযোগ অর্থহীন।”
সিপিএমের অভিযোগ, ২০১১ সালে মমতা-সরকার ক্ষমতায় আসার পরে প্রাক্তন বিধায়ক প্রদীপ তা-সহ এ পর্যন্ত ৮৫ জন বাম কর্মী রাজ্যে খুন হয়েছেন। আক্রান্ত হয়েছেন রেজ্জাকের মতো প্রবীণ বিধায়কও। কারাটের কথায়, “তৃণমূলকে ক্ষমতায় এনে কী ভুল করেছেন, রাজ্যের মানুষ এখন তা উপলব্ধি করছেন।”
আলিমুদ্দিনের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে যে রিপোর্ট পেশ করা হয়েছে, তাতে বলা হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি বদলাচ্ছে। মানুষ মমতা-সরকারের নানা কাজে বিরক্ত। সিপিএমের জমায়েতেও আগের থেকে ভাল ভিড় হচ্ছে। কারাটের অভিযোগ, কোনও ঘটনা ঘটলেই হাস্যকর ভাবে মুখ্যমন্ত্রী সিপিএমকে দায়ী করছেন। এমনকী, তাঁর নিজের দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে কোনও ঘটনা ঘটলেও বাম কর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে লাগাতার প্রচার চালাবে সিপিএম।
আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি দেশের চার প্রান্ত থেকে দিল্লিমুখী যে জাঠা বেরোবে, কলকাতায় তার নেতৃত্ব দেবেন কারাট নিজে। এ ছাড়া মুম্বই থেকে ইয়েচুরি, কন্যাকুমারী থেকে এস আর পিল্লাই, অমৃতসর থেকে বৃন্দা কারাট জাঠার নেতৃত্ব দেবেন। গরিবদের বাড়ির জন্য জমি, সকলের জন্য খাদ্যের দাবিতে এবং কেন্দ্রীয় সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে এই জাঠার মাধ্যমে প্রচারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিপিএম। |