|
|
|
|
আর্থিক প্রস্তাবেও গরিব-স্বার্থের কথা |
সংস্কারে ধীরে চলো, লক্ষ্য এখন আমআদমি |
শঙ্খদীপ দাস • জয়পুর |
সংস্কারে আপত্তি নেই, কিন্তু লোকসভা ভোটের আগে আপাতত তাতে কিছুটা রাশ টেনে আরও বেশি করে গরিব ও মধ্যবিত্তের স্বার্থ সুরক্ষার কথা তুলে ধরতে চাইছে কংগ্রেস। দু’দিন ধরে চিন্তন শিবিরে আলোচনার পর কাল সর্বভারতীয় কংগ্রেসের অধিবেশনে এই মর্মেই অর্থনৈতিক প্রস্তাব গ্রহণ করতে চলেছেন কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব।
গরিব ও মধ্যবিত্তের জন্য আর্থিক সুরাহার ব্যাপারে চিন্তন বৈঠকে যে দাবি উঠবে, সে ব্যাপারে এক রকম নিশ্চিতই ছিলেন কংগ্রেস নেতারা। এবং গত দু’দিন ধরে কার্যত সেটাই হয়েছে। দলের সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতার বক্তব্য, আন্তর্জাতিক মন্দার বাতাবরণে সরকার যে এক প্রকার বাধ্য হয়েই কঠিন অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা তাঁরা বুঝতে পারছেন। কিন্তু একই সঙ্গে এ-ও ঠিক যে, সেই সব কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার ফলে গরিব ও মধ্যবিত্তদের মধ্যে বিপুল ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। কেন সংস্কার, সে কথা এই আম-আদমিকে বোঝানো সম্ভব নয়। ফলে তাঁদের ক্ষোভ প্রশমন করতে হলে সরকারকে আর্থ-সামাজিক সুরক্ষার লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট কিছু পদক্ষেপ করতেই হবে বলে মনে করছেন কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বের একাংশ।
আমজনতার জন্য সুরাহার দাবি তুলে কংগ্রেসের মধ্যে সবথেকে বেশি সরব হয়েছেন কেরলের নেতারা। কেরলের মুখ্যমন্ত্রী উমেন চান্ডি তো চিন্তন বৈঠকে যোগ দিতেই আসেননি। রমেশ চেন্নিথালা বা ভায়ালার রবির মতো যে সব নেতা উপস্থিত ছিলেন, তাঁরা সংস্কার কর্মসূচির বিরুদ্ধে সরব হয়ে সরকারের তীব্র সমালোচনা করেছেন।
লোকসভা ভোটের আগে দলের মধ্যেও ক্ষোভের মুখে পড়ে সংস্কার ও জনমোহিনী নীতির মধ্যে ভারসাম্য রাখার প্রয়োজনীয়তা বোধ করছে কংগ্রেস হাইকম্যান্ডও। সরকার তথা দলের এক শীর্ষ নেতার কথায়, “চিন্তন শিবিরে এ ধরনের দাবি উঠবে আশঙ্কা করে আগাম ব্যবস্থা নিয়েছে সরকারও। যে সব কঠিন আর্থিক সংস্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি ছিল, কেন্দ্র তা ইতিমধ্যেই নিয়ে ফেলেছে।” ওই নেতার ব্যাখ্যা, পেট্রোলের বিনিয়ন্ত্রণ, রান্নার গ্যাসে ভর্তুকি কমানোর মতো কঠিন পদক্ষেপ আগেই করা হয়েছিল। এমনকী ডিজেলের বিনিয়ন্ত্রণের সিদ্ধান্তও কৌশলগত ভাবেই চিন্তন বৈঠকের এক দিন আগে নেওয়া হয়েছে। ফলে এখনই আর নতুন করে খুব বেশি কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন নেই। তা ছাড়া পেনশন বা বিমা বিলের মতো যে সব সংস্কারের কর্মসূচি এখনও বকেয়া রয়েছে, সে ব্যাপারে সংসদের সিলমোহর প্রয়োজন। ওই বিলগুলি সংসদে পাশ ও তার রূপায়ণ হলে গরিব-মধ্যবিত্তের ওপর এখনই নেতিবাচক প্রভাব পড়ারও আশঙ্কা নেই। তা সত্ত্বেও সরকার ভোটের আগে খুব কঠোর কোনও পদক্ষেপ করুক, চান না দলের অনেকেই। কংগ্রেস নেতৃত্বের একাংশের ব্যাখ্যা, বরং কেন্দ্রের সংস্কারের ফলে বাজার চাঙ্গা হতে শুরু করেছে। আর্থিক বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে লোকসভা ভোটের আগে সামাজিক সুরক্ষার জন্য অর্থ বরাদ্দ করার সুযোগ বাড়বে বলেই আশা।
তবে রাজনীতির কারবারিদের মতে, সংস্কার থেকে জনমোহিনী রাজনীতিতে পদক্ষেপের গোটা ব্যাপারটাই সনিয়া-মনমোহন পূর্ব চিত্রনাট্য মেনে করছেন। লোকসভা ভোটের আর চোদ্দ মাস বাকি। তাই আগেভাগে যাবতীয় কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে এখন কৌশলে আম আদমির স্বার্থ সুরক্ষার জন্য সরব হচ্ছে দল।
গরিব ও মধ্যবিত্তের সামাজিক সুরক্ষায় কী কী পদক্ষেপ করতে চলেছে কেন্দ্র?
