এ বার গঙ্গাসাগর মেলায় ইতিউতি সর্বত্রই এক প্রশ্ন ‘ভিড় কোথায়?’ এমনিতে মাহেন্দ্রক্ষণের আগে এই দিনটিতে তত মানুষ হয় না ঠিকই। তবে সাগরবাসী কিন্তু বলছেন, আগের দিনটিতে গত দশ বছরেও এত কম ভিড় হয়নি। অধিকাংশেরই মত, কুম্ভ মেলার জন্যই ভিড় কম এ বার।
ভিড় থাকুক বা না থাকুক তা নিয়ে চিন্তিত নয় জেলা প্রশাসন। এক কর্তা বললেন, “যত ভিড়ই হোক, এ বার এমন পরিকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে, তাতে যত ভিড়ই হোক ঠিক সামাল দেওয়া যাবে।” পরিকাঠামো যে আগের থেকে অনেকটাই পাকা হয়েছে, তা নিয়ে সন্দেহ নেই ভোপাল থেকে আসা রাম সিংহের। তাঁর কথায়, “আগে রাস্তা ইতনা বড়া নাহি থা। উতনা জাম ভি নাহি মিলা (আগে রাস্তা এত বড় ছিল না, তেমন যানজটেও পড়িনি)।” কচুবেড়িয়া থেকে মেলা পর্যন্ত ঝাঁ চকচকে রাস্তা, বাদ পড়েনি মেলা প্রাঙ্গণও। অনেকটা অংশই কংক্রিটে মুড়ে ফেলা হয়েছে। আলোর ব্যবস্থাও প্রচুর। “পরিকাঠামোর উন্নয়নের জন্যই ভিড়টা কম লাগছে। রাস্তা আগের থেকে অনেক চওড়া হয়েছে। ভিড় তাড়াতাড়ি কেটে যাচ্ছে।” দাবি রাজ্যের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের।
শনিবার জেলা প্রশাসনের ডাকা সাংবাদিক বৈঠকে মন্ত্রী মেলাকে জাতীয় মেলার মর্যাদা দেওয়ার দাবি করলেন। সুব্রতবাবু বলেন, “গত বছর থেকেই মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই মেলার উপর বিশেষ জোর দিয়েছেন। মেলার উন্নয়নে গত বার থেকেই প্রভূত ব্যবস্থা নিয়েছি। সব কাজ শেষ হলে একে জাতীয় মেলার স্বীকৃতি দেওয়ার অবশ্যই দাবি জানাব।” |
সাগর মেলা জাতীয় মেলার স্বীকৃতি পাবে কি না তা নিয়ে বিন্দু মাত্র উৎসাহ নেই পুণ্যার্থীদের। সারা দেশ থেকে আসা লক্ষ লক্ষ মানুষের কাছে এই মেলা বহু আগেই জাতীয় উৎসবে পরিণত হয়েছে। উৎসবেও খানিকটা রাজনীতির গন্ধ লাগল। আগের বাম সরকারকে একহাত নিলেন সুব্রতবাবু। তাঁর মন্তব্য, “আগের সরকার পুণ্যার্থীদের স্বাচ্ছন্দ্যের দিকে নজরই দিত না। খালি নিরাপত্তা নিয়েই মেতে থাকত। আমরা গঙ্গাসাগর মেলার নিরাপত্তা ও স্বাচ্ছন্দ্য দু’টিতেই জোর দিয়েছি।”
এ সবের মাঝে সাগরবাসীর জন্য ফের আশার বাণী শুনিয়েছেন সুব্রতবাবু। ‘সাগর ডেভেলপমেন্ট অথরিটি’ শীঘ্রই গড়া হবেই বলেই তাঁর দাবি। যদিও অতীতের মতো এ বার প্রতিশ্রুতিতে ভুলতে চান না সাগরবাসী। মেলায় চা বিক্রি করছেন স্থানীয় বাসিন্দা হারান দাস। তাঁর প্রতিক্রিয়া, “আগে তো কাজ হোক!”
মেলার উন্নয়নে নিজেদের উন্নয়নের ব্যাপারে কিছুটা হলেও আশা রাখছেন সাগরবাসী। তাঁদের বিশ্বাস, স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী এখানে থাকার জন্য এত আয়োজন করেছেন। এ বার সাগরের দিকে ফিরে চাইবেন বলেই মনে করেছেন স্থানীয় বাসিন্দাদের একটা অংশ। সুব্রতবাবু জানালেন, মেলার পরপরই মুখ্যমন্ত্রীর এখানে আসার ইচ্ছা। দিদির দেখা মিলুক আর না মিলুক, ‘ভিড়হীন’ গঙ্গাসাগর এখন মেতেছে আশাতেই। বৈঠক সেরে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক নারায়ণ স্বরূপ নিগম বললেন, “নতুন পাওয়ারফুল লাইটের খেলা শুরু হয়েছে। এক বার দেখে আসুন।” নতুন খেলার অপেক্ষায় গঙ্গাসাগরও। |