সমালোচনায় কি অস্বস্তি, প্রশ্ন মমতার বিষোদগারে
মালোচনার জবাবে আরও চড়া পাল্টা আক্রমণ!
বিরোধী শিবির ও সংবাদমাধ্যমের সমালোচনায় তিনি ও তাঁর সরকার কি বিব্রত? ধর্মতলায় শনিবার সমাবেশ করে সংবাদমাধ্যমের প্রতি মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিষোদ্গার এই প্রশ্নই আরও বেশি উস্কে দিল। যেখানে মমতা বললেন, “সকাল থেকে রাত ওরা মিথ্যা কথা বলছে! সংবাদমাধ্যমের খবরে আপনারা বিশ্বাস করবেন না!”
যা শুনে বিরোধী নেতা-নেত্রীদের প্রশ্ন, জনমানসে সংবাদমাধ্যমের বিশ্বাসযোগ্যতা আছে বলেই কি সমাবেশ করে তাদের বিশ্বাস না-করার ডাক দিতে হচ্ছে মুখ্যমন্ত্রীকে?
বস্তুত, রাজ্যে সিপিএম ও কংগ্রেসের ‘ষড়যন্ত্র ও নৈরাজ্যে’র বিরুদ্ধে এ দিন মেট্রো চ্যানেলে তৃণমূলের সভায় মুখ্যমন্ত্রী ও তাঁর দলের নেতাদের বক্তৃতার সিংহভাগ জুড়েই ছিল সংবাদমাধ্যমের সমালোচনা। মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্টই বলেছেন, “আমি মানুষের সরকার চালাই। কোনও সংবাদমাধ্যমের কথায় সরকার চালাই না!”
মেট্রো চ্যানেলে মুখ্যমন্ত্রী। শনিবার। —নিজস্ব চিত্র
রাজনীতির কারবারিদের একাংশের মতে, সরকার ও শাসক দলের কাজকর্ম নিয়ে পঞ্চায়েত ভোটের আগে বিভিন্ন মহলের সমালোচনায় জনমানসে সরকারের বিরুদ্ধে অসন্তোষ তৈরি হচ্ছে। তাতেই বিড়ম্বনা এবং অস্বস্তি বাড়ছে মুখ্যমন্ত্রীর। আর সে জন্যই এ ভাবে সরকারি বা দলীয়, প্রতিটি কর্মসূচিতে সংবাদমাধ্যমকে তুলোধোনার সুর উচ্চগ্রামে নিয়ে যাচ্ছেন মমতা। কংগ্রেস নেত্রী তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দীপা দাশমুন্সির বক্তব্য, “সংবাদমাধ্যম মানুষের মনোভাবের প্রতিচ্ছবি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রতিবাদী চরিত্র হিসাবে সংবাদমাধ্যমই এক দিন তুলে ধরেছে। এখন তাদেরই সমালোচনা শাসক দল মানসিক ভাবে মেনে নিতে পারছে না!” বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহও মনে করেন, “সংবাদমাধ্যমের কাজই সত্য প্রকাশ করা। তারা সেটাই করছে। তাই ভয় পেয়ে উনি সংবাদমাধ্যমকে গালি দিচ্ছেন!” সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মহম্মদ সেলিমের কথায়, “তৃণমূল নেতৃত্ব কিছুটা আতঙ্কগ্রস্ত। তাঁদের সরকার ১৯ মাসে যে সাফল্যের কথা তুলে ধরছে, তা মানুষ বিশ্বাস করছে না। বরং সংবাদমাধ্যমের সমালোচনাকেই গুরুত্ব দিচ্ছে। এটা বুঝেই মমতা ও তাঁর নেতারা প্রতিটি সভায় নিয়ম করে সমালোচনা করে যাচ্ছেন।”
মমতা তো বটেই, রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়, সাংসদ সৌগত রায়, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ও শুভেন্দু অধিকারী এ দিন আহ্বান জানান, সংবাদমাধ্যম ও বিরোধীদের ‘অপপ্রচারে’ কান না-দেওয়ার জন্য। কয়েক দিন আগেই সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে যে সৌগতবাবু সরব হয়েছিলেন, তিনিও বলেন, “সংবাদপত্রের স্বাধীনতার দোহাই দিয়ে এক শ্রেণির সংবাদমাধ্যম আমাদের ছোট করার চেষ্টা করছে। এদের ক্ষমা করবেন না!”
