তার সব কথায় হাততালি দেয় না যে সব সংবাদমাধ্যম, তাদের প্রতি বেজায় বিরূপ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর নির্দেশেই সরকারি গ্রন্থাগারে বাছাই করা খবরের কাগজ রাখার ফরমান জারি হয়েছে। প্রকাশ্যে কোনও কোনও সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে বিষোদ্গারও করছেন মমতা। কিন্তু শনিবার মুখ্যমন্ত্রীর উল্টো সুর গেয়ে সংবাদপত্র ও প্রচারমাধ্যমের স্বাধীনতার পক্ষে দাঁড়ালেন তাঁরই দলের প্রবীণ সাংসদ ও প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সৌগত রায়। এ দিন এক বণিকসভার অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “আমি ব্যক্তিগত ভাবে খবরের কাগজের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। ওদের উপরে নিয়ন্ত্রণ উচিত নয়। ইন্দিরা গাঁধী সেন্সর করে ভুল করেছিলেন। সেই ভুল যেন আর না হয়।”
তৃণমূলের বর্ষীয়ান নেতার এই মন্তব্যের পরে অনেকেরই প্রশ্ন, সৌগতবাবু কি দলের এখনকার ‘মূলধারা’র বিপরীতে হাঁটছেন? কারণ, মুখ্যমন্ত্রী যে সব সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে খড়্গহস্ত, তাঁর চারপাশে থাকা মুকুল রায়, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম, মদন মিত্রদের মতো নেতা-মন্ত্রীরাও সেই সুরেই কথা বলছেন। এমনকী, দলীয় কর্মী-বৈঠকেও জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে, ওই সব সংবাদমাধ্যম সম্পর্কে কী মনোভাব নিতে হবে। সেখানে সৌগতবাবুর এই বক্তব্য দলীয় নেতৃত্ব কী চোখে দেখবেন, প্রশ্ন থাকছে তা নিয়েও। তৃণমূলের সদ্যনিযুক্ত মুখপাত্র পার্থ চট্টোপাধ্যায় কিন্তু এই বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি। তিনি বলেন, “বেঙ্গল লিড্স নিয়ে ব্যস্ত আছি। সৌগতবাবু কী বলেছেন, জানি না। না-জেনে কিছু বলব না।”
সৌগতবাবু অবশ্য বিভিন্ন বিষয়ে কিছু দিন ধরেই তাঁর স্বাধীন মতামত প্রকাশ্যে জানাচ্ছেন, যা অনেক সময়েই তাঁর দলের মনোভাবের সঙ্গে মিলছে না। যেমন, আরাবুল ইসলামের বিরুদ্ধে ভাঙড় কলেজে এক শিক্ষিকাকে নিগ্রহের অভিযোগ ওঠার কিছু দিন পরে সৌগতবাবু জানিয়েছিলেন, কলেজে পরিচালন সমিতির সভাপতি হতে গেলে ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকা উচিত। স্কুলের গণ্ডি না-ছাড়িয়েও অনেকেই যে রাজনৈতিক বদান্যতায় ওই ধরনের পদ পাচ্ছেন, তা নিয়ে আক্ষেপ করেছিলেন ওই প্রবীণ নেতা। সম্প্রতি রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে রাজ্যপালের মন্তব্যের পাল্টা হিসেবে পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় চড়া সুরে তাঁর মত ব্যক্ত করেছিলেন। সৌগতবাবু কিন্তু রাজ্যপালের কথায় বেঠিক কিছু দেখেননি।
এ দিন সৌগতবাবু সেই সব রাজনৈতিক নেতাদের ভূমিকার নিন্দা করেছেন, যাঁরা, “পছন্দমতো খবর না হলেই খবরের কাগজের কর্তৃপক্ষকে ফোন করে থাকেন।” অনুষ্ঠানের পরে প্রশ্নের জবাবেও তিনি বলেন, খবর পছন্দ না-হলে সাংবাদিকদের মারধরের ঘটনা নিন্দনীয়। এমন ঘটলে প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে হবে। সৌগতবাবু বলেন, “কোনও রকম সরকারি সেন্সরশিপ সংবাদমাধ্যমের উপরে থাকা উচিত নয়।” তবে সংবাদমাধ্যমের ভূমিকারও সমালোচনা করেছেন তিনি। তাঁর মতে, “সাংবাদিকেরা এখন সংস্থার মালিকের স্বার্থে কাজ করেন। এখন দুর্নীতি তো ক্যাগ খুঁজে বার করছে। সংবাদমাধ্যম সেই ভূমিকা কোথায় পালন করছে!” |