|
|
|
|
চাপের মুখে বদল মন্তব্য |
মেয়েদের কাজের সময় বেঁধে বিতর্কে বহুগুণা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
মহিলাদের নিরাপত্তা-সহ নানা বিষয় নিয়ে নেতা-মন্ত্রীদের মন্তব্য অব্যাহত। এই তালিকায় নবতম সংযোজন উত্তরাখণ্ডের কংগ্রেসী মুখ্যমন্ত্রী বিজয় বহুগুণা। তাঁর মন্তব্যের ধাক্কায় যথেষ্টই বিড়ম্বনায় কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব। পরে অবশ্য চাপের মুখে মুখ্যমন্ত্রী জানান, তাঁর বক্তব্য বিকৃত করা হয়েছে।
বিজয় বহুগুণা গত কাল বলেন, “সন্ধ্যা ৬টার পর মহিলাদের বাইরে কাজ করা উচিত নয়। কোনও সরকারি বা বেসরকারি সংস্থা যেন মহিলাদের দিয়ে ৬টার পর কাজ না করায়।” এ ব্যাপারে তাঁর সরকার নতুন নীতি প্রণয়ন করবে বলেও জানান মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু তাঁর মন্তব্য শুনেই রে রে করে ওঠে বিভিন্ন মহিলা সংগঠন। তাঁদের বক্তব্য, মহিলাদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার পরিবর্তে মহিলাদের গতিবিধির উপরেই নিয়ন্ত্রণ কায়েম করার চেষ্টা করছে উত্তরাখণ্ড সরকার। কেউ আবার মুখ্যমন্ত্রীর এ হেন মন্তব্যের সঙ্গে খাপ পঞ্চায়েতের মানসিকতার মিল রয়েছে বলে মন্তব্য করেন। যদিও উত্তরাখণ্ড প্রশাসনের দাবি, খাপ পঞ্চায়েতের মানসিকতা নিয়ে নয়, শুধু মহিলাদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতেই এ ধরনের কথা বলেছেন বহুগুণা।
বিষয়টি নিয়ে হইচই শুরু হওয়ায় অস্বস্তিতে পড়ে কংগ্রেস হাইকম্যান্ড। দিল্লিতে গণধর্ষণের ঘটনার পর থেকে এমনিতেই সর্বস্তরের সমালোচনার মুখে পড়েছে কেন্দ্রের শাসক দল। সেই পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণের জন্য জয়পুরে দলের আসন্ন চিন্তন বৈঠকে মহিলাদের নিরাপত্তা ও ক্ষমতায়নের জন্য প্রস্তাব গ্রহণ করার সিদ্ধান্তও নিয়েছেন কংগ্রেস নেতারা। সেই প্রস্তাবের খসড়া রচনার সঙ্গে যুক্ত জয়রাম রমেশের মতো সনিয়া-ঘনিষ্ঠ নেতারা এমনও বলছেন, যে সব রাজনীতিক মহিলাদের সম্পর্কে ইদানীং নেতিবাচক মন্তব্য করছেন, তাঁদের রাজনীতি ছেড়ে ঘরে বসে যাওয়া উচিত। এমন অবস্থায় বহুগুণার মন্তব্যে বড় বিপাকে পড়ে যায় দল।
স্বাভাবিক ভাবেই আসরে নামে কংগ্রেস হাইকম্যান্ড। দলীয় নেতৃত্বের তরফে বহুগুণাকে কড়া বার্তা দিতে দেরি করা হয়নি। কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী মণীশ তিওয়ারি বলেন, “ভুলে গেলে চলবে না, আমরা একুশ শতকে রয়েছি।” দিল্লির তরফে কড়া বার্তা পেয়ে মুখ্যমন্ত্রী সন্ধ্যায় তাঁর মন্তব্য কার্যত ফিরিয়ে নেন। বিবৃতি জারি করে বহুগুণা বলেন, “আমার মন্তব্য বিকৃত করা হয়েছে। ৬টার পরেও মহিলারা কাজ করতেই পারেন। কিন্তু সে ক্ষেত্রে তাঁদের নিরাপত্তার দায়িত্ব যেন সংশ্লিষ্ট সংস্থা নেয়।”
উত্তরাখণ্ডের এক কংগ্রেস নেতা তথা রাজ্য মন্ত্রিসভার সদস্য অবশ্য মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে হইচইয়ে যথেষ্ট অবাক। শনিবার তিনি জানান, মুখ্যমন্ত্রী মহিলাদের সম্পর্কে কোনও নেতিবাচক মন্তব্য করতে চাননি। বহুগুণা প্রশাসনের মতে, শুধু পুলিশি ব্যবস্থা জোরদার করে মহিলাদের নিরাপত্তা সম্পূর্ণ সুনিশ্চিত করা আদৌ বাস্তবসম্মত নয়। মহিলাদের নিরাপত্তার প্রসঙ্গেই রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতরের প্রধান সচিব বিনীতা কুমার গত পরশু একটি সভায় বলেছিলেন, অসংগঠিত ক্ষেত্রে মহিলা কর্মীদের কাজের সময় নির্ধারণের জন্য ১৯৬২ সাল থেকে রাজ্যে একটি আইন রয়েছে। ওই আইন মোতাবেক, নিরাপত্তা ও সুরক্ষার কারণে অসংগঠিত ক্ষেত্রে সন্ধ্যা ৭টার পর মহিলাদের দিয়ে কাজ করানো যাবে না। সেই আইনটি এখনও প্রাসঙ্গিক। স্বরাষ্ট্র দফতরের প্রধান সচিবের সেই কথার প্রসঙ্গ টেনেই মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়ে সরকারও উদ্বিগ্ন। সন্ধ্যা ৭টা কেন, সরকার চাইবে ৬টার পর যেন কোনও মহিলাকে দিয়ে আর কাজ করানো না হয়। রাজ্য কংগ্রেসের ওই নেতার কথায়, “৬টার পর মহিলাদের ঘুরে বেড়ানোয় কোনও বাধা দেওয়ার কথা বলেননি মুখ্যমন্ত্রী।” কংগ্রেসের এক কেন্দ্রীয় নেতা অবশ্য বলেন, “আসলে মহিলাদের নিরাপত্তা পরিস্থিতির বিষয়টি রাজনৈতিক ভাবে খুবই স্পর্শকাতর। তাই কোনও মন্তব্য করার আগে সবারই সব দিক ভেবে কথা বলা উচিত।” মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য ভুল না হলেও সময়ের গোলমালেই তিনি বিপাকে পড়েছেন বলে জানান ওই কংগ্রেস নেতা। |
|
|
|
|
|