রাজ্যের প্রাথমিক কৃষি সমবায় সমিতি ‘প্যাক্স’-এর মাধ্যমে চাষিদের থেকে সরাসরি ধান কেনার সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য সরকার। শনিবার রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। এত দিন রাজ্য সরকারের অধীন ‘বেনফেড’, ‘কনফেড’, ‘ইসিএসসি’ এবং কেন্দ্রীয় সরকারের অধীন ‘নাফেড’, ‘এনসিসিএফ’-এর মতো ‘অ্যাপেক্স’-সংস্থার মাধ্যমে ধান কেনা হত। এ বার সেই ব্যবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে। কিন্তু তাতেও এ বছরের চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা যাবে কি না, তা নিয়ে ধন্দ রয়েছে খাদ্য দফতরের একাংশের।
খাদ্য দফতরের এক কর্তা জানান, রাজ্যে যত কৃষি সমবায় সমিতির আছে, তাদের বেশিরভাগই কোনও না কোনও ‘অ্যাপেক্স’ সংস্থার অন্তর্ভুক্ত। এত দিন সহায়ক মূল্য দিয়ে ধান কেনার জন্য ‘অ্যাপেক্স’ সংস্থাগুলিকে টাকা দিত রাজ্য। তারা ‘প্যাক্স’-এর মাধ্যমে টাকা দিয়ে চাষিদের কাছ থেকে ধান কিনত। এ বার সমবায় সমিতিগুলিকে প্রথমে নিজেদের টাকা দিয়েই ধান কিনতে হবে। পরে খাদ্য দফতর সমিতিগুলিকে টাকা শোধ করে দেবে।
কেন এই পরিবর্তন, তার কারণ ব্যাখ্যা করে মহাকরণের এক কর্তা জানান, ধান কেনার জন্য সরকার এখনও প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান করতে পারেনি। তাই সমিতিগুলিকেই সরাসরি ধান কেনার দায়িত্ব দেওয়া হল। তারাই যেহেতু ধান কেনার টাকা প্রথমে মেটাবে, তাই এখনই অর্থের প্রয়োজন পড়বে না সরকারের। ‘অ্যাপেক্স’ সংস্থার মাধ্যমে ধান কিনলে সেই সুবিধা মিলত না। কিন্তু সরকারি সিদ্ধান্তে প্রাথমিক সমবায় সংস্থাগুলির ভবিষ্যতে বিপদে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছে রাজ্য প্রশাসনের একাংশ। তাদের ধারণা, শেষ পর্যন্ত রাজ্য সরকার সমবায় সমিতিগুলিকে টাকা শোধ করতে পারবে কি না, সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
সরকারের এই সিদ্ধান্তের পিছনে অন্য কারণ আছে বলে মনে করে প্রশাসনেরই অন্য একটি অংশ। তাদের বক্তব্য, ভোটের কথা মাথায় রেখে বামফ্রন্ট সরকারের শেষ বছরে মহিলা-পরিচালিত স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মাধ্যমে ধান কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সরাসরি তাদের টাকাও দেয় সরকার। কিন্তু টাকা পেয়েও বেশিরভাগ স্বনির্ভর গোষ্ঠী ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি বলে অভিযোগ ওঠে। নতুন সরকারও পঞ্চায়েত নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে গ্রামীণ এলাকায় কর্মরত কৃষি সমবায় সমিতির মাধ্যমে ধান কেনার সিদ্ধান্ত নিল।
সহায়ক মূল্য দিয়ে ধান কেনার জন্য এ বছর রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগম এবং রাজ্য সমবায় ব্যাঙ্ক থেকে ৮০০ কোটি টাকা ঋণের ব্যবস্থা করেছে রাজ্য সরকার। গত অক্টোবর থেকে চলতি মরসুমের জন্য আনুষ্ঠানিক ভাবে ধান কেনা শুরু হয়েছে। কিন্তু রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, “নিগম বা সমবায় ব্যাঙ্ক কারও কাছ থেকেই এখনও টাকা পাইনি। এই অবস্থায় জেলা খাদ্য নিয়ামকদের নির্দেশ দিয়েছি, চাষিদের কাছ থেকে ধান কিনে আগে জেলার এফসিআইয়ের গুদামগুলি ভর্তি করার ব্যবস্থা করুন।”
এ বছর চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ২২ লক্ষ টন (গতবার ছিল ২০ লক্ষ) ধরা হয়েছে। কিন্তু গত বছর ১৪ জানুয়ারি পর্যন্ত সরকার তিন লক্ষ টনেরও বেশি চাল সংগ্রহ করেছিল। এ বার ওই দিন পর্যন্ত সংগ্রহের পরিমাণ আড়াই লক্ষ টনের মতো। এই পরিস্থিতিতে মন্ত্রীর নির্দেশের পরেও ধান কেনার কাজ কোনও মতে চলছে বলে জানাচ্ছেন খাদ্য দফতরের কর্তারা। তাঁদের আশঙ্কা, এমন চললে রাজ্যে চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না। |