পাশে দল-সঙ্ঘ, তবু কঠিনই মোদীর পথ
লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি-র মুখ নরেন্দ্র মোদী। এখন তাঁকে ছাড়া আর কোনও নামও ভাবতে পারছে না আরএসএস। তবু মোদীর পথে বাধার অন্ত নেই।
এ মাসের মধ্যে নিতিন গডকড়ীকে ফের সভাপতি পদে বসাতে চাইছেন আরএসএস নেতা মোহন ভাগবত। সে জন্য আগামী কাল থেকে চূড়ান্ত পর্যায়ের বৈঠক শুরু করে দিচ্ছেন সঙ্ঘ নেতারা। লোকসভা নির্বাচনের সময় সংগঠনের দায়িত্ব গডকড়ীর কাঁধে রাখতে চায় সঙ্ঘ। পাশাপাশি বিজেপির ‘পোস্টার বয়’ কে হবেন, তার নকশাও এঁকে ফেলতে চায় আরএসএস।
সঙ্ঘের এক নেতার বক্তব্য, মোদীকে আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঘোষণা করার বিপদ রয়েছে। দলের মধ্যে তা নিয়ে মতান্তর আছে। এনডিএ-র ভবিষ্যতেও এই সিদ্ধান্তের আঁচ পড়তে বাধ্য। তবু দলের মুখ হওয়ার জন্য এখন মোদী ছাড়া আর কোনও নাম ভাবনায় নেই। চলতি বছরে অনেকগুলি রাজ্যে বিধানসভা ভোট হবে। তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ মধ্যপ্রদেশ, দিল্লি, রাজস্থান, ছত্তীসগঢ়। এগুলির মধ্যে দু’টি রাজ্যে বিজেপি সরকার।
অন্য দু’টি রাজ্য কংগ্রেসের। সঙ্ঘ নেতৃত্ব জানিয়েছেন, মোদী অবশ্যই এই রাজ্যগুলিতে প্রচার করবেন। জাতীয় রাজনীতিতে মোদী কতটা এগোতে পারবেন তার অনেকটাই নির্ভর করছে ওই রাজ্যগুলির ভোটের ফলের উপর।
সঙ্ঘ সূত্রের মতে, লোকসভা ভোটের মুখে এই চারটি রাজ্যের মধ্যে অন্তত তিনটিতে বিজেপির জয় নিশ্চিত হলে লোকসভার হাওয়া ঘুরে যাবে। মোদীর উত্থানের পথও সহজ হবে। কিন্তু মধ্যপ্রদেশ কিংবা ছত্তীসগঢ় বিজেপি ধরে রাখতে পারলে শিবরাজ সিংহ চৌহান কিংবা রমন সিংহের কৃতিত্ব কোনও অংশে কম হবে না। মোদীর মতো তাঁদের মুকুটেও তিন বার জয়ের পালক যোগ হবে। মোদীর মতো তাঁরাও লোকসভায় বিজেপির মুখ হওয়ার দাবিদার হতে পারেন। দলের মধ্যে মোদী-বিরোধী শক্তিগুলিও ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ মুখের দাবিতে শিবরাজের মতো কোনও নেতাকে সমর্থন করতে পারেন। ‘সাম্প্রদায়িক’ মোদীকে ঠেকাতে এনডিএ ও তার বাইরে সক্রিয় দলগুলিও সেই পরিস্থিতিতে বিজেপির সঙ্গে হাত মেলাতে পারে।
গোধরার কলঙ্ক ঘোচাতে গুজরাতের উন্নয়নের মডেলকে সামনে রেখে এগিয়েছেন মোদী। অন্য কোনও বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী সেই ধাপে উত্তীর্ণ হতে পারেননি। মোদীকে প্রধানমন্ত্রী করার দাবিতে নেতৃত্বকে চাপ দিচ্ছেন গুজরাত ও অন্য রাজ্যের দলীয় কর্মীরা। মোদীও উন্নয়নকে সামনে রেখে নিজের ‘বিকাশ-পুরুষে’র ছবিটি আরও মজবুত করতে চাইছেন। ‘ভাইব্র্যান্ট গুজরাত’-এর রাজসূয় যজ্ঞ সেই