সন্ধে সাড়ে ছ’টা।
হরমু বাইপাসে তিল ধারণের জায়গা নেই। শয়ে শয়ে উড়ছে জাতীয় পতাকা। নাচছে অসংখ্য তরুণ। অন্ধকার চিরে দিচ্ছে মুহুর্মুহু ক্যামেরার ফ্ল্যাশ। আর দূর থেকে দেখা যাচ্ছে ‘ইন্দ্রপ্রস্থ’।
বিশ্বকাপের স্মৃতি যেন বারবার ফিরে আসছিল। ইন্দ্রপ্রস্থের গৃহকর্তার হাত ধরেই সে দিন লঙ্কাবধ করেছিল টিম ইন্ডিয়া। উইনিং স্ট্রোক এসেছিল তাঁর ব্যাট থেকেই। শনিবার রাঁচির প্রথম ওয়ান ডে-তে ইংরেজ নিধনেও ফিনিশিং টাচটা তিনিই দিলেন। মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। ভারত অধিনায়ক, রাঁচির ঘরের ছেলেও।
তবুও তাঁর শহরের প্রাপ্তির ঝুলির অনেকটা খালিই থেকে গেল। ইংল্যন্ড ১৫৫ অলআউট হয়ে যাওয়ায় পাঁচে নেমে ধোনি যে বড় রান করার সুযোগ পাবেন না, জানাই ছিল। বিরাট কোহলি ফর্মে ফেরায় ধোনির সুযোগ আরও কমে গিয়েছিল। আক্ষেপ তো শুধু তাঁর শহরের নয়, মাহির নিজেরও। ঘরের মাঠে বেশি বা্যট করতে পারলাম নাপুরস্কার বিতরণী মঞ্চেই আক্ষেপ করলেন ধোনি। আর তাঁর শহরের হতাশার ধ্বনি স্টেডিয়াম থেকে ইন্দ্রপ্রস্থসর্বত্রই।
ধোনির বাড়ির সামনে জাতীয় পতাকা নিয়ে নাচতে নাচতেই ধোনি-ভক্তের হাহাকার, “সবই হল। ভারত জিতল। কিন্তু শুধু উইনিং স্ট্রোক দেখে কি আর মন ভরে? ধোনির বড় ইনিংস দেখার আশা ছিল। ইংল্যান্ড কম রানে আউট হয়েই সব ভেস্তে দিল।” বুধবার বিয়ে করা অতীশ ভট্টাচার্যের বাড়িতেও এ দিন সকাল থেকে টিভির সামনে ভিড়। নতুন বিয়ের আনন্দ ছাপিয়ে কোথাও যেন জমা হয়েছে হতাশার বাষ্প। না হলে তিনি কেন বলবেন, “এ রকম পাগলামি কলকাতায় দেখেছি। সৌরভ খারাপ খেললে গোটা শহরের মন খারাপ হয়ে যেত। ধোনির ব্যাটিং দেখতে পেলাম না বলে আমাদেরও আজ মন খারাপ।”
মাত্র একটা ম্যাচ একটা শহরের চেহারা কতটা বদলে দিতে পারে, রাঁচি যেন তার জলজ্যান্ত প্রমাণ। শনিবার ছিল দুপুর বারোটার ম্যাচ। অথচ শহরে যেন অঘোষিত কার্ফু সকাল ন’টা থেকেই! যে সব জায়গায় যানজট খুব পরিচিত দৃশ্য, সেই জায়গাগুলোই প্রায় খাঁ-খাঁ করছে। সরকারি অফিসের একাধিক দফতরে বেশির ভাগ কর্মী অনুপস্থিত। আদালত চত্ত্বর যেন ফাঁকা মাঠ। যাঁরা টিকিট পেয়েছেন, তাঁরা সকাল সকাল ছুটেছেন মাঠে। যাঁরা টিকিট পাননি, তাঁরাই বা টিভি-র সামনে থেকে নড়তে পারছেন কই?
বড় ইনিংস না হোক, ঘরের মাঠে তিনটে ভালো ক্যাচ নিয়েছেন ধোনি। জয়ের শট তো আছেই। আর রাঁচির কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, ঘরের ছেলের নেতৃত্বেই ভারত কুকবাহিনীকে সকাল থেকেই খাঁচায় পুরে দিয়েছে। সিরিজের মাঝপথে এসে ধোনির প্রাপ্তির ঝুলি ক্রমশ ভরছে। আর তাঁর শহরের প্রাপ্তির খাতাই বা একেবারে শূন্য কোথায় থাকল? |