কংগ্রেস শীর্ষ সূত্রে বলা হচ্ছে, আর্থিক প্রস্তাবের গোড়াতেই খাদ্য সুরক্ষা বিল পাশ ও তার সুষ্ঠু রূপায়ণের কথা বলা হবে। সেই সঙ্গে একশো দিনের কাজে মহিলাদের অগ্রাধিকার দেওয়ার কথাও বলা হবে। অদক্ষ শ্রমিকের পাশাপাশি যাতে দক্ষ শ্রমিকদের জন্য আরও কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ানো যায়, সেই মর্মেও প্রস্তাব থাকবে আর্থিক প্রস্তাবে। দলের এক কেন্দ্রীয় নেতা জানান, গ্রামের গরিব মানুষের সামাজিক সুরক্ষার পাশাপাশি যাতে শহরের গরিবদের কথাও সরকার চিন্তা করে, সে ব্যাপারে গত দু’দিন ধরে কংগ্রেসের বহু নেতা সওয়াল করেছেন। চিন্তন বৈঠকে দলের সেই দাবির প্রেক্ষাপটে শহর এলাকাতেও কর্মসংস্থান প্রকল্প চালু করার প্রস্তাব রাখা হতে পারে অর্থনৈতিক প্রস্তাবে। সেই সঙ্গে ভর্তুকির প্রশ্নে সরকার আরও সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ করার কথা ভাবছে। দারিদ্রসীমার নীচে থাকা জনসংখ্যাকে আরও বেশি সুবিধা দেওয়ার জন্য বিশেষ প্রস্তাব রাখা হতে পারে অর্থনৈতিক প্রস্তাবে।
চিন্তন বৈঠক শুরু হওয়ার ২৪ ঘণ্টা আগেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় সিদ্ধান্ত নিয়ে ভর্তুকিমূল্যে বরাদ্দ সিলিন্ডারের সংখ্যা ৬ থেকে বাড়িয়ে ৯টি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। কিন্তু তাতেও সন্তুষ্ট না হয়ে দলের শীর্ষ নেতাদের একটা বড় অংশ তা আরও বাড়িয়ে ১২টি করার দাবি তুলেছেন গত দু’দিন ধরে। তবে সূত্রের খবর, এ ব্যাপারে অর্থনৈতিক প্রস্তাবে কিছু বলা না হলেও লোকসভা ভোটের আগে এ রকম কোনও ঘোষণার সম্ভাবনাও একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। এ প্রসঙ্গেই একটা কথা মনে করিয়ে দিচ্ছেন কংগ্রেসের কয়েক জন নেতা। ২০০৩ সালে শিমলায় চিন্তন শিবিরে খাদ্য সুরক্ষা বিল নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। পরের বছর লোকসভা ভোটের ইস্তাহারে কংগ্রেস বলেছিল, ক্ষমতায় এলে খাদ্য সুরক্ষা বিল আনা হবে। একটি সূত্রের খবর, খাদ্য সুরক্ষা বিলের আদলে এ বারে আশ্রয়ের নিরাপত্তা বিল নিয়ে কথা থাকতে পারে অর্থনৈতিক প্রস্তাবে। এবং সে ক্ষেত্রে এই বিষয়টি ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের ইস্তাহারে কংগ্রেস রাখতে পারে বলেও জানিয়েছে এই সূত্রটি। |
|
|
|
|
|