শীতের সকালে রাজ্য জুড়ে উৎসবের মেজাজ। তবে তার ছবিটা কিন্তু আর পাঁচটা উৎসবের থেকে আলাদা। স্বামী বিবেকানন্দের জন্ম সাধর্র্শতবর্ষ উপলক্ষে শনিবার সারা দিন জুড়েই জেলা ও কলকাতায় হল অনুষ্ঠান, শোভাযাত্রা। স্কুলের কচিকাঁচা থেকে পদকজয়ী মহিলা বক্সার, কে নেই তাতে। ভিড় উপচে পড়ল বেলুড় মঠ-সহ স্বামীজির স্মৃতিবিজড়িত জায়গাগুলিতেও।
বেলুড় মঠ, গোলপার্ক-সহ নানা জায়গায় এ দিন ভিড় জমেছিল। এ দিন বেলুড় মঠে সকালটা শুরু হয়েছিল বিভিন্ন স্কুলের ট্যাবলো-সহ শোভাযাত্রা দিয়ে। ছিল গীতি আলেখ্য, নাটক, যোগাসন প্রতিযোগিতাও। বেলুড় মঠের তরফে স্বামী বিমলাত্মানন্দ জানান, স্বামীজির সাধর্র্শতবর্ষ উপলক্ষে একটি মোটরবাইক র্যালি এ দিন বেলুড় মঠ থেকে ওয়াঘা সীমান্তের দিকে রওনা দিয়েছে। র্যালিটির সূচনা করেন রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী আত্মস্থানন্দ। বেলুড় মঠে ছেলে-মেয়েকে নিয়ে এসেছিলেন নিউ ব্যারাকপুরের পার্থ দাস। তিনি বলেন, “আমি রামকৃষ্ণ মিশনের ছাত্র। তাই এ দিন না এসে থাকতে পারিনি।” |
গোলপার্ক রামকৃষ্ণ মিশনের সামনের অংশ সাজানো হয়েছে আলোর মালায়। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ছিল শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের আসর। সকালে নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের আয়োজনে গোলপার্ক থেকে নরেন্দ্রপুর পর্যন্ত একটি শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। উপস্থিত ছিলেন পদকজয়ী বক্সার মেরি কম।
পিছিয়ে ছিল না স্বামীজির জন্মভিটে উত্তর কলকাতার সিমলাপাড়াও। সকাল ৯টা নাগাদ সেখান থেকে একটি পদযাত্রা শুরু হয়। মানিকতলা, শ্যামবাজার পাঁচমাথার মোড় হয়ে তা ফিরে আসে স্বামীজির পৈতৃক বাড়িতেই। পদযাত্রার সূচনা করেন সেনাবাহিনীর বেঙ্গল এরিয়ার প্রধান এ কে চৌধুরী। উপস্থিত ছিলেন সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। সকালে স্বামীজীর বাড়িতে আসেন প্রাক্তন রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ গাঁধী। সন্ধ্যায় স্বামীজির বাড়ির রামকৃষ্ণ মঞ্চে যোগনাটিকার আয়োজন করা হয়।
শুধু শহরেই নয়। বিবেকানন্দের জন্মদিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হল জেলায় জেলায়। বাঁকুড়ার জয়রামবাটির মাতৃমন্দিরে ভোরে মঙ্গলারতি, সকালে সুসজ্জিত প্রভাতফেরি ও দিনভর নানা প্রতিযোগিতার মাধ্যমে পালিত হয় ‘জাতীয় যুব দিবস’। পুরুলিয়ার রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যাপীঠেও যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয় বিবেকানন্দ জন্ম দিবস। শনিবার সকালে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে অনুষ্ঠানের সূচনা করেন অধ্যক্ষ স্বামী আত্মপ্রভানন্দ। |
উপস্থিত ছিলেন বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক স্বামী শক্তিপ্রদানন্দ। মুর্শিদাবাদের বহরমপুরের রবীন্দ্র সদন থেকে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়। আজ, রবিবারও এখানে থাকছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বহরমপুর ছাড়াও শোভাযাত্রা হয় লালগোলা, বেলডাঙা সহ জেলার অন্যান্য প্রান্তেও। পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুক রামকৃষ্ণ মিশনে শনিবার বিবেকানন্দ জন্ম দিবসের সঙ্গেই পালিত হয় মিশনের শতবর্ষ পালন অনুষ্ঠান। বেরোয় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। উপস্থিত ছিলেন তমলুক রামকৃষ্ণ মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী সত্যাত্মানন্দ। বিবেকানন্দের জন্ম সাধর্র্শতবর্ষ উপলক্ষে কন্যাকুমারী থেকে মশাল নিয়ে ‘বিবেক জ্যোতি’ যাত্রা শুরু করেছিলেন এক দল যুবক। আয়োজক ছিল হুগলির চুঁচুড়ার বিবেকানন্দ সাধর্র্শতবর্ষ উদযাপন কমিটি ও চুঁচুড়া পুরসভা। তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ, ওড়িশা ঘুরে অভিযাত্রী দলটি শনিবার চুঁচুড়ায় আসে। এই উপলক্ষে চুঁচুড়া ময়দানে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বেলুড় মঠের সন্ন্যাসী ত্যাগীবরানন্দ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিশ্বশ্রী মনোহর আইচ।
|