অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে এক দম্পতির। শনিবার বিকেলে পর্ণশ্রী থানা এলাকায় সত্যজিত্ রায় সরণির একটি বাড়ি থেকে ওই দম্পতির দেহ উদ্ধার হয়।
পুলিশ জানায়, মৃতদের নাম সৌরভ সিংহ (২০) এবং পূজা সিংহ (১৯)। অ্যাসবেস্টসের ছাদওয়ালা একতলা একটি বাড়ির শোয়ার ঘরে সৌরভের দেহ সিলিং ফ্যান থেকে কাপড় জড়ানো অবস্থায় ঝুলছিল। গলায় ওড়নার ফাঁস লাগানো অবস্থায় পূজার দেহ উপুড় হয়ে পড়ে ছিল বিছানার উপরে। ওই ঘর থেকে হাতে লেখা একটি নোটও উদ্ধার করেছে পুলিশ। পুলিশের দাবি, তাতে লেখা রয়েছে, ‘আর্থিক অনটন চলছিল। সংসার চালাতে পারছিলাম না।’ পুলিশের অনুমান, প্রথমে পূজা গলায় ওড়নার ফাঁস দিয়ে আত্মঘাতী হন। তার পরে তাঁকে সিলিং ফ্যান থেকে নামিয়ে আত্মঘাতী হন তাঁর স্বামী। কারণ, সিলিং ফ্যানে ওড়নার একটি টুকরো লাগানো ছিল। পুলিশের ধারণা, ওড়না কেটে স্ত্রীকে নামান সৌরভ।
তবে, স্ত্রীকে শ্বাসরোধ করে খুন করে সৌরভ আত্মঘাতী হয়েছেন কি না, সেই ব্যাপারে নিশ্চিত নয় পুলিশ। দু’জনের মৃত্যুর সঠিক কারণ জানতে ময়না-তদন্ত করা হবে বলে পর্ণশ্রী থানার পুলিশ জানায়।
সৌরভের প্রতিবেশীরা জানান, ওই দম্পতি বছর দেড়েক আগে নিজেদের পছন্দে বিয়ে করেন। পূজার বাপের বাড়ি স্থানীয় রবীন্দ্রনগরে। তিনি সরশুনা কলেজে বিএ প্রথম বর্ষের ছাত্রী ছিলেন। সৌরভের বাবা বছর তিনেক আগে মারা যান। তাঁর মা তৃপ্তিদেবী দূরের একটি বাড়িতে সারাক্ষণের পরিচারিকার কাজ করেন। শনি ও রবিবার তিনি সৌরভদের কাছে থাকতেন। সোমবার সকালে ফের কাজে চলে যেতেন।
পুলিশ প্রতিবেশীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পেরেছে, একটি মোবাইল ফোন সংস্থার ডিলারের কাছে সেল্সম্যানের কাজ করতেন সৌরভ। অবসর সময়ে তিনি একটি ডিলারের অধীনে চকোলেট ফেরির কাজও করতেন। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক ভাল ছিল বলেই প্রতিবেশীরা পুলিশকে জানান।
সৌরভের পাড়ার ছেলেরা এ দিন সন্ধ্যায় জানান, শুক্রবার বিকেলেও স্বামী-স্ত্রীকে মোটরসাইকেলে চেপে বাজারে যেতে দেখা গিয়েছে। পরিচিত কোনও যুবকের বিয়ের তত্ত্ব কিনতে বেরিয়েছিলেন তাঁরা। এ দিন বিকেল সওয়া তিনটে নাগাদ সৌরভ কাজ থেকে বাড়ি ফেরেন। বাড়ির পাশের একটি দোকান থেকে সিগারেট কেনেন। তার পরে আর তাঁকে বাড়ির বাইরে বেরোতে দেখা যায়নি। বিকেল পৌনে চারটে নাগাদ তাঁর বাড়ির সামনে কয়েক জন যুবক তাস খেলার তোড়জোড় করছিলেন। খেলার লোক কম পড়ায় তাঁদের মধ্যে এক জন সৌরভকে বাড়ি থেকে তাস খেলার জন্য ডাকতে যান। অনেক ডাকাডাকির পরেও সাড়া না পেয়ে ওই যুবক সৌরভদের বাড়ির পিছনের দিকের জানলায় ধাক্কা দেন। জানলায় ছিটকিনি লাগানো সত্ত্বেও ধাক্কার জোরে সেটি খুলে যায়। জানলা দিয়েই ওই যুবক দেহ দু’টিকে দেখতে পান। |