নিজস্ব সংবাদদাতা • রায়গঞ্জ |
এবার একশ্রেণির রাজনীতিকদের চাপ সহ্য করতে না-পেরে ইস্তফা দিতে চেয়ে চিঠি দিলেন রায়গঞ্জ ইউনিভার্সিটি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ (টিচার ইনচার্জ) দেবাশিস বিশ্বাস। বুধবার দেবাশিসবাবু উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের হাতে ওই ইস্তফা পত্র তুলে দেন। প্রসঙ্গত, ওই কলেজটি সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন। সেখানে পরিচালন সমিতির বদলে রয়েছে উপদেষ্টা কমিটি। উপাচার্যই তার সভাপতি। ওই ইস্তফার চিঠি দেবাশিসবাবু পারিবারিক কারমে তাঁকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়ার অনুরোধ করেছেন। উপাচার্য বলেছেন, “দেবাশিসবাবুর ইস্তফাপত্র পেয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের আগামী কর্মসমিতির বৈঠকে এই বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত তাঁকে কাজ চালিয়ে যেতে বলা হয়েছে। এর বেশি কিছু বলার নেই।” চিঠিতে পারিবারিক কারণের উল্লেখ করলেও বাস্তবে কলেজের শিক্ষকদের একাংশকে সামনে রেখে নানাভাবে একজন প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা মর্জিমাফিক প্রতিষ্ঠান চালানোর চেষ্টা করছেন বলে কলেজের অন্দরেই অভিযোগ উঠেছে। ভর্তি থেকে শুরু করে, বোর্ড অব স্টাডিজ-এ কে বা কারা থাকবেন, তা নিয়ে ওই নেতার মতামতই প্রাধান্য পাচ্ছে বলে অভিযোগ। একাধিকবার কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও তাঁর সতীর্থদের একাংশ বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ করেও লাভ হয়নি বলে কলেজের কয়েকজন শিক্ষক জানান। |
এমতাবস্থায়, ইস্তফা দিয়ে পদ থেকে সরার কথা ভাবতে দেবাশিসবাবু বাধ্য হয়েছেন বলে শিক্ষকদের একাংশ জানান। দেবাশিসবাবু বলেন, “মূলত, পারিবারিক সমস্যার কারণেই আমি ইস্তফা দিতে চেয়েছি। তবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে আমি সুষ্ঠভাবে কলেজ পরিচালনার চেষ্টা চালালেও রাজনৈতিক স্বার্থে কলেজ নিয়ন্ত্রণ করতে আমার ওপর নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। আমি কারও হাতের পুতুল হতে চাই না। আমার চাপেই শিক্ষকরা নিয়মিত ক্লাস নিতে বাধ্য হতেন। সেই কারণে কেউ কেউ প্রমাণ করতে চাইছিলেন কলেজের পরিবেশ স্বাভাবিক নেই। এমনকী, উপাচার্য যাতে কলেজে না আসেন, তার জন্যও কলেজের অন্দর থেকেই নানা ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। এসব কারণেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে ইস্তফা দেওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেছি।” কলেজের টিচার্স কাউন্সিলের সম্পাদক অশোক দাস অবশ্য দেবাশিসবাবুর অভিযোগ মানতে নারাজ। তিনি বলেন, “কলেজ পরিচালনার ক্ষেত্রে দেবাশিসবাবুকে সমস্ত শিক্ষকই সব রকম সহযোগিতা করেন। তাঁর সঙ্গে কোনও শিক্ষকের বিরোধ রয়েছে বলে আমাদের জানা নেই। তিনি মনগড়া কথা বলছেন।” গত বছরের ৫ জানুয়ারি তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দিলীপ দে সরকারকে নিগ্রহের অভিযোগ ওঠার পর ৮ জানুয়ারি তিনি পদ থেকে ইস্তফা দেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নির্দেশে এরপর ৯ জানুয়ারি কলেজের শিক্ষক শত্রুঘ্নবাবু ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব নেন। কিন্তু গত জুন মাসে শত্রুঘ্নবাবু ও কলেজের শিক্ষাকর্মীদের একাংশ পরস্পর পরস্পরের বিরুদ্ধে থানায় নিগ্রহের অভিযোগ দায়ের করেন। ওই ঘটনার জেরে ২৬ জুলাই শত্রুঘ্নবাবু পদ থেকে ইস্তফা দিলে দেবাশিসবাবুকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কলেজের প্রাক্তন দুই ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দিলীপ দে সরকার ও শত্রুঘ্ন সিংহ জানান, যতটুকু শুনেছি দেবাশিসবাবু পারিবারিক সমস্যার কারণেই ইস্তফা দিতে চেয়েছেন। তবে বার বার অধ্যক্ষ বদলের জেরে কলেজের প্রশাসনিক কাজকর্ম ও সুষ্ঠ পঠনপাঠন কিছুটা হলেও বিঘ্নিত হবে। দেবাশিসবাবুর অনুগামী শিক্ষকদের একাংশের অভিযোগ, কলেজের পরিবেশ স্বাভাবিক নেই প্রমাণ করতে উপাচার্য যাতে কলেজে উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে যোগ দিতে না আসেন তার জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষের একাংশ নানা ভাবে চেষ্টা চালিয়েছিলেন। বুধবার উপাচার্য কলেজে ফ্যাক্স করে জানিয়েও দিয়েছিলেন। তিনি বৈঠকে যোগ দিতে পারবেন না। এর পরে দেবাশিসবাবুর অনুরোধে শেষ পর্যন্ত তিনি কলেজে যান। এই বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি দেবাশিসবাবু। কলেজের ইতিহাস বিভাগের প্রধান শিক্ষক বাবুলাল বালা বলেন, “দিলীপবাবু নিগ্রহ হওয়ার পর থেকে দেবাশিসবাবুর চেষ্টায় ধীরে ধীরে কলেজের শিক্ষার পরিবেশ স্বাভাবিক হয়েছে। সেই কারণে উপাচার্য ছাত্র সংসদ নির্বাচন করার ওপর মত দেন। কলেজের সামগ্রিক উন্নয়ন সহ হস্টেলের রাঁধুনি ও শিক্ষাকর্মীদের নানা সমস্যার সমাধানে দেবাশিসবাবু সচেষ্ট ছিলেন।” কলেজের কর্মচারী সমিতির সহ সম্পাদক তথা তৃণমূল কংগ্রেস নেতা তপন নাগের অভিযোগ, “দেবাশিসবাবু কলেজ পরিচালনার ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়ে পদ থেকে সরে যেতে চাইছেন। রাজনৈতিক চাপের অভিযোগ ভিত্তিহীন।” |