পদক্ষেপেরই অঙ্গ। কিন্তু এই মহা-সম্মেলনেও আঁচড় লেগেছে তাঁর গায়ে। সঙ্ঘ নেতৃত্বের নির্দেশে এখন রাস্তায় নেমে নিয়ন্ত্রণরেখায় পাকিস্তানি হামলার প্রতিবাদ জানাচ্ছে আরএসএস, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ও বিজেপি। এই পরিস্থিতিতে গুজরাতের শিল্পপতি সম্মেলনে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের সবিনয়ে ফেরত পাঠাতে হল মোদীকে।
মোদীর ‘ভাইব্র্যান্ট গুজরাত’ সম্মেলনে যোগ দিতে করাচি থেকে বাণিজ্যিক প্রতিনিধিরা এসেছিলেন। মোদী প্রথমে তাঁদের সম্মেলন মঞ্চে আনার বদলে আমদাবাদের হোটেলে থাকার পরামর্শ দিয়েছিলেন। পরে কোনও আলোচনা ছাড়াই তাঁদের শহর ছাড়তে বলা হয়েছে।
বিপত্তি এখানেই শেষ নয়। ইন্দো-মার্কিন বাণিজ্য পরিষদের বৈঠকে প্রাক্তন মার্কিন আন্ডার-সেক্রেটারি আর নিকোলাস বার্নস পরোক্ষে গোধরা-পরবর্তী দাঙ্গার প্রসঙ্গ তুলেছেন। প্রধানমন্ত্রী পদের দাবিদার মোদীর আকারে-ইঙ্গিতে সমালোচনার সঙ্গেই মনমোহন সিংহের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছেন বার্নস। মোদীর ভিসার বিষয়টিও পুনর্বিবেচনা করেনি আমেরিকা।
মোদী অবশ্য এই বাধা পেরোনোর আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। গোধরা-পরবর্তী দাঙ্গার পরে মোদীকে বয়কট করেছিল আমেরিকা ও ব্রিটেন। ব্রিটেনের অবস্থান বদলাতে পেরেছেন মোদী। মোদীর শিল্প সম্মেলনে উপস্থিত থেকে গুজরাতে বিনিয়োগের প্রয়োজনীয়তার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন ব্রিটিশ হাইকমিশনার জেমস ডেভান। তবে ২০০২ সালের গোধরা-পরবর্তী দাঙ্গায় পীড়িতদের ন্যায় বিচার পাওয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
মোদীকে ব্রিটেন যে ভাবে বয়কট করেছিল তা থেকে তাদের সরে আসার স্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে ডেভানের বক্তব্যে। সম্প্রতি মোদী যখন দিল্লিতে গিয়েছিলেন, সেই সময় ইউরোপীয় ইউনিয়ন ভুক্ত সব রাষ্ট্রদূত গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন। ব্রিটেন এখন আমেরিকাকে বোঝাচ্ছে, যাতে মোদীকে বয়কটের পথ থেকে তারাও সরে আসে।

গডকড়ীকে সমন
বিজেপি সভাপতি নিতিন গডকড়ীকে সশরীরে হাজির হওয়ার সমন জারি করল আয়কর দফতর। ২১ জানুয়ারি নাগপুরে আয়কর দফতরের অফিসারদের সামনে হাজির হতে হবে তাঁকে। গডকড়ী ও তাঁর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত কিছু সংস্থার বিরুদ্ধে কর ফাঁকির অভিযোগের তদন্ত করছে আয়কর দফতর। গডকড়ী শিবিরের অবশ্য দাবি, বিজেপি সভাপতি এখনও সমন হাতে পাননি।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.