রাত যত বাড়ে, বাস তত কমে এমন কথা আগে শোনা যেত। এখন দিনেও পর্যাপ্ত পরিমাণে বাসের দেখা মেলে না বলেই অভিযোগ যাত্রীদের। সরকারি বাসের দেখা নেই। কমেছে বেসরকারি বাসও। বাধ্য হয়ে বেশি ভাড়ায় অটো বা শাট্ল গাড়িতে যাতায়াত। সমস্যা সমাধানে পরিবহণ দফতর সল্টলেক-সহ কলকাতার বাতিল হওয়া সমস্ত পুরনো রুট চালু করতে চলেছে। সম্প্রতি এ কথা জানিয়েছেন পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র।
এক সময়ে ৯, এস ১৪, ১৬, ১৯, ২২, ২৩, এল ১৪এ-বি-সি রুটের বাসের উপরেই নির্ভরশীল ছিলেন সল্টলেকের বাসিন্দা থেকে বহিরাগতেরা সকলেই। জনসংখ্যা বেড়েছে, পাল্লা দিয়ে বেড়েছে সল্টলেকে যাতায়াত করা মানুষের সংখ্যা। বিশেষত, পাঁচ নম্বর সেক্টরের শ্রীবৃদ্ধির ফলে এখন লক্ষাধিক মানুষ কর্মসূত্রে সল্টলেকে যাতায়াত করেন। কিন্তু জন্মলগ্ন থেকে বাসের সমস্যা রয়েই গিয়েছে বলে বহিরাগত ও বাসিন্দা, সকলেরই অভিযোগ।
মূল সল্টলেকের বাসিন্দাদের থেকেও খারাপ অবস্থা সংযুক্ত এলাকায়। অভিযোগ, এক দিকে যেমন নাওভাঙা, কুলিপাড়া, খাসমহল থেকে মূল সল্টলেকে যাওয়ার পরিবহণ ব্যবস্থা বলে কার্যত কিছুই নেই, তেমনই নেই পাঁচ নম্বর সেক্টর থেকে শিয়ালদহ, হাওড়া, বারাসত, ব্যারাকপুর-সহ নানা বিভিন্ন প্রান্তে যাতায়াতের পর্যাপ্ত বাস।
ব্যারাকপুর থেকে আগে দু’টি সরকারি বাস রুট এল ২০, এল ২০এ-র মাধ্যমে অন্তত উল্টোডাঙা স্টেশনে যাতায়াত করা যেত। কিন্তু অনেক দিন আগেই সেগুলি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এখন ব্যারাকপুর থেকে একটি বেসরকারি রুটের বাস এবং ডানলপ থেকে কয়েকটি রুটের বাস অন্তত সল্টলেকের কাছাকাছি যাতায়াত করে। কিন্তু যাত্রীসংখ্যার তুলনায় তা পর্যাপ্ত নয় বলেই অভিযোগ। দক্ষিণেশ্বরের বাসিন্দা অসিত রায় বলেন, “পাঁচ নম্বর সেক্টরে কাজ করি। কিছু বেসরকারি রুটের বাসই ভরসা, তা-ও হাতে গোনা। ফেরার সময়ে অবস্থা আরও খারাপ হয়।” অভিযোগ, শুধু উত্তর কলকাতাই নয়, হাওড়া, ধর্মতলা, টালিগঞ্জ থেকেও সল্টলেকে বাস পরিষেবার হাল খারাপ।
যাত্রীরা জানিয়েছেন, বাসের এই বেহাল দশার সুযোগে অটোর ভাড়া বেড়েই চলেছে। উল্টোডাঙা স্টেশন থেকে করুণাময়ী ১০-১২ টাকা, কখনও ১৫ টাকাও চাওয়া হয়। এসডিএফ ২০ থেকে ২৫ টাকাও ভাড়া হয়। ভাড়া নিয়ন্ত্রণ দূর অস্ত্। যাত্রীদের বক্তব্য, রাতে মেট্রো ধরতে হলে একে তো বাস পাওয়া যায় না, কিংবা ভিড়ের কারণে ওঠা যায় না। তার মধ্যেই ইচ্ছেমতো ভাড়া হাঁকেন চালকেরা।
আবাসিক সংগঠন বিধাননগর ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কুমারশঙ্কর সাধু বলেন, “পরিবহণ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ছে। বাসের দেখা নেই। অটো বা শাট্লের উপরেই নির্ভরশীল আমরা। রাতে সমস্যা আরও ভয়াবহ আকার নেয়।”
সমস্যা সমাধানে রাজ্যের কাছে একাধিক রুট চালুর আবেদন করেছিল বিধাননগর পুরসভাও। আবেদন মেনে রাজ্য পরিবহণ দফতর এস-১৬ সহ কয়েকটি রুট ফের চালুর ব্যবস্থা করে। ইন্টারসিটি বাস পরিষেবা চালুর ঘোষণাও হয়েছিল। কিন্তু সে সব বাসের দেখা মেলে না।
সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিবহণসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “পর্যালোচনা চলছে। সব দিক খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ করা হবে।” পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র বলেন, “যাত্রীদের ভোগান্তির জন্য দুঃখিত। গঙ্গাসাগর মেলার জন্য সাময়িক একটি সমস্যা তৈরি হয়। কিন্তু পরিবহণ দফতর সল্টলেকের বিষয়ে আলোচনা করছে। শুধু সল্টলেক নয়, গোটা শহরেই বাতিল হওয়া সব রুটে ফের সরকারি বাস চালানোর কথা ভাবছি।” |