রাস্তার মাঝবরাবর সিমেন্টের চওড়া ডিভাইডার। তার উপরে সার দিয়ে লাগানো ফুলগাছ। দু’পাশ দিয়ে হু হু করে চলে যাচ্ছে গাড়ি। ডিভাইডারের ‘কাট’ পর্যন্ত পৌঁছনোর ধৈর্য নেই, তাই কোনও মতে কিছুটা লাফিয়ে, বাকিটা হামাগুড়ি দিয়ে ডিভাইডারের উপরেই উঠে পড়লেন এক মহিলা। কে দেখল, কে কী ভাবল, কোনও কিছু বিবেচনা না করে সেখান দিয়েই ডিভাইডার টপকে পার করে বীরদর্পে রাস্তা পেরিয়ে চলে গেলেন তিনি। কিছু দূরেই পুলিশ নীরব দর্শক হয়ে দাঁড়িয়ে রইল।
কোনও সিনেমার সুপরিকল্পিত দৃশ্য নয়। ভরদুপুরে এমনটাই দেখা গেল শহরে, প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডে। নিরাপদ ভাবে রাস্তা পেরোনোর জন্য ডিভাইডারে কাট ছিল কম করে ৫০ মিটার দূরে। সেই কাট পর্যন্ত পৌঁছনোর ধৈর্য নেই বলেই ওই ভাবে রাস্তা পেরোলেন মহিলা। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ডিভাইডারে দু’টি কাটের মধ্যে দূরত্ব এত বেশি যে, পারাপার করতে তাঁদের অসুবিধা হচ্ছে।
বাসিন্দাদের বক্তব্য, ডিভাইডার যখন তৈরি হচ্ছিল, তখনই তাঁরা সেখানে রাস্তা পারাপারের জন্য জায়গা রাখার আর্জি জানান। কিন্তু তাতে কান দেয়নি পুলিশ। চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের ডিভাইডার নিয়েও এমন অভিযোগ উঠেছে। রাজবল্লভপাড়া থেকে শ্যামবাজার মোড়ে যেতে যে ডিভাইডার পড়ে মণীন্দ্রচন্দ্র কলেজ পর্যন্ত, তাতে তিনটে কাট রয়েছে। তবে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ কী নিয়ে? |
মণীন্দ্রচন্দ্র কলেজের সামনের মেট্রো স্টেশন থেকে শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড়ের দিকের মেট্রো গেট পর্যন্ত কোনও কাট নেই। এর মধ্যে ডিভাইডারের একটি অংশ আছে যা এখনও সম্পূর্ণ তৈরি হয়নি। স্থানীয়দের অভিযোগ, ডিভাইডারের এই কাট-বিহীন নির্মীয়মাণ অংশ নিয়ে। রাজবল্লভপাড়া থেকে কলেজ পর্যন্ত যদি তিনটে কাট থাকে, তা হলে এই বাকি অংশে একটিও কাট থাকবে না কেন, প্রশ্ন তাঁদের। যদিও অনেকেরই মতামত এই যে, রাস্তায় যেখানেই ডিভাইডার তৈরি হবে, সেখানেই যদি ঘনঘন ‘কাট’ রাখার জন্য দাবি করা হয়, তা হলে রাস্তা গতিশীল করার জন্য ডিভাইডার বানানোর উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হবে। একই মত পুলিশেরও।
কিন্তু এই যুক্তি মানতে নারাজ এলাকার বেশির ভাগ মানুষই। তাঁদের বক্তব্য, ওই রাস্তায় ডিভাইডার তৈরি হওয়ার আগে যে লোহার রেলিং ছিল, তাতে রাস্তা পার হওয়ার জন্য জায়গা ছিল। তবে রেলিংয়ের জায়গায় কংক্রিটের ডিভাইডার থাকলে তাতে একই জায়গায় কাট থাকবে না কেন? সুজিত নিয়োগী নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “বিধায়ক শশী পাঁজা যখন পরিদর্শনে এসেছিলেন, তখন তাঁর সঙ্গে পুলিশও ছিল। সব দেখেশুনে গেলেন। কিন্তু ওই পর্যন্তই।” বিধায়কের বক্তব্য, “ডিভাইডার তৈরির অনুমতি পুলিশ দেবে। তবু আমি স্থানীয়দের বলেছি, আমার কাছে লিখিত আবেদন দিলে তা জয়েন্ট সিপি (ট্রাফিক)-র কাছে পাঠিয়ে দেব। কিন্তু তেমন কোনও আবেদন এখনও পাইনি।”
পুরসভার এক আধিকারিক বলেন, “পুলিশের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলেছি। ডিভাইডারে কাট রাখার নির্দেশ ট্রাফিক পুলিশ দেবে। সেই নির্দেশ অনুযায়ী আমাদের কাজ হচ্ছে। তা ছাড়া, ওই ডিভাইডারে অনেক কাট আছে। আরও ‘কাট’ দিতে গেলে রাস্তায় দুর্ঘটনার আশঙ্কা অনেক বাড়বে।”
কলকাতা ট্রাফিক পুলিশের ডেপুটি কমিশনার দিলীপ আদক ডিভাইডারে যত্রতত্র কাটের অনুমতি না দেওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, “ডিভাইডার বানানো হয়েছে যাতে গাড়ির গতি কমে না যায়। জনসাধারণের কথা ভেবে যদি দু’পা অন্তর কাট দেওয়া হয়, তা হলে তো ডিভাইডার বানানোর উদ্দেশ্যই বিফলে যাবে। দুর্ঘটনার সংখ্যাও বাড়বে। তা আটকাতে প্রতিটি কাটে সিগন্যাল বসাতে হবে। সঙ্গে মোতায়েন করতে হবে ট্রাফিক পুলিশকর্মী। যা করা এখন সম্ভব নয়।”
তবে দিলীপবাবু এ কথাও জানিয়েছেন যে, একটু দূরত্বে হলেও অত্যন্ত সুপরিকল্পিত ব্যবস্থায় কাট দেওয়া হয়েছে ডিভাইডারে। সেখান দিয়ে রাস্তা পেরোলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা অত্যন্ত কম। গাড়ির গতিতেও তার কোনও রকম প্রভাব পড়বে না। তাই তিনি শহরবাসীর কাছে নিয়ম মেনে রাস্তা পারাপার করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন এবং এ বিষয়ে সকলের সহযোগিতা চেয়েছেন। |