|
|
|
|
|
|
|
একটা[ভয়]কষ্টলজ্জাঘেন্না |
সঞ্চারী মুখোপাধ্যায়
|
সেকী অবস্থা, গলা শুকিয়ে কাঠ। সামান্য রক্তপরীক্ষায় এত ফলাফলের ভয়? যে কোনও টেস্ট রিপোর্ট পাওয়ার আগে ভয় একটু থাকেই। কিন্তু সে আর এমন কী! কোনও না কোনও কাউন্ট একটু কমবেশি থাকবে। ওষুধ খেতে হবে। আলট্রাসাউন্ড হলে পেটকাটার একটু ভয় থাকে। যদি কোনও স্টোন, বা টিউমার গোছের কিছু পায় খুব বেশি হলে এই।
কিন্তু এ বারটা যেন বিভিন্ন রক্তপরীক্ষার বেশি বাড়াবাড়ি। একটা ছোট্ট অপারেশন হবে, তার জন্য ‘এলাইজা’ টেস্ট করতে হবে কেন? এলাইজা টেস্ট মানে তো এইচ আই ভি পজিটিভ কি না দেখবে। কিন্তু সে টেস্টটা আমার কেন হবে? আমি তো ‘ক্লিন’, মানে যৌন ভাবে ‘সেফ’। মানে আমার তো যৌনতার ঝুঁকিওলা-অভ্যাস নেই। তা হলে আমার হবে কেন? তা হলে কি ইঞ্জেকশন? শুনেছি ইঞ্জেকশন-সিরিঞ্জ থেকে এড্স হয়। ইস্স্! অন্যের দোষে আমার এড্স হয়ে গেল? আমি কার কী ক্ষতি করেছি যে এত তাড়াতাড়ি আমায় পৃথিবী ছেড়ে যেতে হবে? অবশ্য না না, তা কী করে হবে? আমি তো যত বার ব্লাড দিয়েছি তত বার ফ্রেশ সিরিঞ্জ দিয়ে ব্লাড টেনেছে। কিন্তু কী করে জানছি যে ওটা ফ্রেশ ছিল? কত জনের তো এ ভাবেই হয়েছে। এমনকী আর্থার অ্যাশেরও হয়েছে। আচ্ছা, এ-ও তো হতে পারে, এটা একটা রুটিন টেস্ট এখন। ঠিকই, আমি খামখা ভয় পাচ্ছি। কোনও যুক্তিই নেই।
কিন্তু তা-ই যদি হবে,আমার যদি না হওয়ার সম্ভাবনাই থাকবে, তা হলে ডাক্তার শুধু শুধু কেন এই টেস্টটা করাতে বলবেন? নিশ্চয়ই কোনও কিছু থেকে ওঁর মনে হয়েছে। কোনও ব্লাড কাউন্ট থেকে, হ্যাঁ, হতেই হবে, না হলেএমনি এমনি কেউ এই টেস্ট করতে দেয় নাকি? হা ঈশ্বর, আমারই কি হতে হল? আমি কার কী ক্ষতি করেছিলাম?
তিন দিন ঘুম নেই। গলায় ঠেলে কান্না উঠে আসে। এক বার নিজেকে ‘দূর ভীতু’ বলে দাবড়াই, এক বার ভাবি, ‘আনন্দ’ সিনেমার মতো দাপিয়ে বেঁচে নেব বাকি দিনগুলো?
এ বার সেই দিনটা। সকালে উঠেই মনে পড়ে গেছে। বারান্দায় দাঁড়িয়ে ভাবছি, আচ্ছা, আমি না থাকলেও তো পৃথিবী এমনই থাকবে, গরম বা বসন্ত কাল আসবে, গাড়ির ধোঁয়া থাকবে, মানুষ, হইহই। খালি আমি থাকব না। আমার এত কিছু করার ছিল। যাকগে, কী আর হবে। ভয়কে যেন সে দিন একটু জয় করেই নিজের রিপোর্ট নিজে আনতে গেলাম। ক্লিনিকে ঢোকার মুখে একটা দোকানের আয়নায় বিনুনি করা চুল দেখে মনে হল, এর আর মেয়াদ কত দিন?
বুকের মধ্যে হাতুড়ি পিটছে, সত্যিই শুনতে পাচ্ছি না কিছু। কোনও মতে কাউন্টারে বিলটা দিলাম। এ বার অপেক্ষা! আমার ঝলমলে জীবনের কিংবা ধূসর জীবনের। আমার সামনেই অনেকে রক্ত পরীক্ষা করাচ্ছে। মনে মনে ভাবছি, আচ্ছা, এই লম্বা লোকটার কি এড্স হয়ে যেতে পারে? ওই মোটা মহিলার? তত ক্ষণে ধরেই নিয়েছি, আমার রিপোর্ট খারাপ হবেই। আমি ফেল।
হঠাৎই ক্ষীণ আওয়াজ কানে এল, আমার নাম ধরে ডাকা হচ্ছে। যন্ত্রের মতো এগিয়ে গেলাম কাউন্টারের দিকে, নিথর দাঁড়িয়ে থাকলাম রিপোর্ট নিয়ে। শিরদাঁড়া থেকে পা অবধি ভয় যাতায়াত করছে প্রচণ্ড স্পিডে। পা কাঁপছে, একটু গা-ও গুলোচ্ছে। চেপেচুপে, খুব নর্মাল মুখ করে রিপোর্ট খুললাম। আর আমি পাশ। যাক, তা হলে এক্ষুনি মারা যাচ্ছি না? |
|
|
|
|
|