নিউ টাউনের পরিবহণ ব্যবস্থা রয়ে গিয়েছে সেই তিমিরেই। উন্নতির পরিবর্তে দিনদিন আরও অবনতি হচ্ছে। দিনের ব্যস্ত সময়েও বাস পাওয়া যায় না। দেখা মেলে না ট্যাক্সির। অটোর সংখ্যাও হাতে গোনা। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, দেড় বছর আগে তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার সময়ে নিউ টাউনে যানবাহনের সমস্যা যা ছিল, এখন তা আরও তীব্র হয়েছে। এই দেড় বছরে নিউ টাউনে আবাসন বেড়েছে, বেড়েছে তথ্যপ্রযুক্তি-কর্মীর সংখ্যা, বেড়েছে শপিং মল। অথচ, গণ-পরিবহণের কোনও ব্যবস্থা সে ভাবে গড়ে ওঠেনি। গণপরিবহণের এই সমস্যা মেটাতে উদ্যোগী হয়েছে হিডকো। তারা জানিয়েছে, নিউ টাউনে ছোট ছোট রুটে বাস চালানো হবে। যাত্রীদের স্বাচ্ছন্দ্য ও নিরাপত্তার উন্নতিতে ওই সব বাসে ‘জিপিএস’ (গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম) এবং ‘ভেহিক্ল ট্র্যাকিং সিস্টেম’ থাকবে।
এমনিতে সারা দিনই নিউ টাউনে বাসের সংখ্যা থাকে যথেষ্ট কম। সন্ধ্যা নামলে তা আরও কমতে থাকে। তথ্যপ্রযুক্তি অফিসগুলির ছুটির সময়ে সেখানে ভিড় হয়ে যায় শাট্ল গাড়ির। কাজের সূত্রে ওই সব অফিসে শহর ও শহরতলির বহু মানুষকে আসতে হয়। অধিকাংশ অফিসযাত্রীই নির্ভর করেন শাট্ল গাড়ির উপরে। রাতের দিকে শাট্ল গাড়িগুলিও নিরাপদ নয় বলে অভিযোগ অফিসযাত্রীদের। বিশেষ করে মহিলা অফিসকর্মীরা বাধ্য হয়ে ঝুঁকি নিয়েই যাতাযাত করেন। এমনই এক জন অজন্তা মজুমদার। বললেন, “বেশির ভাগ সময়েই শাট্ল গাড়িতে অচেনা লোকজনের সঙ্গে বাড়ি ফিরতে হয়। অন্ধকার রাস্তায় অচেনা কয়েক জনের সঙ্গে শাট্ল গাড়িতে যেতে অস্বস্তি হয়, ভয় করে। কিন্তু কিছু করার নেই।”
নিউ টাউন থেকে শাট্ল গাড়িতে বাড়ি ফেরার সময়ে এক অফিসযাত্রীকে অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। ঘটেছে শ্লীলতাহানিও। গত দেড় বছরে নিউ টাউনে দূরপাল্লার নতুন কিছু বাস চালু হলেও সেই সব বাস সংখ্যায় কম হওয়ায় যাত্রীদের বিশেষ কোনও লাভ হচ্ছে না। স্থানীয় বাসিন্দা ও অফিসযাত্রীদের অভিযোগ, নিউ টাউন থেকে কয়েক মিনিটের পথ, যেমন ভিআইপি রোড, ইএম বাইপাস বা সল্টলেক যাওয়ার গাড়িও পাওয়া যায় না। তাদের দাবি, নিউ টাউন থেকে ভিআইপি রোড বা বাইপাস পর্যন্ত যাওয়ার বাস ঘনঘন ছাড়লেই এই সমস্যার অনেকটা সুরাহা হবে। কারণ, ভিআইপি রোড বা বাইপাস পর্যন্ত যেতে পারলে সেখান থেকে অন্য বাস ধরে গন্তব্য যেতে কোনও অসুবিধা হবে না।
হিডকো-র চেয়ারম্যান দেবাশিস সেন জানিয়েছেন, নিউ টাউনের পরিবহণ সমস্যা মেটাতে তাঁরা উদ্যোগী হয়েছেন। তিনি বলেন, “হিডকো ২০টি বাস ছোট ছোট রুটে চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নিউ টাউনের যে সব জায়গায় অপেক্ষাকৃত বেশি মানুষ থাকেন, যেখানে অফিসের সংখ্যা বেশি, সেখান থেকে বাসগুলি ছাড়বে। যাবে সল্টলেক, ইএম বাইপাস বা ভিআইপি রোড পর্যন্ত। ছোট ছোট রুটে চললে বাসগুলি ঘনঘন যাতাযাত করতে পারবে। আমরা রাজ্যের পরিবহণ দফতরের কাছে এই সব রুটের পারমিটের জন্য আবেদন করছি।”
এই সব বাসে ‘জিপিএস’ এবং ‘ভেহিক্ল ট্র্যাকিং’ ব্যবস্থা রাখার পরিকল্পনাও রয়েছে হিডকো-র। এর ফলে বাসটি যেখান থেকে ছাড়বে, সেই স্ট্যান্ড থেকেই যাত্রীরা দেখতে পাবেন, একটি বাস কোথায় আছে ও কত ক্ষণ পরে সেটি আসতে পারে। হিডকো-র দাবি, বাসে ‘ভেহিক্ল ট্র্যাকিং সিস্টেম’ থাকলে মহিলা যাত্রীদের নিরাপত্তার বিষয়টিও কিছুটা সুনিশ্চিত হবে। |