প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে আইনি জটিলতা এখনও কাটেনি। এর মধ্যেই মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে আইনি জটিলতা তৈরি হল। স্কুল সার্ভিস কমিশন বা এসএসসি শিক্ষক নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা শেষ করে প্রথম ধাপে (টেট) উত্তীর্ণদের নামের তালিকা প্রকাশ করেছে। এখন তাঁদের বিষয়গত পরীক্ষার খাতা দেখে চূড়ান্ত ফলপ্রকাশের অপেক্ষা।
এই পরিস্থিতিতে তানিয়া ঘোষ নামে টেট-উত্তীর্ণ এক প্রার্থী-সহ ১৩ জন কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করে বলেন, স্কুল সার্ভিস কমিশন যে-পদ্ধতিতে নিয়োগ করছে, তা অবৈধ। ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ টিচার্স এডুকেশন অ্যাক্ট (এনসিটিই) এবং রাইট টু এডুকেশন অ্যাক্ট (আরটিই) অমান্য করে এই নিয়োগ চলছে। ওই দু’টি আইনে বলা হয়েছে, বিএড ডিগ্রি না-থাকলে স্কুলশিক্ষার কোনও স্তরেই শিক্ষক নিয়োগ করা যাবে না।
বৃহস্পতিবার এই মামলার শুনানি হয়। আবেদনকারীদের আইনজীবী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রেও একই প্রশ্ন উঠেছিল। শেষ পর্যন্ত ডিভিশন বেঞ্চ রায় দেয়, প্রাথমিক শিক্ষক পরীক্ষা নেওয়া যাবে। তবে সফল প্রার্থীদের দু’টি তালিকা করতে হবে। একটি তালিকা প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের। যাঁদের প্রশিক্ষণ নেই, তাঁদের নাম থাকবে অন্য তালিকায়। প্রথমে নিয়োগ করতে হবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের। তার পরেও যদি শূন্য পদ থাকে, তা হলে অন্যদের নিয়োগ করা যাবে। রাজ্য সরকার বলেছিল, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পরীক্ষার্থীদের বাড়তি ২০ নম্বর দেওয়া হবে। কিন্তু হাইকোর্ট জানিয়েছিল, বাড়তি নম্বর দেওয়া যায় না।
প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে সেই মামলায় হাইকোর্টের নির্দেশের উল্লেখ করে সুব্রতবাবু বলেন, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে শিক্ষক নিয়োগের জন্য এসএসসি যে-বিজ্ঞাপন দিয়েছে, সেখানে প্রার্থীদের বিএ, বিএসসি, বিকম, এমএ, এমএসসি এবং এমকম যোগ্যতা চাওয়া হয়েছে। কিন্তু বিএড সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘কাঙ্ক্ষিত’।
সুব্রতবাবু বলেন, ২০০৯ সালের আরটিই অ্যাক্ট বা শিক্ষার অধিকার আইন অনুযায়ী রাজ্য সরকার শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে আলাদা কোনও আইন তৈরি করতে পারে না।
তাই তিনি এ ভাবে নিয়োগ বন্ধ করার আর্জি জানান।
এনসিটিই-র আইনজীবী এ দিন শুনানির সময় এজলাসে আসতে পারেননি। সরকারি আইনজীবী হাইকোর্টে বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে তিনি সম্যক জানেন না। তাই এ ব্যাপারে সরকারের বক্তব্য জানাতে পারছেন না। আগামী সপ্তাহে এই মামলার ফের শুনানি হবে বলে জানান বিচারপতি। আবেদনকারীদের আইনজীবী জানান, প্রাথমিকের মতো এ ক্ষেত্রেও সফল পরীক্ষার্থীদের মধ্যে আগে বিএড ডিগ্রিধারীদের শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ করতে হবে। তার পরে শূন্য পদ থাকলে তবেই প্রশিক্ষণহীনদের নিয়োগ করা যাবে। এনসিটিই-র আইনজীবী আশা গুটগুটিয়ার সঙ্গে আদালতের বাইরে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, প্রশিক্ষণহীন প্রার্থীদের শিক্ষক-পদে নিয়োগ করা যায় না। তবে এ রাজ্যে প্রশিক্ষিত শিক্ষক কম। তাই কয়েক বছরের জন্য রাজ্যকে ছাড় দিয়ে এনসিটিই বলেছিল, প্রশিক্ষণহীন প্রার্থীদেরও নেওয়া যাবে। কিন্তু ২০১৫-র ৩০ মার্চের পরে প্রশিক্ষিত প্রার্থী ছাড়া নিয়োগ করা যাবে না। |