ট্রেভর জেমস মর্গ্যানের স্বপ্নকুটিরে চাবি লাগিয়ে সোজা ড্রেসিংরুমের তালা খুলে ভিতরে ঢুকে পড়লেন তিনি। নির্বিঘ্নে। নিস্তব্ধে। চেয়ারে বসে একটা সুখটান। তার পরেই সুভাষ ভৌমিকের উক্তি, “একটা দলকে তো ঘাড় থেকে নামানো গেল।”
শনিবার যুবভারতীতে সুভাষের ‘দাদাগিরি’র সামনে ধূলিসাৎ হয়ে গেল ট্রেভর জেমস মর্গ্যানের সাহেবিয়ানার রোয়াবি জেদ। যা পরিস্থিতি, তাতে ইস্টবেঙ্গলের আই লিগ জেতা তো দূরের কথা, চার্চিলের কাছে ০-৩ গোলে হেরে এখন ‘সেকেন্ড বয়ের’ গদিটাও নড়বড় করতে শুরু করে দিল। আর সুভাষের চার্চিল? বড় কোনও অঘটন না ঘটলে, আই লিগ জেতা এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। চার্চিল কোচ অবশ্য এত তাড়াতাড়ি বিজয়োল্লাস করতে চাইছেন না। ম্যাচের পরে বেটো-বিলালরা বেঞ্চ বাজিয়ে, জয়ধ্বনি দিয়ে যুবভারতী মাতিয়ে তুললেও, সুভাষ কিন্তু নির্বিকার। বললেন, “দিল্লি এখনও অনেক দূরে। এ রকম ২০০৪ সালেও এগিয়ে ছিলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জিততে পারিনি। আই লিগে ভবিষ্যদ্বাণী হয় না। যতক্ষণ না ট্রফি হাতে পাচ্ছি, ততক্ষণ লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।”
১৭ নভেম্বর মারগাওয়ে যে দলের কাছে ০-৩ গোলে হেরেছিল চার্চিল, সেই ইস্টবেঙ্গলকেই তাদের ঘরের মাঠে ০-৩ হারাল বেটোরা। উলটে দেখুন, পালটে গিয়েছে। মাত্র দু’মাসে সুভাষ এমন কী আমদানি করলেন তাঁর দলে? চার্চিল কোচ বললেন, “তিনটে জায়গায় তিনটে ফুটবলার রেখেছিলাম। ডিফেন্সে বিলাল। মাঝমাঠে বেটো। ফরোয়ার্ডে হেনরি। এরাই গোটা ম্যাচের ভাগ্য ঠিক করে দিল। সে দিন পারেনি। আজ দেখিয়ে দিল।” |
বেটো অবশ্য ইস্টবেঙ্গল-বধের কৃতিত্ব দলের সব ফুটবলারের সঙ্গে ভাগ করে নিলেন। টিম বাসে ওঠার আগে বলে গেলেন, “এই জয় এক জনের নয়। সবার। আমরা সবাই পরিশ্রম করেছি বলেই তো এখানে আছি। আমি এখন আমার ফুটবল জীবনের সেরা সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি।”
শনিবারের হাইভোল্টেজ ম্যাচে খেলতে নামার আগে বেটোদের টেনশন মুক্ত করতে তিনটে অমূল্য মন্ত্র দিয়েছিলেন সুভাষ।
এক) শুরু থেকেই ম্যাচটা উপভোগ করতে হবে। আমাদের হারানোর কিছু নেই।
দুই) যতটা সম্ভব বল মাটিতে রেখে পাসিং ফুটবল খেলার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। এবং
তিন) রেজাল্ট যাই হোক না কেন, মনে রাখতে হবে গোয়ায় তিন গোলে হেরেও আমরা শীর্ষেই আছি। বেটো বলছিলেন, “আমাদের সাফল্যের পিছনে কোচের প্রচুর অবদান আছে। সবার সঙ্গে একেবারে বন্ধুর মতো করে মিশছেন।”
শিলিগুড়িতে ফেডারেশন কাপ ফাইনালের তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে শনিবার যুবভারতীতে কানে তুলো গুঁজে মাঠে নেমেছিলেন সুভাষ। যাতে গ্যালারি থেকে অশ্রাব্য গালাগালির বর্ষণ হলেও, সেটা এড়িয়ে যেতে পারেন তিনি। এবং এড়ালেনও। মজার ব্যাপার হল, মাঠে যাঁরা সুভাষকে খলনায়ক বানালেন, সেই ফুটবলপ্রেমীরাই ম্যাচের পরে মাথায় তুলে নিলেন নিউআলিপুরের বাসিন্দাকে। অভিমানী সুভাষ অবশ্য বললেন, “বাংলা আমাকে কিছুই দেয়নি। উলটে আমি বাংলাকে দিয়েছি। কোনও দিন কোনও পুরস্কারের জন্যই ডাকেনি।” হাজার ক্ষোভ-অভিমান থাকলেও ইস্টবেঙ্গলকে নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি ঘরের ছেলে সুভাষ। তবে তিনি না করলেও তাঁর গোলকিপার সন্দীপ নন্দী কিন্তু বিস্ফোরণ ঘটালেন। টিম বাসে বসেই প্রাক্তন লাল-হলুদ গোলকিপার বললেন, ‘‘ইস্টবেঙ্গল ক্লাব আমাকে তাড়ায়নি। আমাকে তাড়িয়েছে ক্লাবের ফুটবল-বোদ্ধা সচিব।” দশ বছর আগে দুই বাঙালির হাত ধরে শেষ বার জাতীয় লিগ ঢুকেছিল বাংলায়। শনিবার সেই সুভাষ ভৌমিক ও সন্দীপ নন্দীর হাতেই স্বপ্নভঙ্গ হল ইস্টবেঙ্গলের। স্বপ্নভঙ্গ হল বাংলার। |