রোগীদের ওষুধ কেনার জন্য দরপত্র ডেকেছিল পুরসভা। যে সংস্থাকে বরাত দেওয়া হয়েছিল, সেই সংস্থারই পেটি থেকে বেরোল সরকারি সিল মারা ওষুধ। পুরসভার দাবি, বিষয়টিতে দুর্নীতি করা হয়েছে। ওই সংস্থার বিরুদ্ধে কালনা থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন কালনা পুরসভার চেয়ারম্যান দেবপ্রসাদ বাগ। তিনি জানান, ওই অভিযোগের প্রতিলিপি রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরে পাঠানো হয়েছে। কালনা মহকুমার সুপারের কাছেও ওই অভিযোগ জানানো হয়েছে। যদিও ওষুধ সরবরাহকারী বেসরকারি সংস্থাটি অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তাদের পাল্টা দাবি, নিয়ম মেনেই তারা ওষুধ সরবরাহ করেছেন।
পুরসভা সূত্রে খবর, ২০০৪ সাল থেকে কালনা পুরসভার উদ্যোগে চলছে স্বেচ্ছাসেবী স্বাস্থ্যকর্মী প্রকল্প। এই প্রকল্পের মাধ্যমেই পুরসভা থেকে এলাকার বাসিন্দাদের চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া হয়। ওষুধ সরবরাহ করে থাকে। সম্প্রতি ওষুধ কেনার জন্য পুরসভার তরফে একটি দরপত্র আহ্বান করা হয়। ন’ধরনের ট্যাবলেট সরবরাহের জন্য সব থেকে কম দামে ওষুধ দিতে রাজি হয় কলকাতার এজরা স্ট্রিটের একটি সংস্থা। বুধবার পাঁচটি পিচবোর্ডের পেটিতে পুরসভার কাছে ওষুধ পাঠায় সংস্থাটি। সঙ্গে একটি বিলও পাঠানো হয়। সব মিলিয়ে প্রায় ২৪ হাজার টাকা চাওয়া হয়।
বৃহস্পতিবার পুরকর্মীরা একটি পেটি খুলতেই, সেখান থেকে বেরিয়ে পড়ে সরকারি সিল মারা ওষুধ। তার প্যাকেটেও কোনও দাম লেখা ছিল না। |
বিষয়টি প্রকল্পের সরকারি স্বাস্থ্য আধিকারিক স্বপন মুখোপাধ্যায়কে জানান তাঁরা। পুরসভার চেয়ারম্যানকে না পেয়ে ওষুধের নমুনা নিয়ে তিনি ভাইস চেয়ারম্যান দেবপ্রসাদ বাগের কাছে যান। কীভাবে সরকারি সিল মারা ওষুধ ওই বেসরকারি সংস্থার পেটিতে চলে এল, তার তদন্তের জন্য দেবপ্রসাদবাবুকে অনুরোধও করেন তিনি। দেবপ্রসাদবাবুর নির্দেশে সব ক’টি পেটি খোলা হয়।দেখা যায় তিনটি পেটিতে চার রকমের ওষুধের প্যাকেটে রয়েছে সরকারি স্ট্যাম্প। এর পর কলকাতার ওই সংস্থাকে ফোন করেন দেবপ্রসাদবাবু। তাঁর দাবি, “টেলিফোনে সংস্থার এক আধিকারিক আমায় বলেন, বহু পুরসভাকেই তো এ ধরনের ওষুধ পাঠানো হয়। বোর্ড তো আপত্তি করে না। একটা ভুল হয়ে গিয়েছে। আমরা কাল গিয়ে পাল্টে নেব।” দেবপ্রসাদবাবুর বক্তব্য, “এ কথা শোনার পর আমাদের সন্দেহ আরও বেড়ে গিয়েছে। আমাদের দৃঢ় ধারণা সরকারি হাসপাতালের ওষুধ এখানে অন্যায় ভাবে পাঠানো হয়েছে।” তাঁর বক্তব্য, প্রতিটি ওষুধের গায়ে ব্যাচ নম্বর লাগানো রয়েছে। সঠিক তদন্ত হলে আসল সত্য বেরিয়ে আসবে। পুরসভার তরফে এ দিন ঘটনাটি কালনার এসিএমওএইচ সুভাষচন্দ্র মণ্ডলকে জানানো হয়েছে। তিনি জানান, লিখিত নির্দেশ পেলেই সংস্থাটির সঙ্গে কথা বলবেন। পুরসভার আলো বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কাউন্সিলর তথা বেঙ্গল কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের কালনা শাখার সভাপতি আনন্দ দত্ত বলেন, “সরকারি স্ট্যাম্প লাগানো ওষুধগুলি হয় কোনও সরকারি হাসপাতাল থেকে বেরিয়েছে অথবা কোনও হাসপাতালে পাঠানোর পরিবর্তে সেগুলি এখানে পাঠানো হয়েছে। ঘটনাটি আমরা বিস্তারিত জানাচ্ছি জেলার ড্রাগ কন্ট্রোল আধিকারিকদের।” অভিযুক্ত সংস্থার এক কর্মী বুলবুল সিংহের অবশ্য বক্তব্য, “আমরা বিভিন্ন রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সংস্থার বিভিন্ন স্বাস্থ্য বিভাগে ওষুধ সরবরাহ করি। পুরসভা তো একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান। সেখানে সরকারি স্ট্যাম্প লাগানো ওষুধ পাঠিয়ে কোনও অন্যায় করিনি।” তাঁর দাবি, খোলা বাজারে সংস্থা ওই ওষুধগুলি বিক্রি করলে, তবেই তা অন্যায় হোত। |