দফতরের মন্ত্রী তিনি। অথচ সরকারি নির্দেশিকা হাতে নিয়ে শিশু কল্যাণ মন্ত্রী শ্যামাপদ মুখোপাধ্যায় বেমালুম বললেন, “এটা প্রাথমিক তালিকা। পরে সংশোধন-পরিমার্জন হবে।” ওই সরকারি নির্দেশিকা (৬০০১-এসডব্লিউ/৩ই-১২৮/১১)-তেই দফতরের ৩৬ জন অফিসারের বদলির আদেশ দেওয়া হয়েছে। আর তা নিয়েই উঠেছে বড়সড় গরমিলের অভিযোগ।
কী সেই অভিযোগ?
মন্ত্রকের অধীন শিশু উন্নয়ন প্রকল্প অফিসার (সিডিপিও) পদের বদলির যে তালিকা প্রকাশিত হয়েছে, তার তিন নম্বরে রয়েছে পার্থপ্রতিম বসুর নাম। লেখা রয়েছে তিনি এখন বর্ধমানের পূর্বস্থলীর দু’নম্বর ব্লকের সিডিপিও। সিডিপিও পদেই তাঁকে ভাতারে বদলি করা হচ্ছে। সেই নির্দেশ পাননি পার্থবাবু। পাওয়ার কথাও নয়। কারণ, ওই দফতরের চাকরি ছেড়ে অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা দিয়ে গত বছরের জানুয়ারি মাসেই তিনি চলে গিয়েছেন অর্থ দফতরে। তিনি নদিয়ায় কর্মরত। দফতরের সঙ্গে তাঁর কোনও যোগাযোগই নেই গত এক বছর।
ভাতারে সিডিপিও পদে কর্মরত রয়েছেন পূরবী চক্রবর্তী। তাঁর জায়গায় পার্থবাবু না যাওয়ায় (সেটাই স্বাভাবিক) তিনিও আটকে রয়েছেন সেখানে। বদলি তালিকায় পূরবীদেবীর নাম এক নম্বরে। তাঁর যাওয়ার কথা পূর্বস্থলী এক নম্বর ব্লকে। এই ভাবে চেন-এর মতো গোটা বদলি প্রক্রিয়াটাই আটকে রয়েছে। ১৪ সেপ্টেম্বর ওই তালিকা প্রকাশের পরে হাতে-গোনা দু’-তিন জনের বদলি হয়েছে। মন্ত্রীর অবশ্য যুক্তি, “আমি দায়িত্ব নেওয়ার পরে কোনও বদলির নির্দেশই বেরোয়নি!” এই দফতরটি আগে ছিল সাবিত্রী মিত্রের হাতে। গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে সেটি শ্যামাপদবাবুর হাতে তুলে দেওয়া হয়।
এ দিকে সেই নির্দেশিকা অনুযায়ী ইতিমধ্যে বদলিও হয়েছেন কেউ কেউ! তার মধ্যে রয়েছেন আশিস চক্রবর্তী। তিনি ছিলেন বর্ধমানের জামুরিয়ায়। সেখান থেকে ১৪ সেপ্টেম্বরের পরে তল্পিতল্পা গুটিয়ে চলে গিয়েছেন বর্ধমান শহরের সদর ব্লকে। আর সদর ব্লক থেকে প্রসূন ভৌমিক চলে গিয়েছেন জামুরিয়ায়। তাঁদের দু’জনের হাতেই নির্দেশ এসে পৌঁছেছিল। দু’জনেই নির্দেশ কার্যকর করেছেন। মন্ত্রী বলছেন, “দূর, দূর! সব বাজে কথা। কোনও নির্দেশ বেরোতেই পারে না।” তার পরে আনন্দবাজারের হাতে পৌঁছনো সেই নির্দেশিকা ভালো করে দেখে দফতরের অফিসারদের তার প্রতিলিপি করিয়ে রাখতে বলেন।
কেন্দ্রীয় সরকারের এই মা ও শিশু উন্নয়ন প্রকল্পে রাজ্য জুড়ে ৬ বছর পর্যন্ত বয়সের শিশুদের বিনামূল্যে টিকাকরণ ও প্রাক-বিদ্যালয় শিক্ষা দান করে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলি। সঙ্গে রয়েছে অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের টিকাকরণ ও স্বাস্থ্য সচেতনতার প্রচার। প্রতিটি ব্লকে প্রায় ৫০০টি এ রকম অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র থাকে। প্রতিটি ব্লকে এক এক জন সিডিপিও সেই কেন্দ্রগুলির দায়িত্বে থাকেন। কেন্দ্রের টাকায় রাজ্য সরকার এই প্রকল্পটি চালায়।
অভিযোগ, সিডিপিও-দের এই বদলির তালিকা তৈরির সময়ে পূর্বতন মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র ও বর্তমান মন্ত্রী শ্যামাপদ মুখোপাধ্যায় দু’টি পৃথক তালিকা তৈরি করেন। সে দু’টিকে মেলাতে গিয়েই ‘উদোর পিণ্ডি বুদোর ঘাড়ে’ চেপেছে। এই বিষয়ে সাবিত্রী মিত্রকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, “মালদহ আমার জেলা। সেই জেলার কয়েক জনের বদলির বিষয়ে একটি তালিকা আমি দিয়েছিলাম ঠিকই। কিন্তু, বাকিটা শ্যামাপদবাবু বলতে পারবেন।”
কী বলছেন সিডিপিও সংগঠনের নেতারা? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতার কথায়, “জানি এ রকম একটা ভুলে ভরা নির্দেশিকা বেরিয়েছে। ওই তালিকা সংশোধনীর জন্য আমরা দফতরকে চিঠি দিয়েছি।” মন্ত্রী যে বলেছেন, তালিকা প্রকাশিতই হয়নি! তার উত্তরে নেতা বলেন, “আমার নামটা কিন্তু ছাপবেন না!” |