নিজস্ব সংবাদদাতা • কোচবিহার |
আধিকারিকদের সই জাল করে সাংসদ তহবিলের প্রায় এক কোটি টাকা নয়ছয়ের ঘটনার জেরে তৃণমূল কংগ্রেস প্রভাবিত সরকারি কর্মী সংগঠনের জেলা সম্পাদক সহ দুই কর্মীকে বদলি করল কোচবিহার জেলা প্রশাসন। বৃহস্পতিবার কোচবিহারের জেলাশাসক মোহন গাঁধী দুই কর্মীকে বদলির নির্দেশ দেন।
প্রশাসন সূত্রের খবর, ওই কর্মীদের নাম উত্তম বণিক ও পম্পাশ্রী আচার্য। উত্তমবাবু তৃণমূল প্রভাবিত ইউনাইটেড স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ ফেডারেশনের কোচবিহার জেলা সম্পাদক। তিনি জেলাশাসকের দফতরের এসস্টাবলিস্টমেণ্ট বিভাগের আপার ডিভিসন ক্লার্ক পদে কর্মরত ছিলেন। তাঁকে বৃহস্পতিবার মাথাভাঙা মহকুমা শাসকের দফতরে বদলির নির্দেশ ধরানোর পাশাপাশি রিলিজ অর্ডার দেওয়া হয়। শুক্রবারই উত্তমবাবু কে ওই দায়িত্বে যোগ দেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে আপার ডিভিশন ক্লার্ক পদে কর্মরত পম্পাদেবীকে কোচবিহার সদর মহকুমা শাসকের দফতরে বদলি করা হয়েছে। তিনি জেলাশাসকের দফতরের চিঠি রিসিভ সংক্রান্ত বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন। পম্পাশ্রী দেবী কো-অর্ডিনেশন কমিটি সদস্য হলেও তৃণমূল প্রভাবিত ওই সংগঠনেরও সদস্য পদ নিয়েছিলেন। জেলাশাসক মোহন গাঁধী এ ব্যাপারে কোন মন্তব্য করতে চাননি।
তবে বদলির নির্দেশের পাশাপাশি রিলিজ অর্ডার ধরানোর কথা স্বীকার করেছেন ইউনাইটেড স্টেট গভর্নমেন্ট ফেডারেশনের কোচবিহার জেলা সম্পাদক উত্তম বণিক। উত্তমবাবু বলেন, “মাথাভাঙায় বদলির পাশাপাশি আমাকে এ দিনই রিলিজ অর্ডার দেওয়া হয়। শুক্রবার আমাকে নতুন জায়গায় যোগ দিতে বলা হয়েছে। বদলির ক্ষেত্রে ১০ দিনের ট্রানজিট লিভের সুযোগও দেওয়া হয়নি। তাছাড়া কোন সংগঠনের জেলা সম্পাদককে মহকুমায় বদলিও নিয়মবিরুদ্ধ। পম্পাশ্রী দেবীর সঙ্গে অবশ্য যোগাযোগ করা যায়নি।” তবে কোচবিহার জেলা কো-অর্ডিনেশন কমিটির সভাপতি পুলক বিশ্বাস বলেন, “উনি আমাদের সদস্য। জোর করে তৃণমূলও ওঁকে সদস্য পদ নিতে বাধ্য করেছিল। আমরা অবশ্য জেলাশাসককে বলেছি পম্পাশ্রী নিরপরাধ। ওঁর বিষয়টা সহানুভূতির সঙ্গে দেখা দরকার।” কো-অর্ডিনেশন কমিটির অভিযোগ, ১১ জানুয়ারি রিসিভ সেকশনের দায়িত্বে থাকা পম্পাশ্রী আচার্যের কাছে অন্য লোক মারফত ছুটির দরখাস্ত পাঠান সই জাল করে প্রায় ১ কোটি টাকা নয়ছয়ে অভিযুক্ত প্রদীপ চক্রবর্তী। উর্ধ্বতন কর্তাদের কোনও নির্দেশ না থাকায় তিনি সাধারণ ভাবে ওই দরখাস্ত রিসিভ করেন। পরে ইউনাইটেড স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ ফেডারেশনের জেলা সম্পাদক উত্তম বণিক নিজে গিয়ে ওই দরখাস্ত জমা পড়েছে কি না খোঁজখবর নেন। তার পরে গা ঢাকা দেন প্রদীপবাবু। উত্তমবাবু দুর্নীতিতে অভিযুক্তকে পালাতে সাহায্য করেন বলে প্রশাসনের কর্তাদের কাছে স্পষ্ট হয়। পরে জেলাশাসক পম্পাশ্রী দেবীর সঙ্গে কথাও বলেন। তার পরেই এদিন একই সঙ্গে ওই দুই জনকে বদলির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কো-অর্ডিনেশন কমিটির কোচবিহার জেলা সভাপতি পুলক বিশ্বাস বলেন, “উর্ধ্বতন কর্তার নির্দেশ না থাকায় পম্পাশ্রী দেবী অভিযুক্তের ছুটির দরখাস্ত রিসিভ করেছেন। ওই খবর দিয়ে অভিযুক্তকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করেন উত্তমবাবু। তাই প্রশাসন তাঁকে মাথাভাঙায় বদলি করে ঠিকই করেছে। পম্পাশ্রীর যাতে সমস্যা না হয় তা আমরা জেলাশাসককে দেখার অনুরোধ করেছি। এদিন দুর্নীতির ঘটনায় অভিযুক্তের কড়া শাস্তির দাবিতে সংগঠনের পক্ষ থেকে জেলাশাসকের দফতরে বিক্ষোভ দেখায়।” কো-অর্ডিনেশন কমিটির তোলা ওই সব অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দেন উত্তমবাবু। প্রশাসন সূত্রে খবর, নয়ছয়ে অভিযুক্ত প্রদীপ চক্রবর্তী তৃণমূল প্রভাবিত কর্মী সংগঠনের কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। সাংসদ, জেলাশাসক সহ পদস্থ কর্তাদের সই জাল করে তিনি সাংসদ তহবিলের টাকার ভুয়ো বরাত ও ওয়ার্ক অর্ডার দেখিয়ে চেক সই করিয়ে ১ কোটি টাকা পছন্দের ঠিকাদারদের মাধ্যমে পাইয়ে দেন বলে অভিযোগ। ১১ জানুয়ারি ওই ব্যাপারে থানায় এফআইআর করেন জেলাশাসক। তার কয়েক ঘণ্টা আগেই অভিযুক্ত ছুটির দরখাস্ত দিয়ে পালিয়ে যাওয়ায় তা নিয়েও তদন্ত শুরু করে প্রশাসন। |