কটূক্তির প্রতিবাদ করায় দুষ্কৃতীদের হাতে বেধড়ক মার খেলেন এক মহিলা ও তাঁর সহকর্মীরা। তাঁদের বাঁচাতে এগিয়ে এলেন না কোনও স্থানীয় বাসিন্দা। বারাসতের বামনগাছিতে শনিবার দুপুরের ঘটনা। পুলিশে অভিযোগ জানানোর পর মূল অভিযুক্ত গ্রেফতার হলেও এ দিন ফের প্রমাণ হল, অপরাধ চিত্রে কোনও পরিবর্তন আসেনি বারাসতে। ২০১১-র ১৪ ফেব্রুয়ারি দিদির শ্লীলতাহানি রুখতে গিয়ে খুন হয় মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী রাজীব দাস। তার পর থেকে প্রশাসন বহু বার আশ্বাস দিয়েছে। কিন্তু নারী নিগ্রহ, খুন ধর্ষণ তাতে থামেনি।
পুলিশ রাতে জানিয়েছে, অভিযোগকারিণী বামনগাছি মাঝেরপাড়ায় একটি অফিসে চাকরি করেন। এ দিন কাজে যাওয়ার সময় সোমনাথ হালদার নামে এক যুবক তাঁকে লক্ষ করে কটূক্তি করে। ওই মহিলা অফিসে গিয়ে সহকর্মীদের বিষয়টি জানালে তাঁরা প্রতিবাদ করতে যান। কিন্তু সোমনাথ ও তার কয়েক জন শাগরেদ উল্টে ওই মহিলা ও তাঁর সহকর্মীদের উপর চড়াও হয়। বাঁশ দিয়ে মারধর করা হয়, ছোড়া হয় ইট। সোমনাথের ছোড়া ইটে দুই মহিলা জখম হয়েছেন। বুকে বাঁশের আঘাত লাগায় বারাসত হাসপাতালে ভর্তি হন সৌরভ কর নামে এক যুবক।
উত্তর ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার সুগত সেন বলেন, “অভিযোগ পেয়েই এক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বারাসত থানার আইসি নিজে বিষয়টি দেখভাল করছেন।” পুলিশকে ওই মহিলা জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরেই ওই এলাকায় মদ্যপ অবস্থায় সোমনাথ ও তার শাগরেদরা ঘোরাফেরা করে। রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় মহিলাদের অশ্লীল মন্তব্য ও কুপ্রস্তাব দেয় তারা। এ দিন তার মাত্রা বেড়ে যাওয়াতেই তাঁরা প্রতিবাদ করেছিলেন।
দিল্লিতে চলন্ত বাসে গণধর্ষণ করে খুনের ঘটনার পর সারা দেশ যখন বিক্ষোভ-আন্দোলেনে উত্তপ্ত, তখনও বিরাম নেয়নি বারাসাতের দুষ্কৃতীরা। দিল্লির ওই ঘটনার ক’দিনের মাথায় বারাসতের নীলগঞ্জে ইটভাটা থেকে কাজ সেরে ফেরার সময় আক্রান্ত হন এক দম্পতি। মাঝবয়সী মহিলাকে ধর্ষণ করে খুন করে দুষ্কৃতীরা। জোর করে অ্যাসিড খাইয়ে খাদ্যনালী-পাকস্থলী পুড়িয়ে দেওয়ায় হয় তাঁর স্বামীর। এর পরেও একাধিক বার রাজ্যের নানা প্রান্তে নারী নিগ্রহের ঘটনা ঘটেছে। হয়েছে প্রতিবাদও। বৃহস্পতিবার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীর শ্লীলতাহানির ঘটনায় পড়ুয়াদের পাশাপাশি রাস্তায় নামেন শিক্ষকরাও। বিবাদী বাগে শ্লীলতাহানির ঘটনায় রুখে দাড়াতে দেখা গিয়েছে সহ-নাগরিকদের। কিন্তু বামনগাছিতে যা দেখা যায়নি এ দিন। নারী নিগ্রহ কেন ঠোকানো যাচ্ছে না, এই প্রশ্নে পুলিশ সুপার সুগত সেনের জবাব, “পুলিশ যথাযথ চেষ্টা করছে।” |