সংবাদমাধ্যম, বিরোধী শিবির, সামাজিক বা ধর্মীয় সংগঠন এবং বিশিষ্ট জন যাবতীয় মহলের সমালোচনা নস্যাৎ করে ধর্মতলায় এ দিনও মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেছেন, তাঁদের নির্বাচনী ইস্তাহারে দেওয়া প্রতিশ্রুতির ৯৯%-ই শেষ করে ফেলেছেন! তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় স্পষ্ট বলেন, “আমাদের অস্বস্তি বা বিব্রত হওয়ার কিছু নেই।”
তাঁদের ১৯ মাসের সরকারের কাজের সাফল্যের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকারের সার, পেট্রোল, ডিজেল-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে কর্মীদের প্রচার চালাতে বলেছেন মমতা। মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, আর্থিক সঙ্কটের মধ্যেও তাঁরা উন্নয়নের কাজ করে যাচ্ছেন। অথচ কেন্দ্র সহযোগিতা করছে না। করের টাকার আরও বেশি ভাগ আদায় করতে প্রয়োজনে লাল কেল্লা অভিযান করবেন বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। বাম জমানায় রেখে যাওয়া ঋণের বোঝা শোধ করতে সিপিএমের কার্যালয় নিলামে তোলার ডাকও দিয়েছেন! যার পরিপ্রেক্ষিতে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র বলেছেন, “হাস্যকর কথার কী প্রতিক্রিয়া দেব!”
শহরে সমাবেশ হলেও মমতা, সুদীপবাবু, সৌগতবাবুরা গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে জেলা পরিষদ সর্বত্রই জয়ী হওয়ার জন্য কর্মীদের কাছে আবেদন করেছেন। এ দিনই তৃণমূল ভবনে দলের ছাত্র, যুব শাখা সংগঠনের প্রধানদের নিয়ে মুকুলবাবু, দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বৈঠক করেন। পঞ্চায়েত ভোটের প্রচার কৌশল নিয়ে আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে দলের ছাত্র-যুবদের নিয়ে মমতা একটি কর্মশালা করবেন।

সেই মেট্রো চ্যানেলেই সমাবেশ স্বয়ং মমতার
মুখ্যমন্ত্রী হয়েই ধর্মতলার মেট্রো চ্যানেলকে সভামুক্ত করার কথা বলেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর জমানায় ইদানীং মেট্রো চ্যানেলে কোনও দলকেই সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয় না। তার জন্য বাকি রাজনৈতিক দলগুলির ক্ষোভও রয়েছে বিস্তর। অথচ শনিবার বিকালে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীই সভা করলেন মেট্রো চ্যানেলে! যাকে মমতা আখ্যা দিয়েছেন ‘আন্দোলনের ঐতিহাসিক জায়গা’। তৃণমূল নেত্রীর কথায়, “সিঙ্গুরে জমিরক্ষার জন্য এখানেই ২৬ দিন অনশন করেছিলাম। আন্দোলনের একটা স্তম্ভ হওয়া উচিত এখানে!” অন্য দলকে মেট্রো চ্যানেল ব্যবহার করতে না-দিয়ে সেখানে তৃণমূল নেত্রীরই সভা দেখে প্রদেশ কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নানের কটাক্ষ, “দলতন্ত্র ও স্বৈরাচারের সব রেকর্ড উনি ভেঙেছেন!”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.