ফেডারেশনের কর্মসমিতির সভায় মোহনবাগানের নির্বাসন নিয়ে কী সিদ্ধান্ত হবে জানি না। তবে যেখানেই যাচ্ছি লোকজন জানতে চাইছেন, মঙ্গলবারের সভায় শাস্তি কতটা কমবে? আমার কাছে এই ‘কমবে’ কথাটাই হাস্যকর মনে হচ্ছে। কীসের কমানো বুঝতে পারছি না! আমি মনে করি, মোহনবাগানের যা ঐতিহ্য আর সাফল্য তাতে একটা ম্যাচ নির্বাসন হলেই সেটা কলঙ্কের। লজ্জার। যে ক্লাবের স্বাধীনতা সংগ্রামে বিশাল অবদান রয়েছে, জাতীয় ক্লাবের মর্যাদা পেয়েছে, যে ক্লাবের নামে ডাকটিকিট বেরিয়েছে, সেই দল নির্বাসনে? সদস্য-সমর্থকরা মেনে নেবেন?
ডার্বি ম্যাচে দল তুলে নিয়ে ক্লাবকে নির্বাসনে পাঠানোর ব্যবস্থা করে চরমতম অপরাধ করেছেন ক্লাব কর্তারা। সেই অপরাধ ঢাকতে নানা ছলচাতুরির আশ্রয় নেওয়া শুরু হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যেই। ক্লাবের গেটে পুলিশ বসানো হয়েছে বিক্ষোভের ভয়ে। শুনছি সভায় যাওয়ার আগে না কি ঘনিষ্ঠ লোকজনদের মুখ দিয়ে কর্তারা বাজারে ছড়িয়ে দিতে চাইছেন, দু’বছর শাস্তি কমিয়ে আনবেন দিল্লি থেকে। আই লিগের দ্বিতীয় ডিভিশনে যাতে পরের বার খেলতে না হয় সেই চেষ্টাও হচ্ছে। অত্যন্ত সুচতুর ভাবে ওটা করছেন টুটু-অঞ্জনরা। লক্ষ্য দু’টো এক) দিল্লি থেকে ফিরে যাতে ওরা বলতে পারেন অনেক কড়া শাস্তি দিয়েছিল ফেডারেশন, আমরা সেটা লড়ে কমিয়ে এনেছি। দুই) আমরা না থাকলে কেউ এ ভাবে শাস্তি কমাতে পারত না। |
সবুজ তোতা নেই, ক্লাবের ফুটবল কথা বলছে না। এখন আছে কালো
কাকাতুয়া। আর আছেন টোলগে। শনিবার শহরে। ছবি: উৎপল সরকার |
কিন্তু যে প্রশ্নটা এই সুযোগে ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে বা হবে তা হল, ক্লাবের শাস্তি হয়েছিল কাদের জন্য? কাদের অদূরদর্শিতার জন্য ১২৩ বছরের ঐতিহ্যের ক্লাবের শরীরে নির্বাসনের কলঙ্ক লাগল? শাস্তি কিছু কমলে সেই অপরাধ কি মুছে যাবে?
তর্কের খাতিরে যদি ধরে নিই হাতে-পায়ে ধরে ফেডারেশন প্রেসিডেন্ট প্রফুল্ল পটেলের দয়ায় মোহনবাগানের শাস্তি কমল। কিন্তু খুন করে দু’সপ্তাহ জেলে থাকাও যা দু’বছর থাকলেও একই। লোকে বলবেই ওই লোকটা খুন করে জেলে গিয়েছিল।
যে শাস্তিই কমুক, যা খবর পাচ্ছি এ বছর আই লিগে মোহনবাগানের খেলার কোনও সম্ভাবনা নেই। অর্থাৎ পঁয়তাল্লিশ মিনিট না খেলার জন্য ১৬ ম্যাচ সাসপেন্ড। অর্থাৎ ক্লাবের ইতিহাস থেকে মুছে যাবে ২০১২-১৩-র আই লিগ। থেকে যাবে মোটা কালির দাগ। একশো বছর পরেও অন্য ক্লাবের লোকজন মোহনবাগান সমর্থকদের কটাক্ষ করে বলবে, “তোদের টিম একবার নির্বাসিত হয়েছিল পাঁচ গোল খাওয়ার ভয়ে দল তুলে নেওয়ার জন্য।’’
টুটু-অঞ্জনদের সঙ্গে থাকা হাত তোলা, নির্বিষ কর্মসমিতির লোকজন অনেকেই আমাকে মাঝেমধ্যে ফোন করেন। নানা অভিযোগ করেন ক্লাবের গুন্ডারাজ আর দাদাগিরির বিরুদ্ধে। তাদের অনেকেই বলেছেন, ১৬ আগস্টের এপিসোডটা আসলে অভিনয়। ক্লাব সচিব না কি তাদের একান্তে বলেছেন, ‘দলটা না তুলে পাঁচ গোল খেলে সেটা কি ভাল হত? সেটাও তো কলঙ্কের হত!’ কুয়োর মধ্যে আটকে থাকা ইস্ট-মোহন কর্তারা জানেন না, এখন পাঁচ গোল, ছয় গোল বিশ্ব ফুটবলে আকছার হচ্ছে। রিয়াল, ম্যাঞ্চেস্টার, বার্সার ম্যাচে। কী ভাবেই বা বুঝবেন? ঐতিহ্যের বাগানে এখন কর্মসমিতির সদস্য বড় কর্তাদের ছেলে-মেয়ে, ধোপা, মিষ্টিওয়ালা, সুদখোর, কেবল অপারেটররা। অনেক দিন কর্মসমিতিতে ছিল একজন জ্যোতিষী। সে অবশ্য বাদ পড়েছে গত বছর! বশংবদ হওয়ার জন্য এ রকম ‘অমেরুদণ্ডী’ লোকজনই তো দরকার অঞ্জনদের। দিল্লি থেকে শাস্তি কমিয়ে ফেরার পর যাঁরা গাঁদার মালা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবেন বিমানবন্দরে বা ক্লাব তাঁবুর গেটে! |