পর্যাপ্ত আলোর অভাব। এই অভাব কোনও রাস্তাঘাট বা পার্কের নয়। সমস্যাটি খোদ রামপুরহাট মহকুমা হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে। আলোর অভাবে গত চার মাস ধরে ফিরে যাচ্ছেন গলব্লাডারের অপারেশন করতে আসা রোগীরা। সমস্যার কথা চিকিৎসক ও নার্সদের তরফে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বলা হলেও স্থায়ী সমাধান হয়নি। ফলে সমস্যা থেকেই গিয়েছে। সমাস্যার সমাধান চেয়ে বৃহস্পতিবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে ফের লিখিত ভাবে জানিয়েছেন অপারেশন থিয়েটারের দায়িত্বে থাকা নার্স।
এ দিকে, সমস্যার সমাধান করার জন্য কোনও ব্যবস্থা নিতে দেখা তো যাচ্ছে না, উল্টে দায়িত্ব এড়িয়ে চলেছেন কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্ত সুপার সুব্রত কর বিষয়টি অ্যসিস্ট্যান্ট সুপারের নজরে আনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন। অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার মধুরিমা গুহ রায় বলেন, “এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট স্টোরকিপারকে বলা হয়েছে।” স্টোরকিপার অন্নদা সরকারকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, “এ ব্যাপারে লিখিত ভাবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।” এই পরিস্থিতিতে ভুগতে হচ্ছে রোগীদের।
বৃহস্পতিবার হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেল, অপারেশন থিয়েটারে চারটি টেবিল আছে। আলো ঝোলানো থাকলেও কয়েকটি বিকল। যে কটা আলো ভাল আছে, তা দিয়ে ছোটখাটো অপারেশন চালিয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। হাসপাতালের এক চিকিৎসকের কথায়, “অপারেশন টেবিলে পর্যাপ্ত আলো না থাকার জন্য বড় অস্ত্রোপচার করা যাচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে ঝোলানো আলোগুলি ঠিক করার প্রয়োজন।” অপারেশন থিয়েটারের দায়িত্বে থাকা নার্স রমা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে ঝোলানো আলোগুলি ঠিক মতো কাজ করছে না। মাঝে মধ্যে ঠিক করা হলেও আবার তা খারাপ হয়ে যাচ্ছে।” এক চিকিৎসক বলেন, “গত চার মাস ধরে এই সমস্যা দেখা দিয়েছে। সুপারকে বলা হলেও স্থায়ী সমাধান হয়নি। রোগীরা এসে ঘুরে যাচ্ছেন।”
এ দিন এমনই এক পরিবারকে দেখা গেল, কাজ না হওয়ায় রোগীকে নিয়ে ফিরে যাচ্ছেন। তাঁর সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, তিনি এই হাসপাতালের কর্মী। চন্দ্রনাথ রজক নামে ওই কর্মী একবার নয়, তিন বার ঘুরে গিয়েছেন। তিনি বলেন, “ভাগ্নির অস্ত্রোপচার করানোর কথা। চিকিৎসকেরা বলছেন, অপারেশন থিয়েটারে পর্যাপ্ত আলো নেই। সে জন্য এখনই অস্ত্রোপচার করা সম্ভব নয়। তাই ঘুরে যাচ্ছি। গরিব মানুষ অন্যত্র যাব কোথায়। এই হাসপাতালের ভরসায় রয়েছি।”
হাসপাতাল সুপার হিমাদ্রি হালদার ছুটিতে আছেন। দায়িত্বে রয়েছেন সুব্রত কর। তিনি বলেন, “আমি কয়েক দিনের জন্য সুপারের দায়িত্ব নিয়েছি। যতদূর জানি অপারেশন থিয়েটারে নতুন করে ওয়ারিং করা দরকার। বিষয়টি অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপারকে বলেছি।” অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার মধুরিমা গুহ রায়ের বক্তব্য, “এ দিনই প্রথম বিষয়টি জানতে পারি। নার্স রমা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন বলার পরে খোঁজ নিই। কাজটি হাসপাতাল থেকে করা হবে, না পূর্ত দফতর থেকে করা হবে তা নিয়ে ধন্দ্বে ছিল। শেষ পর্যন্ত জানা যায়, হাসপাতালের মাধ্যমে মেরামতি করা হবে। হাসপাতালের স্টোরকিপারকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।” এই সময়ের মধ্যে ১০-১৫ জন রোগী ঘুরে গিয়েছেন বলে হাসপাতাল সূত্রে খবর। কিন্তু এই অবস্থায় কত দিন চলবে? তার উত্তর অবশ্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকেও মেলেনি। জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গুরুপদ দাস বলেন, “সমস্যার কথা জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখছি।” |