তাঁর ইচ্ছে ছিল, দু’একর জমিতে একটা ছোট্ট বাংলো থাকবে। চারপাশে থাকবে প্রচুর গাছপালা। শু্যটিং এর ফাঁকে কখনও সখনও এসে তিনি একটু বিশ্রাম নেবেন। কিন্তু জীবদ্দশায় তা আর হয়ে ওঠেনি। মাওবাদী আতঙ্কের জেরে তাঁর উত্তরপুরুষরাও বহুদিন চেষ্টা করে সেই জমিতে একটি ইট গাঁথারও সুযোগ পাননি। কিন্তু মাস দুয়েক আগে ঝাড়খণ্ডের তোপচাঁচির ওই জমিতে শুরু হয়েছে তাঁর নামে একটি হাসপাতাল তৈরির কাজ।
মহানায়ক উত্তমকুমার। ১৯৫০ সালে তোপচাঁচিতে প্রথমে এক একর, পরে ১৯৫৬ সালে তার পাশেই আরও এক একর জমি কেনেন উত্তমকুমার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি আর ওই জমিতে কিছু করে উঠতে পারেননি। তার পর তো অকালে নক্ষত্র পতন।
উত্তমবাবু যখম জমি কেনেন, তোপচাঁচি তখন ছিল বিহারের অধীনে। এখন ঝাড়খণ্ডে। দীর্ঘদিন ধরেই ধানবাদের কাছে এই তোপচাঁচি এলাকা মাওবাদীদের ডেরা বলে পরিচিত। উত্তমবাবুর পুত্রবধূ মহুয়া চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, “সপ্তপদী, হারানো সুর, অগ্নীশ্বর কিংবা আলো আমার আলো-র মতো অজস্র সিনেমার শুট্যিং হয়েছিল তোপচাঁচিতে। ওই জমিতে বাবার স্মৃতির উদ্দেশে কিছু একটা করতে চেয়েছিলাম আমরা। কিন্তু মাওবাদী সমস্যার কারণে শেষ পযর্ন্ত আর কাজ এগোয়নি।” মহুয়াদেবী জানান, শেষ পর্যন্ত এক আত্মীয়কে জমিটা দান করে দেওয়া হয়েছিল। এখন ওখানে আমার শ্বশুরমশাইয়ের নামেই একটি হাসপাতাল তৈরি করা হবে।”
দীর্ঘদিন জঙ্গলে ভর্তি হয়ে পড়েছিল উত্তমবাবুর ওই জমি। মাস দু’য়েক হল সেই জঙ্গল কেটে পরিষ্কার করে সেখানে হাসপাতাল তৈরির তোড়জোড় শুরু হয়েছে। আপাতত কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে জমিটি ঘিরে দেওয়া হয়েছে। |
মহুয়াদেবীর ভাই শুভ্রজিৎ সান্যাল ওই হাসপাতাল তৈরির জন্য উদ্যোগী হয়েছেন। তাঁর নিজস্ব সংস্থাই হাসপাতাল নির্মাণের কাজ করছে ওই জমিতে। শুভ্রজিৎবাবু জানান, প্রথম দিকে তাঁদেরও কাজ শুরু করতে গিয়ে ঝামেলা পোহাতে হয়েছে। স্থানীয় তোপচাঁচি থানার সাহায্য নিতে হয়েছে বেশ কয়েক বার। পরে অবশ্য গ্রামবাসীরা এগিয়ে এসে ঝামেলা মিটিয়ে দিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে ঝাড়খণ্ডের পূর্বতন সরকারের অবদানের কথাও স্বীকার করেছেন শুভ্রজিতবাবু। হাসপাতাল তৈরির কাজে বিশেষ ভাবে সাহায্য করছেন স্থানীয় টুন্ডির বিধায়ক তথা পূর্বতন জোট সরকারের মন্ত্রী, জেএমএম নেতা মথুরাপ্রসাদ মাহাতো। তাঁর কথায়, “উত্তমকুমারের হিন্দি ছবি আমি দেখেছি। আমি দেখলাম ওঁর পরিবারের লোকজন হাসপাতাল তৈরির মতো একটি জনহিতকর কাজ করছেন। ফলে সাহায্য না করার কোনও কারণ ছিল না।”
উত্তমকুমারের নামে প্রস্তাবিত ওই হাসপাতালকে ঘিরে স্থানীয় লোকজনের মধ্যেও উৎসাহ তৈরি হয়েছে। গ্রামের অনেক প্রবীণ মানুষ রয়েছেন, যাঁরা এক সময় তোপচাঁচিতে উত্তমকুমার শু্যটিং করতে এলে ভিড় করে আসতেন। যেমন ‘অগ্নীশ্বর’ ছবির নামটা মনে করতে পারলেন না তোপচাঁচির ষাট বছরের বাসিন্দা দ্বারকাপ্রসাদ মাহাতো। কিন্তু তাঁর মনে আছে ‘ডাক্তারবাবু’ উত্তমকুমারকে। তাঁর কথায়, “আমার তখন অনেক ছোট। একটা ছবিতে উনি ডাক্তার সেজেছিলেন। আমরা কয়েক জন ফুল হাতে নিয়ে ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছিলাম।” দ্বারকাবাবুরা এখন আশাবাদী, হাসপাতাল তৈরি হলে তাঁদের সন্তানরা হাসপাতালে কাজের সুযোগ পাবেন। |