থেমে থাক শহর, রাজপথের দখল নিয়েছে শাসক দল
নিবারের বারবেলায় থমকে গেল শহরের গতি। স্তব্ধ হল মহানগরের প্রাণকেন্দ্র। সৌজন্যে শাসক দল তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর জনসভা।
এ দিন দুপুর একটা নাগাদ ধর্মতলার মেট্রো চ্যানেলে তৃণমূলের সভার জেরে সপ্তাহের শেষ কাজের দিনেও নাকাল হয়েছেন সাধারণ মানুষ। যাঁরা অফিস সেরে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফেরার কথা ভেবেছিলেন, আশায় জল পড়েছে তাঁদেরও। সাধারণ মানুষ বলছেন, সভা-সমাবেশের জেরে জনজীবন ব্যাহত হওয়ার ঘটনা নতুন নয়। এমনটা দীর্ঘ দিন ধরেই চলে আসছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে শহরের মিটিং-মিছিলের ‘ঐতিহ্যে’ রাশ টানার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তাঁর সভা নিয়েই এ দিন যানজট ছড়ানোয় সেই প্রতিশ্রুতি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। শহরের পথে মিটিং-মিছিল করে জনজীবন ব্যাহত করায় কী লাভ হয়, তা নিয়ে অন্য রাজনৈতিক দলগুলির কাছেও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।
যানজটে থেমে আছে হাওড়া ব্রিজ। শনিবার। —নিজস্ব চিত্র
পুলিশ সূত্রের খবর, শহরে রাষ্ট্রপতি উপস্থিত থাকায় এ দিন সকাল থেকেই বিভিন্ন রাস্তায় যান চলাচলে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়েছিল। সকাল দশটা নাগাদ রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় রাজভবন থেকে বেরিয়ে ব্যারাকপুরের উদ্দেশে রওনা দেন। সেই কারণে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ, বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিটে গাড়ি চলাচল সাময়িক ভাবে বন্ধ করা হয়েছিল।
পুলিশ জানিয়েছে, দুপুর একটার সময়ে ধর্মতলার মেট্রো চ্যানেলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনসভা ছিল। সেই কারণে বেলা এগারোটা থেকেই দলীয় কর্মী-সমর্থকেরা ধর্মতলায় আসতে শুরু করেন। মিছিল যেমন এসেছে, তেমন আবার গাড়ি নিয়েও সভায় হাজির হয়েছেন অনেকে। পুলিশের একাংশের দাবি, ওই সব গাড়ি জওহরলাল নেহরু রোডের ধারে দাঁড়িয়ে যাওয়ার ফলেই যানজট আরও তীব্র আকার নেয়।
মিছিলের কারণে এ দিন মধ্য ও দক্ষিণ কলকাতার বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছিল। চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ ও জওহরলাল নেহরু রোডের একাংশে বাস-সহ বড় গাড়ি ঢুকতে দেওয়া হয়নি। বন্ধ ছিল পুরো মেট্রো চ্যানেল। পুলিশ জানায়, মিছিল ও সভার জন্য গাড়ি চলাচল আটকে যায় এস এন ব্যানার্জি রোড, গভর্নমেন্ট প্লেস (ইস্ট) ও লেনিন সরণিতে। যানজট হয়েছে ক্যাসারিনা অ্যাভিনিউ, রেড রোড, মেয়ো রোডেও। একমুখী করে দেওয়া হয়েছিল রানি রাসমণি অ্যাভিনিউও।
ট্রাফিক পুলিশ সূত্রের খবর, এস এন ব্যানার্জি রোড থেকে বাবুঘাটমুখী গাড়িগুলি রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ের বদলে মেয়ো রোড দিয়ে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে। দক্ষিণ কলকাতা থেকে হাওড়ামুখী গাড়িগুলিকেও মেয়ো রোড দিয়ে ঘোরানো হয়েছে। উত্তর কলকাতা থেকে ধর্মতলামুখী বড় গাড়িগুলি চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ এবং বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিটের সংযোগস্থল থেকে লালবাজারের দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ছোট গাড়িগুলি ঘুরিয়ে দেওয়া হয় চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ থেকে গণেশচন্দ্র অ্যাভিনিউয়ের দিকে।
বিভিন্ন রাস্তায় গাড়ি ঘুরিয়ে দেওয়ার ফলে অনেককেই এ দিন গন্তব্যে পৌঁছনোর আগে মাঝপথে নেমে যেতে হয়েছে। সামান্য দূরত্বে যেতেও লেগেছে প্রচুর সময়। এ দিন বরাহনগরের বাড়ি থেকে চাঁদনি চক যাওয়ার জন্য বেরিয়েছিলেন কিশোর দাস ও মনোজ সিংহ নামে দুই যুবক। কিন্তু বাস ঘুরিয়ে দেওয়ার ফলে বৌবাজারের মুখেই নেমে যেতে হয় তাঁদের। স্ত্রীকে নিয়ে বেহালায় আত্মীয়ের বাড়ি যাচ্ছিলেন লেকটাউনের বাসিন্দা রোহিত সেনগুপ্ত। যানজটে ফেঁসে বহুক্ষণ বসে থাকতে হয়েছে ট্যাক্সিতেই। রোহিত বললেন, “এ ভাবে মিছিল করে সাধারণ মানুষকে হেনস্থা করার কোনও মানে নেই।”
আগে থেকে এই সভার কথা জানা থাকলেও এ দিন যানজট আটকানো গেল না কেন?
লালবাজারের এক কর্তার দাবি, ধর্মতলার মতো জায়গায় মিছিল হলে যানজট হওয়াটা অবশ্যম্ভাবী। সে কারণেই গাড়ি ঘুরিয়ে যানবাহনের গতি সচল রাখার চেষ্টা করা হয়েছিল। তবে মেয়ো রোড এবং লেনিন সরণি ও ওয়েলিংটনে বেশি গাড়ি ঢোকার ফলে যানজট তীব্র হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে হতে সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হয়ে যায় বলে জানিয়েছেন তিনি।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.