চান রাজ্যপাল
বেসুর পথেই হিংসা-মুক্ত হোক অন্যরাও
ক সময়ে ছাত্র সংঘর্ষ, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে জর্জরিত বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড সায়েন্স ইউনিভার্সিটি (বেসু) যে ভাবে নিজেদের ভাবমূর্তি বদলে ফেলেছে, তা থেকে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলির শিক্ষা নেওয়া উচিত বলে মনে করেন আচার্য রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন। শনিবার বেসু-র সমাবর্তনে এই মত জানান তিনি। আর রাজ্যপালের মতের সূত্র ধরেই প্রশ্ন উঠল, বেসু পারলে অন্যদের বাধা কোথায়। কেন তারা হিংসা-হানাহানি আর দলীয় রাজনীতির আঁতুড়ঘর হয়েই থাকবে?
বছর চারেক আগেও ঘন ঘন ছাত্র সংঘর্ষের জেরে সংবাদপত্রের শিরোনাম হত বেসু। অনেক সময় বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দিয়ে হস্টেল খালি করে ক্যাম্পাসে পুলিশি পাহারাও বসাতে হয়েছে কর্তৃপক্ষকে। এতে কখনও পিছিয়েছে পরীক্ষা, কখনও ফলপ্রকাশ। প্রভাব পড়েছে ক্যাম্পাস ইন্টারভিউয়ের উপরেও। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে একের পর এক গোলমালের জেরে বেসুর জাতীয় প্রতিষ্ঠানে (যার পোশাকি নাম ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ারিং, সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি অথবা আইআইইএসটি) উন্নীত হওয়ার প্রক্রিয়া আটকে যায়। যদিও নানা কারণে এখনও জাতীয় প্রতিষ্ঠান হয়ে ওঠেনি বেসু।
বেসুর সমাবর্তনে রাজ্যপাল ও রাষ্ট্রপতি। শনিবার। —নিজস্ব চিত্র
আগের উপাচার্যের কার্যকাল শেষ হওয়ার পরে ২০০৯-এর মার্চে উপাচার্যের দায়িত্ব নেন আইআইটি-খড়্গপুরের শিক্ষক অজয় রায়। তার পরে মাঝে মধ্যে কিছু গণ্ডগোল, র্যাগিংয়ের অভিযোগ উঠলেও সেগুলি বড় আকার নেয়নি। শনিবার আচার্য বলেন, “ছাত্র বিক্ষোভ, অশান্তি, নিত্য রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে জর্জরিত একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আধুনিক, প্রাণবন্ত একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত হয়েছে বেসু।” এই প্রতিষ্ঠানকে দেখে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখা উচিত বলে তিনি মন্তব্য করেন।
কিন্তু কী ভাবে শান্তি ফিরল বেসুতে? রাজ্যের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে হিংসা হানাহানি সব চেয়ে বেশি হয় ছাত্র সংসদের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে। বেসু-কর্তৃপক্ষ সেই মূলেই আঘাত করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, ছাত্র সংসদ নির্বাচন এড়িয়ে চলেছেন কর্তৃপক্ষ। বাইরে থেকে রাজনীতির অনুপ্রবেশ না ঘটালে ছাত্রছাত্রীরাও যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শান্তির পরিবেশ গড়ে তুলতে সাহায্য করেন, বেসুতে সে কথাই প্রমাণিত হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের এক কর্তা বলেন, “এখানে ছাত্রছাত্রীরাও ছাত্র সংসদ নির্বাচনের জন্য জেদ করেনি। ওরা বুঝেছে, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে উত্তেজনা তৈরি হয়, তাতে পড়াশোনার ক্ষতি।” সেই জায়গায় ফটোগ্রাফি, সঙ্গীত, নাটক ইত্যাদি গঠনমূলক কাজে যুক্ত করা হয়েছে পড়ুয়াদের। ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ গড়তে শীর্ষকর্তারা হাজির হয়েছেন হস্টেলে।
রেজিস্ট্রার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ছাত্রদের কাছে সহজ ভাবে পৌঁছনো, তাদের অভিযোগ শোনা, গঠনমূলক কাজে উৎসাহ দেওয়া এ সবই বিশ্ববিদ্যালয়ে শান্তি ফেরাতে সাহায্য করেছে। উপাচার্যের উদ্যোগেই এই পরিবর্তন সম্ভব হয়েছে।” উপাচার্য অবশ্য একা কৃতিত্ব নিতে রাজি নন। তিনি বলেন, “আমার একার পক্ষে তো কিছু করা সম্ভব নয়। সকলের সহযোগিতাতেই ক্যাম্পাসে শান্তি ফিরেছে।”
অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় পারছে না কেন? কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাস বলেন, “বেসুতে যে সংঘর্ষের ঘটনা কমেছে, সেটা প্রশংসনীয়। কিন্তু কলকাতার সঙ্গে বেসু-র চরিত্রগত পার্থক্য আছে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাতটি ক্যাম্পাস, ১৭১টি অধীনস্থ কলেজ। দুই জায়গার পড়ুয়াদের মধ্যেও ফারাক আছে। বেসু যেটা সহজেই করতে পেরেছে, কলকাতায় তা করা কঠিন।” তবে ছাত্র সংসদ নির্বাচন বন্ধের কোনও পরিকল্পনা বিশ্ববিদ্যালয়ের নেই। উপাচার্য বলেন, “ছোটখাটো গোলমাল হলেও কলকাতায় তো বেসুর মতো ছাত্র সংঘর্ষ গত ৮-১০ বছরে কখনও হয়নি!”
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শৌভিক ভট্টাচার্য বলেন, “বেসুতে একটা অসাধারণ রূপান্তর হয়েছে, তা অস্বীকারের উপায় নেই। আমরাও যাদবপুরের ছেলেমেয়েদের গঠনমূলক দিকটিকে কাজে লাগিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ উন্নত করতে চাই। তবে বেসু-তে যেমন সিংহ ভাগ ছেলেমেয়ে হস্টেলে থাকে, যাদবপুরে তো তা নয়। তাই এখানে এ ধরনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সমস্যা আছে।” তবে ছাত্র সংসদ নির্বাচন বন্ধের ব্যাপারে কোনও কথা তিনি বলতে চাননি। প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মালবিকা সরকার জানান, ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে যোগসূত্র ও নির্ভরশীলতা গড়ে তোলা গিয়েছে বলে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-বিক্ষোভের ঘটনা কমেছে। প্রেসিডেন্সিতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন আপাতত বন্ধ আছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.