ভারতের প্রথম পিতা-পুত্র ডেভিসকাপার-কাম-জাতীয় কোচ। লিয়েন্ডারদের নিয়ে কোর্টে নামার আগেই আখতার আলির ছেলে জিশান আলি নজির গড়ে ফেলেছেন। নতুন দায়িত্ব পাওয়ার পাঁচ দিনের মধ্যে নিজের শহরে এসে আনন্দবাজারের কাছে অকপট তিনি।
প্রশ্ন: এই মুহূর্তে ভারতীয় ডেভিস কাপ দলের কোচ না হয়ে প্লেয়ার হলে মহেশদের বিদ্রোহী দল না এআইটিএ, কোন দিকে থাকতেন?
জিশান: এখন আমি কোচ। ইন্ডিয়া টেনিস টিম বাদে অন্য কিছু ভাবছি না।
প্র: তবু...
জিশান: দেখুন, ওদের জোট আর এআইটিএ, দু’পক্ষই ভারতীয় টেনিসে নতুন কিছু ঘটাতে চাইছে বলে আমার মনে হচ্ছে। আর সেই ব্যাপারে এআইটিএ পুরোপুরি দায়বদ্ধ।
প্র: জোটের কারও সঙ্গে সম্প্রতি কথা হয়েছে?
জিশান: না।
প্র: আর লিয়েন্ডারের সঙ্গে?
জিশান: অপেক্ষা করছিলাম ভারতীয় দল ঘোষিত হওয়ার জন্য। গতকাল টিম নির্বাচিত হয়েছে। লিয়েন্ডার অস্ট্রেলিয়ায়। ‘টাইম ডিফারেন্স’ অনেক। এখনও যোগাযোগ করে উঠতে পারিনি। আজকালের মধ্যেই কথা বলব। তবে ২৮ জানুয়ারি দিল্লিতে আমরা গোটা ডেভিস কাপ টিম জড়ো হচ্ছি। তখনই ওর সঙ্গে আসল কথাবার্তা হবে।
|
শনিবার সাউথ ক্লাবে জিশান আলির ছবি তুলেছেন উৎপল সরকার |
প্র: নতুন ডেভিস কাপ দলে লিয়েন্ডারের বাড়তি তাৎপর্যকে কী ভাবে ব্যবহার করবেন?
জিশান: ওর তেইশ বছর দেশের হয়ে খেলার বিরাট অভিজ্ঞতার সঙ্গে এ বার আমার গত সতেরো বছর পৃথিবী ঘুরে কোচিংয়ের অভিজ্ঞতা ভারতীয় ডেভিস কাপ দলে যোগ হল। আশা করি আমরা দু’জন মিলে ভারতীয় টেনিসকে ভাল কিছুই দেব।
প্র: এআইটিএ থেকে অফারটা কী ভাবে এল? কোচের পদে আনন্দ অমৃতরাজের নামও ছিল।
জিশান: আমি অতশত জানি না। প্লেয়ারদের ইস্যুটা তৈরি হওয়ার তিন দিনের মাথায় এআইটিএ থেকে আমার কাছে ডেভিস কাপে কোচ হওয়ার প্রস্তাব আসে। আমি গর্বিত। সঙ্গে সঙ্গে ‘হ্যাঁ’ বলে দিই। প্লেয়ার হিসেবেও সব সময় দেশের ডাকে সাড়া দিয়েছি।
প্র: টিমের তিন আনকোরা প্লেয়ার সম্পর্কে আপনার ধারণা কী?
জিশান: ওদের কারও খেলা কোনও দিন দেখিনি। তবে সেটা কোনও ব্যাপার নয়। ফ্লেচার বা কার্স্টেন যখন ইন্ডিয়া ক্রিকেট টিমের দায়িত্ব নিয়েছিল তখন কি ধোনিদের সঙ্গে নতুন কোচের আলাপ ছিল? সুযোগ পাওয়ার পরে ধোনিদের চিনেছিল। আমিও সবে সুযোগ পেয়েছি। এ বার টিমের ছেলেদের সঙ্গে আমার চেনাজানাও হবে।
প্র: প্রশ্ন উঠেছে আপনি গত দশ বছর দুবাইয়ে কাটিয়েছেন। সাম্প্রতিক ভারতীয় টেনিস সম্পর্কে জানেন না।
জিশান: তাতে কোচ হিসেবে আমার যোগ্যতা বিন্দুমাত্র কমবে না। তা ছাড়া এখন আমি বেঙ্গালুরুতে টেনিস অ্যাকাডেমি খুলে ওখানেই থাকি। দুবাই থেকেও নিয়মিত বছরে দু’তিনবার দেশে আসতাম। ভারতীয় টেনিসের মূলস্রোতের সঙ্গে বরাবর যোগাযোগ রয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা, ফেডেরার, শারাপোভা, সেরেনা-ভেনাস, ব্রায়ান ভাইদের অসংখ্যবার হিটিং পার্টনার হয়েছি দুবাই, আমেরিকা কিংবা অস্ট্রেলিয়ায় প্যাট ক্যাশের অ্যাকাডেমিতে অতিথি কোচ থাকার সময়। দুবাইয়ে মার্টিনা হিঙ্গিসকে কোচিং করিয়েছি। আশা করি আধুনিক টেনিস কোচিংটা আমি একটুআধটু জানি।
প্র: বিজয়ন্ত-পূরবদের জন্য আপনার মেসেজ কী এই মুহূর্তে?
জিশান: শুধু আমার একার নয়। মনে হয় লিয়েন্ডারও নতুন ছেলেদের একই কথা বলবে। অসাধারণ এবং অপ্রত্যাশিত সুযোগ পেয়েছ। সেটাকে একশো ভাগ কাজে লাগাও। কোর্টে নেমে নিজের সেরাটা উজাড় করে দাও। একটুও টেনশন না নিয়ে দেশের হয়ে খেলাটা পূর্ণ উপভোগ করো। ভাল ফল পাবেই।
প্র: ডেভিসে আপনার প্লেয়ার হিসেবে আবির্ভাবের মতো কোচ হিসেবেও আবির্ভাব হচ্ছে কোরিয়ার বিরুদ্ধেই। কোনও বাড়তি মোটিভেশন?
জিশান: দেশের জন্য আমি সব সময়ই মোটিভেটেড। তবে সেই উননব্বইয়ে বারুচে আর তার পরের বছর সোলে (ডাবলসে লিয়েন্ডারের পার্টনার ছিলাম) দুবারই বিশ্রী হেরেছিলাম। সম্ভবত ১-৪ ম্যাচে। এ বার যেন স্কোরলাইনটা উল্টে দিতে পারি।
|
ভারতীয় টেনিসে যা ঘটছে, তা অত্যন্ত লজ্জার। দু’পক্ষের উচিত মুখোমুখি বসে ব্যাপারটা মিটিয়ে নেওয়া। নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া করে সবাইকে সামনে এগোতে হবে। এআইটিএ এখন একটা দল বেছে নিয়েছে। আমাদের সবার উচিত সেই টিমটাকে সমর্থন করা।
আনন্দ অমৃতরাজ |
|